প্রতীক পেয়েই প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা : খুলনার ছয়টি আসনে ভোটার উপস্থিতির দিকেই নজর প্রার্থীদের

Untitled-12-copy-11.jpg

খুলনার দর্পণ ডেস্ক : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই প্রচারণা শুরু করেছেন খুলনার ছয়টি আসনের ৩৫ জন প্রার্থী। মিছিল, গণসংযোগ, পোস্টার, লিফলেটে পাড়া-মহল্লায় উৎসবমুখর পরিবেশ। কর্মী-সমর্থকদের সাথে নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন প্রার্থীরা।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে খুলনার ছয়টি সংসদীয় আসনে মোট প্রার্থী রয়েছেন ৩৫ জন। নির্বাচনে অংশ নেয়া ১০টি দলের ২৭ জন প্রার্থী ও স্বতন্ত্র ১০ জন প্রার্থী ভিন্ন ভিন্ন প্রতীক নিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন।
এবারের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না থাকায় ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির দিকেই নজর সকল প্রার্থীরই।
খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল গতকাল সকালে গণসংযোগ ও সন্ধ্যায় জনসভায় বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, আগামী প্রজন্মকে স্মার্ট বাংলাদেশ উপহার দিতে নৌকায় ভোট দিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দেশ ও জাতির উন্নয়নে জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছেন। শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিনোদন, বিদ্যুৎ, শিল্প, কৃষিসহ বহুমুখী কাজ করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। যার ছোঁয়া খুলনায়ও এসে পড়েছে। শেখ হাসিনার এই উন্নয়ন ছোঁয়াকে আরও বিস্তৃতি ঘটাতে নৌকাকে বিজয়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ৫ম বার প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। সেজন্যে সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে হবে।
খুলনা-১ আসনে ভোটের দিন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার উপস্থিতির কথা বলছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ননী গোপাল ম-ল। তিনি বলেন, পছন্দের প্রার্থী থাকায় আশা করছি ৮৫-৯০ শতাংশ ভোটার ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হবে।
একইভাবে প্রচারণায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার আহবান জানানোর কথা বলছেন খুলনা-৩ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী এসএম কামাল হোসেন। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন চ্যালেঞ্জের। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর অনানুষ্ঠানিকভাবে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বৈঠক করেছি। তাদেরকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনার তাগিদ দিয়েছি। প্রচারণাকে ঘিরে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মধ্যেই রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। আওয়ামী লীগের সাথে ভাগাভাগির ইলেকশন ভোটাররা কিভাবে নেবে এমন দুশ্চিন্তাও রয়েছে ভোটারদের।
খুলনা-৩ আসনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রচারণা শুরু করলে মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে পারবো। ভোটাররা আমাদের কিভাবে নেবে সেটাই বড় প্রশ্ন। ভোটাররা আমাদের ওপর আস্থা হারালে ভোটকেন্দ্রে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের সমর্থকরাই থাকবে। আর শংকামুক্ত ভোটের পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানালেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাতেমা জামান সাথী। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। এর একদিন পর ৭ জানুয়ারি হবে ভোট।
এদিকে খুলনার ছয়টি আসনের ৩৪ জন প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ সম্পন্ন হয়েছে। খুলনা-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দারাকে এখনও প্রতীক দেয়া হয়নি। সোমবার সকালে সাড়ে ১০টা থেকে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা খন্দকার ইয়াসির আরেফীন। তার দপ্তরে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে খুলনা-১ আসনের প্রার্থীদের নিয়ে প্রতীক বারাদ্দে কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর প্রতি আধা ঘণ্টা অন্তর ছয়টি আসনের প্রার্থীদের মধ্যে তিনি প্রতীক বরাদ্দ করেন। প্রতীক নিয়েই প্রচারণা শুরু করেছেন অনেক প্রার্থী।
খুলনা-১ আসনে (বটিয়াঘাটা-দাকোপ) চারজন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের ননী গোপাল ম-ল নৌকা, জাতীয় পার্টির কাজী হাসানুর রশিদ লাঙল, তৃণমূল বিএনপির গোবিন্দ্র চন্দ্র প্রামাণিক সোনালী আঁশ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রশান্ত কুমার রায় পেয়েছেন ঈগল প্রতীক।
খুলনা-২ (সদর-সোনাডাঙ্গা) আসনে সাতজন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের সেখ সালাউদ্দিন নৌকা, জাতীয় পার্টির মোঃ গাউসুল আজম লাঙল, বাংলাদেশ কংগ্রেসের দেবদাস সরকার ডাব, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের বাবু কুমার রায় ছড়ি, বিএনএমের মোঃ আব্দুল্লাহ আল আমিন নোঙর এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ সাঈদুর রহমান পেয়েছেন ঈগল প্রতীক।
খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী) আসনে চারজনের মধ্যে এবার আওয়ামী লীগের এস এম কামাল হোসেন নৌকা, জাতীয় পার্টির মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন লাঙল, জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন গোলাপ ফুল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাতেমা জামান সাথী ঈগল প্রতীক পেয়েছেন।
খুলনা-৪ (রূপসা-দিঘলিয়া-তেরখাদা) আসনে এবার সবচেয়ে বেশি প্রার্থী ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুস সালাম মূর্শেদী নৌকা, জাতীয় পার্টির মোঃ ফরহাদ হোসেন লাঙল, বিএনএমের এস এম আজমল হোসেন নোঙর, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনিরা সুলতানা ডাব প্রতীক পেয়েছেন। এছাড়া এনপিপির মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান আম, ইসলামী ঐক্যজোটের রিয়াজ উদ্দীন খান মিনার ও তৃণমূল বিএনপির মোঃ হাবিবুর রহমান সোনালী আঁশ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এম ডি এহসানুল হক সোফা, মোঃ জুয়েল রানা ট্রাক ও মোঃ রেজভী আলম পেয়েছেন ঈগল প্রতীক।
খুলনা-৫ (ফুলতলা-ডুমুরিয়া) আসনে এবার সবচেয়ে কম প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ আসনে তিনজন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের নারায়ন চন্দ্র চন্দ নৌকা, জাতীয় পার্টির মোঃ শাহীদ আলম লাঙল এবং ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ সেলিম আকতারের প্রতীক হাতুড়ি।
এছাড়া খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোঃ রশীদুজ্জামান নৌকা, জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু লাঙল, বিএনএমের প্রার্থী এস এম নেওয়াজ মোরশেদ নোঙর, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মির্জা গোলাম আজম ডাব, এনপিপির মোঃ আবু সুফিয়ান আম, তৃণমূল বিএনপির মোঃ নাদির উদ্দিন খান সোনালী আঁশ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জি এম মাহবুবুল আলম ঈগল প্রতীক পেয়েছেন।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, সব আসনের প্রার্থীদের মধ্যে দলীয় প্রতীক বরাদ্দের পর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমঝোতার মাধ্যমে প্রতীক দেয়া হয়েছে। এখন থেকে সকলে নিয়ম অনুযায়ী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন। তবে প্রতীক বরাদ্দের সময় তাদের নির্বাচনের আচরণবিধি আবারও বলা হয়েছে একই সাথে লিফলেটও প্রদান করা হয়েছে। কেননা নির্বাচনী আচরণবিধি সকলে সঠিকভাবে প্রতিপালন করছেন কি না সেটিও আমরা কঠোরভাবে মনিটরিং করবো।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top