গুলির ক্ষত নিয়ে ছটফট করছেন অনেক তরুণ

image-836232-1723282022.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অসংখ্য রোগী যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এদের মধ্যে কারও হাতে, কারও পায়ে আবার কারও পেটে গুলি লেগেছে। হাসপাতালের শয্যা না পেয়ে অনেকেরই ঠাঁই হয়েছে ওয়ার্ডের মেঝেতে। এসব রোগীর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের স্বজনরা। কারণ, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন অতি দ্রুত তাদের সারিয়ে তোলা সম্ভব না। শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, আন্দোলনকে ঘিরে আহত এবং গুলিবিদ্ধ রোগীতে ঠাসা হাসপাতালের ১০১, ১০২ ও ১০৩ নম্বর ওয়ার্ড।

১০১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৫৬ জন রোগী। তাদের মধ্যে একজন মঞ্জুরুল আলম জিসান (১৭)। নরসিংদীর শিবপুর আসাদ সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র সে। ছোটবেলায় বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হওয়ায় সে রায়পুরায় নানার বাড়িতেই বেড়ে উঠছিল। জিসান ১০ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কাজলায় তার মামা ইলিয়াসের বাসায় বেড়াতে আসে। ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশ ত্যাগের পর যাত্রাবাড়ীতে বিজয় মিছিল হয়। সেই মিছিলে যোগ দেয় জিসান। বিকালের দিকে যাত্রাবাড়ী থানা ঘেরাও এবং ভাঙচুরে অংশ নিতে গিয়ে ডান পায়ে হাঁটুর নিচে গুলিবিদ্ধ হয় জিসান। একটি বুলেট তার পায়ের এপাশ দিয়ে ঢুকে ওপাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। গুরুতর অবস্থায় তাকে ওই দিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সে ঢামেক হাসপাতালের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪ নম্বর বেডে ভর্তি। হাসপাতালে তার দেখাশোনা করছেন ফুফাতো বোন শিখা বেগম। তিনি বলেন, ডাক্তাররা এখনো বলতে পারছেন না জিসান পুরোপুরি সেরে উঠতে পারবে কি না? নাকি তার পা কেটে ফেলতে হবে। তিনি বলেন, তার বাবা-মা থেকেও নেই। যদি তার পা ঠিক না হয়, তবে সে কীভাবে চলবে বাকি জীবন, কে নেবে তার দেখাশোনার দায়িত্ব।

একই ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানার পুরান বাউশিয়া গ্রামের সালাহ উদ্দিনের ছেলে আল আমিন (১৮)। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে ছোট আলামিন গজারিয়া সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র। শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন আলআমিন। গত ৫ আগস্ট বিজয় মিছিল করার সময় গজারিয়া এলাকায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। তার পেটে গুলি লাগে। এই গুলি এখনো বের করতে পারেননি চিকিৎসকরা। আলআমিন সেরে উঠবে কি না এ নিয়ে সন্দিহান তার বাবা সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ছেলের পেছনে অনেক টাকাপয়সা খরচ হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসা লাগবে তার।

ঢামেকের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছে সাফায়েত ইসলাম (১৭)। তার পেটে গুলি লেগেছে, বুকের হাড় ভেঙে গেছে। এখনো পেটের গুলি বের করা সম্ভব হয়নি। সাফায়াতের মা সুমনা বেগম বলেন, আমার ছেলের ভবিষ্যৎ কী হবে আমি জানি না। আমার ছেলে কি আগের মতো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, একমাত্র আল্লাহ জানেন। তাদের মতো অনেকে গুলিবিদ্ধ এবং আহত রোগী ঢামেক হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। এসব রোগীর একটা বড় অংশ গুলিবিদ্ধ।

ঢামেক হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত এই হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ এবং আহত তিন শতাধিক মানুষ ভর্তি রয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢামেক জরুরি বিভাগের একজন চিকিৎসক  বলেন, যেসব গুলিবিদ্ধ ও আহত রোগী ভর্তি রয়েছেন, তাদের শঙ্কামুক্ত বলা যায় না।

তবে তাদের সারিয়ে তুলতে হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই।

Share this post

scroll to top