চসিকে অর্থ আত্মসাতে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা বহাল তবিয়তে

image-842449-1724530850.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) রাজস্ব আত্মসাতের অভিযোগে এক সময় বরখাস্ত ও চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন ১৫ অনুমতি পরিদর্শক। মামলা করে দীর্ঘ সাত বছর পর তারা চাকরি ফেরত পান। কিন্তু চাকরি ফেরত পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল এদের অর্থ বা রাজস্ব সংশ্লিষ্টতা রয়েছে- এমন কোনো বিভাগ বা পদে পদায়ন করা যাবে না।

অথচ চাকরি ফিরে পাওয়ার পর কিছুদিন না যেতেই উপরস্থ কর্মকর্তা ও পরবর্তী মেয়রকে ম্যানেজ করে তারা আবার সুকৌশলে রাজস্ব সংশ্লিষ্ট বিভাগে পদায়ন বাগিয়ে নেন। আর এসব শাখায় নতুন করে গড়ে তোলেন সিন্ডিকেট। এই ১৫ কর্মকর্তার মধ্যে অধিকাংশ কর্মকর্তা অবসরে চলে যান। কেউ কেউ মারা গেছেন। যে ক’জন এখনও আছেন তারাই ‘সিন্ডিকেট বাণিজ্য’ করছেন বলে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারিরা অভিযোগ করছেন।

অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন, এএইচ এম শাহীন চৌধুরী, উপ-কর কর্মকর্তা (কর), সার্কেল-৩, নাসির উদ্দিন চৌধুরী, কর কর্মকর্তা (কর) সার্কেল-৫, দিদারুল আলম, উপ-কর কর্মকর্তা (লাইসেন্স), সার্কেল-৭, জয়নুল আবেদীন চৌধুরী জুনু, অনুমতিপত্র পরিদর্শক, সার্কেল-২, একেএম সালাউদ্দীন, কর কর্মকর্তা (লাইসেন্স), সার্কেল-৫ এ কর্মরত আছেন। নাজিম উদ্দীন নামে স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মচারি সার্কেল-৮ এ উপ-কর কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করছেন। তার বিরুদ্ধেও রাজস্ব আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে উল্লেখিত কর্মকর্তারা ১ হাজার টাকা বেতনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে কর আদায়কারী/করণিক হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পান। পরবর্তীতে তারা পদোন্নতি লাভ করেন।

অভিযোগ রয়েছে, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়ে এসব কর্মকর্তা গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া বিপুল অংকের রাজস্ব করপোরেশনে জমা না দিয়ে নিজেরাই আত্মসাৎ করেন। তদন্ত কমিটি গঠন ও প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১৫ কর্মকর্তাকে একযোগে বরখাস্ত করা হয়। পরে পাঠানো হয় বাধ্যতামূলক অবসরে।

সূত্র জানায়, বরখাস্ত হওয়া ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো কর্মকর্তারা উচ্চ আদালতে মামলা করেন। দীর্ঘ সাত বছর পর ২০০৮ সালে আদালত তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন। তবে তাদের রাজস্ব আহরণ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন কোনো পদে পদায়ন বা নিয়োগ না দেওয়ার নির্দেশনা দেন আদালত।

অভিযোগে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে তাদের রাজস্ব সংশ্লিষ্ট বিভাগে পদায়ন করা না হলেও পরবর্তীতে মেয়র ও কর্মকর্তাদের ম্যানেজড করে সবাই অর্থ সংশ্লিষ্ট বিভাগে পদ বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন। এর মধ্যে একেএম সালাউদ্দীনকে পরিচ্ছন্ন বিভাগে পদায়ন করা হলেও পরবর্তীতে তিনি রাজস্ব বিভাগে বদলি বাগিয়ে নেন। আর তখন থেকেই তারা করপোরেশনে আরও দ্বিগুণ উৎসাহে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ‘সিন্ডিকেট বাণিজ্যে’ মেতে উঠেন। ফুলে ফেঁপে কলাগাছ বনে যান।

গ্রাহক হয়রানি থেকে শুরু করে অধস্থন ও অনুগত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অর্থের বিনিময়ে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা প্রদান, বদলি-বাণিজ্য, ভিন্নমত ও সৎ কর্মচারিদের হয়রানি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। তাদের এহেন কর্মকাণ্ডে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারিরা অতীষ্ঠ হয়ে উঠলেও দেখার যেন কেউ ছিল না। হয়রানির ভয়ে মুখ ফুটে কেউ কিছু বলতেও পারেননি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এসব কর্মকর্তার বিষয়ে তদন্তপূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা এই দাবি তোলেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চসিকের উপ-সচিব মো. আবুল হাশেম  বলেন, বিষয়গুলো অনেক আগের। অনেক কর্মকর্তা অবসরে চলে গেছেন। আদালতের নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনো কর্মকর্তা চাকরি করছেন কিনা, বা তাদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ রয়েছে- এসব বিষয়ে নথি দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে।

Share this post

scroll to top