সংসার টানতে হিমশিম, কেনাকাটায় হিসাবি ক্রেতা

karwan-bazar-1-20220911192504.webp

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক……

কেনাকাটায় হিসাবি হতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা/রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে তোলা ছবি
জ্বালানি তেলের ‘আগুনে’ পুড়ছেন সাধারণ মানুষ। হু হু করে বাড়ছে প্রতিটি পণ্যের দাম। চাল, ডাল, তেল, মাছ, মাংস, পেঁয়াজ, মরিচসহ সব ধরনের সবজি কিনতে ক্রেতার নাভিশ্বাস। নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও সেভাবে বাড়েনি আয়। ফলে নির্ধারিত আয়ের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ, হিসাবি হচ্ছেন কেনাকাটায়।

রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আগারগাঁও ৬০ ফিট পাকা মসজিদ এলাকার বাসিন্দা শরিফুল তিনটি গাজর কিনেছেন ৪৫ টাকা দিয়ে। বর্তমানে প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা কেজি।

তিনটি গাজর কেনা প্রসঙ্গে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আগে এক কেজি করে কিনতাম। এখন বেতন দিয়ে সংসার চলে না। ছোট বাচ্চার খিচুড়ি রান্নার জন্য গাজর লাগে। তাই অল্প টাকা খরচ করে সামর্থ্যমতো কিনলাম।

কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, শুধু গাজর নয়, টমেটো, শিমসহ নানা সবজি কেনাকাটায় অনেক সাশ্রয়ী হয়েছেন ক্রেতারা। মূলত নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি হওয়ার কারণেই ক্রেতারা পরিমাণমতো সবজি কিনছেন।

রামপুরার শামীম হোসেন। পেশায় ব্যবসায়ী। ইলিশ কেনার জন্য কারওয়ান বাজারে এসেছেন। অন্যান্য সময় বাজার থেকে বড় ইলিশ কিনলেও এদিন ছোট সাইজের তিন কেজি ইলিশ কিনেছেন তিনি। ছেলেমেয়ের সংসারে দেওয়ার জন্যই এসব ইলিশ কিনেছেন বলে জানান। তিন কেজিতে ছয়টি ইলিশ হয়েছে, দাম পড়েছে দেড় হাজার টাকা।

বড় ইলিশ বাদ দিয়ে ছোট ইলিশ কেনা প্রসঙ্গে শামীম হোসেন বলেন, আগে বাজারের বড় ইলিশ কিনতাম। টাকা ঠিকই বড় লেগেছে, কিন্তু দামের জন্যই ছোট ইলিশ কিনতে হলো। আল্লাহ যদি সুস্থ রাখে আর ইলিশের দাম যদি কমে, তখন আবারও বড় ইলিশ কিনবো।

তিনি আরও বলেন, আগে পাঁচ হাজার টাকা কামাই করেছি, ভালো খেয়েছি। এখন ৫০ হাজার টাকা কামাই করি, আনন্দ নেই, সংসার চলে না।

কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান। ২৫-২৬ বছর ধরে এই বাজারে মাছ বিক্রি করছেন। নিত্যপণ্যে দাম বাড়তির কারণে মানুষ কেনাকাটায় অনেক হিসাবি হয়েছেন বলে দাবি তার। বলেন, মানুষ খুব হিসাব করে মাছ কেনেন। মানুষের পকেটে টাকা থাকা লাগবে না? আগে যে ক্রেতা দুটি বড় ইলিশ কিনতেন, সেই ক্রেতা এখন একটি কেনেন। বাড়তি দামের কারণে অনেকে বড় মাছ নিতে পারছেন না, ছোট মাছ কিনে বাড়ি ফেরেন।

এদিকে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এক লিটার ও দুই লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের চাহিদা বেড়েছে। আগে যেসব ক্রেতা একসঙ্গে পাঁচ লিটারের বোতল কিনতেন, তারা এখন তিন লিটার দিয়ে সংসার পার করছেন।

কারওয়ান বাজারের ‘লক্ষ্মীপুর ভান্ডার’র স্বত্বাধিকারী কামরুল হাসান বলেন, আমার কাছে আগে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের চাহিদা বেশি ছিল। এখন ক্রেতা পাঁচ লিটারের জায়গায় তিন লিটার কিনছেন। মূলত আয় ও ব্যয়ের সমন্বয়ের কারণেই মানুষ তেল কম কিনছেন। শুধু তেল নয়, অন্যান্য নিত্যপণ্যও কম করে কিনছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, খেজুর-কাঠবাদামসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রিও কমেছে। কমেছে ফল বিক্রিও। কারওয়ান বাজারের বিক্রমপুর ফল বিতানে আগে প্রতিদিন ৩০-৩৫ হাজার টাকার ফল বিক্রি হতো। এখন তা কমে ২৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে বলে জানা গেছে।

বিক্রমপুর ফল বিতানের মালিক মোহাম্মদ হোসেইন জাগো নিউজকে বলেন, আগে কাঠবাদামের কেজি ছিল ৬০০ টাকা, এখন তা বেড়ে ৭৩০ টাকা হয়েছে। ৩৬০ টাকা থেকে বেড়ে কিশমিশের দাম এখন ৫০০ টাকা কেজি। ২৪০ টাকা থেকে বেড়ে দাবাস খেজুর ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবকিছুর দাম বাড়তি।

তিনি আরও বলেন, দেখা যায় আগে যে ক্রেতা মাসে এক কেজি কাঠবাদাম কিনতেন, তিনি এখন আধাকেজি কেনেন। অনেকে আবার এটা কেনা বাদ দিয়েছেন। কারণ আমাদের পণ্যটি এত জরুরি নয়। মূলত পণ্যের দাম বাড়তির কারণেই মানুষ কম কম কিনছেন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top