পোড়া ক্যাশবাক্স বুকে নিয়ে ঘুরছেন সাদ্দাম, ঝরছে চোখের পানি

1680691622.sadd02.jpg

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট …….
বছর দশেক আগে জীবিকার সন্ধানে লক্ষ্মীপুর থেকে রাজধানীতে এসেছিলেন মো. সাদ্দাম হোসেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর।

এরপর দীর্ঘ ১০ বছর গুলিস্তানের বঙ্গবাজার মার্কেটে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছেন অন্যের দোকানে।
নিজের অর্থনৈতিক অবস্থা ফেরাতে চলতি বছরের শুরুতে ধার-দেনা করে শিশুদের জামাকাপড়ের একটি দোকান দিয়েছিলেন সাদ্দাম। বঙ্গবাজার মার্কেটের গুলিস্তান ইউনিটে করা ওই দোকানের নাম দেন মামুনিয়া গার্মেন্টস। বাকিতে তুলেছিলেন শিশুদের পোশাক। স্বপ্ন ছিল ধীরে ধীরে বড় করবেন ব্যবসা, হাল ধরবেন পরিবারের। কিন্তু তিন মাস যেতে না যেতেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সেই দোকান।

মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) বঙ্গবাজারে লাগা ভয়াবহ আগুনে অনেক ব্যবসায়ীর মতো পুড়ে যায় সাদ্দামের ছোট মামুনিয়া গার্মেন্টস। সারাদিন চোখের সামনে দাউ দাউ করে পুড়তে দেখেছেন নিজের স্বপ্ন। বুধবার (৫ এপ্রিল) যখন ছাইয়ে পরিণত হয় পুরো মার্কেট, তখন পোড়াস্তূপ থেকে নিজের দোকানের ক্যাশবাক্স খুঁজে বের করেন তিনি। তারপর থেকে সেটি বুকে আকড়ে ধরে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় তাকে।

সাদ্দাম কখনো পোড়া ক্যাশ বাক্স বুকে জড়িয়ে বঙ্গবাজার মার্কেটের পোড়াস্তূপের ওপর বসে থাকছেন, তো কখনো এদিক সেদিক হেঁটে বেড়াচ্ছেন। মাঝে মাঝে চোখ থেকে ফোঁটা ফোঁটায় পানি গড়িয়ে পড়ছে সেই ক্যাশবাক্সে।

জানতে চাইলে সাদ্দাম বলেন, গতকাল ভোরে মসজিদের মাইকে দোয়া করার ঘোষণা শুনে বাইরে বের হয়ে এসে দেখি আমাদের মার্কেটের গলির মধ্যে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। আগুন এত বেশি ছিল যে, ভেতরে ঢুকার সাহস পাইনি। সারাদিন চোখের সামনে নিজের দোকান পুড়লো। কিছুই বের করতে পারিনি।

সাদ্দামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগুনে তার দোকানের চার লাখ টাকার মালমাল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা পুড়ে গেছে। দোকান মালিককে এক বছরের জন্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন ভাড়া হিসেবে। সেই দোকানও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, দোকান নেওয়ার সময় এক বছরের ভাড়া হিসেবে মালিককে এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিই। এই টাকা আর পাবো না। গতকাল যখন আগুনে সবকিছু পুড়ছিল, তখনও দোকানের ভেতরে চার লাখ টাকার পোশাক ছিল। গত শনিবার ও রোববার পোশাক বিক্রি করার ৫০ হাজার টাকা ছিল ক্যাশে। সঙ্গে ছিল ক্যাশ মেমো ও মাসাহা। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, দোকান নেওয়ার সময় আড়াই লাখ টাকা ধারদেনা করেছিলাম। মালামাল এনেছি বাকিতে। এখন ধার-দেনা শোধ করব কীভাবে, বাকির টাকাই বা দেব কীভাবে, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।

সাদ্দাম হোসেনের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ৭ নম্বর দরবেশপুর ইউনিয়নে। পড়াশোনা করেছেন পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। তার বাবা মো. মনির হোসেন অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করেন। মা পেয়ারা বেগম কয়েক বছর ধরেই নানা রোগে আক্রান্ত।

সাদ্দাম হোসেন বলেন, অভাবের সংসার, তাই ২০১৩ সালে ঢাকায় আসি কাজের খোঁজে। কোনো কাজ না পেয়ে বঙ্গবাজারে একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করি। অনেক বছর কাজ করেও আর্থিক অবস্থা তেমন ফেরেনি। তাই মহাজনকে বলে এই বছর নিজেই দোকান দিয়েছিলাম। এখন কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবো কিছুই বুঝছি না।

ঘুরে দাঁড়াতে সরকারের কাছে সাহায্য চেয়েছেন এই স্বপ্নবাজ তরুণ।

মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। সকাল ৮টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ৪১টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। এরপর ৪৩টি ইউনিট যাওয়ার খবর জানায় ফায়ার সার্ভিস।

পরে ৪৮টি ইউনিটের প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টায় দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর প্রায় ২৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো আগুন পুরোপুরি নেভার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি ফায়ার সার্ভিস।

আগুনে বঙ্গবাজার এলাকার মোট সাতটি মার্কেট পুড়ে গেছে। এর মধ্যে চারটি পুরোপুরি ও তিনটি আংশিক। মার্কেটগুলো হলো- বঙ্গ ইসলামীয়া মার্কেট, বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্স, বঙ্গবাজার মার্কেট, এনেক্সকো টাওয়ার, মহানগর শপিং কমপ্লেক্স, আদর্শ মার্কেট, গুলিস্তান মার্কেট।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top