সুন্দরবনে গাছে গাছে ফুল, আশায় বুক বাঁধছেন মৌয়ালেরা

-1.jpg

নিজস্ব প্রতিবেদক:  সুন্দরবনের গাছে এখন ফুল ফোটার মৌসুম। এরই মধ্যে খলিশা, গরান, হরকোচা, পশুরসহ বহু গাছে শোভা পাচ্ছে ফুল। আর যেন কর্মব্যস্ততা বেড়ে গেছে মৌমাছির। ফুল থেকে চাকে জমা করছে তারা। আগামী ১ এপ্রিল থেকে মৌয়ালদের সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি দেবে বন বিভাগ। এ মৌসুমে বেশি মধু পাওয়ার আশা করছেন মৌয়ালেরা।

সুন্দরবনে মধু সংগ্রহে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন উপকূলীয় কয়রা উপজেলার মঠবাড়ি গ্রামের মৌয়াল আবু মুছা। তিনি বলেন, ‘২১ বছর ধইরে বাদায় (সুন্দরবনে) মধু কাটি। এখন বনের গাছে ফুল ফুটি গেছে। গেল বছর মধুর সময় বৃষ্টি হইনি, তাই মধুও বেশি পাইনি। তয় এবার এই মাসেই কয়েক দিন বৃষ্টি হইছে। বৃষ্টি হলি গাছের ফুলে মধু বেশি আসে। বাদায় মধুর পরিমাণ আগের চাইতে এবার বাড়বে মনে হচ্ছে। আমরাও বেশি মধু পাবানে।’

গতকাল রোববার সুন্দরবনের বজবজা বন টহল ফাঁড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফুল ফুটে আছে সারি সারি গরানগাছে। একইভাবে ফুল ফোটায় পশুরগাছও যেন ভিন্নরূপে দেখা দিয়েছে। বৈচিত্র্যময় রূপের অধিকারী খলিশার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছে মৌমাছি। এক ফুল থেকে আরেক ফুলে ওড়াউড়ি করছে তারা। আর তার সঙ্গে গাছে গাছে নতুন পাতা ও বাহারি শ্বাসমূলের সমাহারে নতুন রূপে ফিরেছে সুন্দরবন।

বজবজা বন টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানালেন, সুন্দরবনে যে কয়টি প্রজাতির ফুলের মধু পাওয়া যায়, তার মধ্যে খলিশা ও গরান ফুলের মধু উন্নত মানের। এর মধ্যে সবার আগে ফুল আসে খলিশাগাছে। আর গরানের ফুল আসা শুরু হয় মার্চের মাঝামাঝি দিকে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে টানা দুই মাস বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে চলবে মৌয়ালদের মধু আহরণ। অবশ্য এ জন্য তাঁদের রাজস্বও দিতে হয়।

সুন্দরবনের বজবজা বন টহল ফাঁড়ি থেকে কিছুটা দূরে শাকবাড়িয়া নদীতে জাল পেতে মাছ ধরছিলেন বনজীবী জেলে আফজাল হোসেন। এ বছর মধুর অবস্থা কেমন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘এখনো পাস না দেওয়ায় মধু সংগ্রহ করতে যেতে পারিনি। তবে অনেকেই মাছ-কাঁকড়ার পাস করে বনে গিয়ে চোরাই পথে মধু নিয়ে আসছেন। তাঁদের কাছে শুনেছি, এবার চাকের পরিমাণ কম, তবে বৃষ্টি হওয়ায় চাকে ভালোই মধু হয়েছে।’

কয়রার সুন্দরবনঘেঁষা পাথরখালী এলাকার মৌয়াল কামরুল ইসলাম বলেন, ‘সুন্দরবনে সবার প্রথমে খলিশা ফুলের মধু হয়। দেখতে সাদা, গাঢ় ও অনেক বেশি মিষ্টি এ মধুই সবচেয়ে ভালো। এর চাহিদাও বেশি। এরপর গরান, কেওড়া ও বাইনগাছের ফুল ফোটে। তারপর পর্যায়ক্রমে সব গাছে ফুল আসে। কয়েক দিন আগে মাছ ধরতে গিয়ে সামনে একটা চাক পেয়ে কেটে তিন কেজির মতো মধু পেয়েছি। এবার মধুর ভাব বেশ ভালো।’

মৌয়ালেরা জানান, আগে বন বিভাগ এপ্রিল, মে ও জুন—তিন মাস মধু আহরণের অনুমতি দিত। কিন্তু গত দুই বছর শুধু এপ্রিল ও মে মাসে মধু সংগ্রহ করতে দিচ্ছে। এ ছাড়া সুন্দরবনের ৫২ শতাংশ এলাকায় মধু আহরণের অনুমতি দেয় না বন বিভাগ। এ কারণে আগের চেয়ে মধু আহরণের পরিমাণ কমে গেছে।

সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টির সঙ্গে মধুর একটা সম্পর্ক আছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে ফুল ঝরে যায় ও ফুলে মধুর পরিমাণও কমে আসে। এ বছর এরই মধ্যে কয়েক দফা বৃষ্টি হয়েছে। তাই এবার বেশ ভালো পরিমাণ মধু সুন্দরবন থেকে আহরিত হবে বলে আশা করছি।’

হাছানুর রহমান জানান, ১৮৮৬ সালে সুন্দরবন থেকে মধু আহরণের জন্য অনুমতি (পাস) দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়। আগামী ১ এপ্রিল সুন্দরবন থেকে মধু আহরণ শুরু হয়ে চলবে ৩১ মে পর্যন্ত। এই মৌসুমে সুন্দরবনের খুলনা ও সাতক্ষীরার আওতাধীন এলাকা থেকে মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ কুইন্টাল আর মোম ৪৫০ কুইন্টাল।

Share this post

scroll to top