নতুন উদ্বেগের নাম ‘অ্যাডিনোভাইরাস’

virus-2302271306.webp

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট…

করোনাভাইরাসের পর নতুন এক উদ্বেগের নাম অ্যাডিনোভাইরাস। নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু। এ ভাইরাসে আক্রন্ত হয়ে প্রতিদিন কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে অসংখ্য শিশু ভর্তি হচ্ছে। ইতোমধ্যে মারা গেছে ১১ শিশু। চিকিৎসার ক্ষেত্রে তাদের প্রয়োজন হচ্ছে আইসিইউ এবং ভেনটিলেশন সাপোর্ট।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাডিনোভাইরাসের প্রকোপ নতুন কিছু নয়। তবে, কলকাতার এ সময়ের পরিস্থিতি অন্য সময়ের চেয়ে গুরুতর। কলকাতায় বাংলাদেশের মানুষের নিয়মিত যাতায়াত। আমাদের দেশে অ্যাডিনোভাইরাস পরীক্ষার সুযোগ না থাকায় এতে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুতই বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্তদের বিষয়ে কোনো নজরদারি নেই বলে স্বীকার করেছেন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর’র একজন পরিচালক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, যাদের মধ্যে উপসর্গ আছে, তাদের ঠিক কতজন অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত, সেটা নির্ণয় করা যাচ্ছে না। এসব রোগী কিভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন, সেটাও জানা যাচ্ছে না।

ভাইরাস বিশেষজ্ঞ নজরুল ইসলাম বলেন, অ্যাডিনোভাইরাস নিয়ে কলকাতার স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের মধ্যে যে উদ্বেগ ও সতর্কতা লক্ষ করা যাচ্ছে, সেটার খানিকটাও আমাদের নেই। যদিও একই লক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে আসছে অনেক শিশু।

এম আর খান শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর বলেন, যেসব শিশু হাসপাতালে আসছে, হতে পারে তারা অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত। কিন্তু, সেটা নির্ণয়ের কোনো পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই আমাদের এখানে। যাদের মধ্যে উপসর্গ আছে, তারা অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত কি না, সেটা জানা জরুরি। পাশের দেশে এই সংক্রমণ বাড়ায় বাংলাদেশও ঝুঁকিতে আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জ্বর, ঠান্ডা ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ নিয়ে প্রতিদিনই শিশু রোগীরা আসছে রাজধানীর ঢাকা শিশু হাসপাতালে। এই হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক এ এস এম নওশাদ উদ্দিন আহমেদ জানান, শীতের শেষে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা নিয়ে অনেক রোগী হাসপাতালে আসে। এসব রোগী অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত কি না, সেটার পরীক্ষা শিশু হাসপাতালে হয় না।

হাসপাতালে আসা রোগীরা অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত কি না, সেটা পরীক্ষা করে জানার ওপর জোর তাগিদ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে আইইডিসিআর’র উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে রোগীরা আসলেও প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশে অ্যাডিনোভাইরাস কেমন ছড়িয়েছে, তা জানার জন্য পরীক্ষা করাতে হবে। ভেক্টরোলজিক্যাল টেস্ট ও ভাইরোলজিক্যাল টেস্ট করলে ফলাফল জানা যাবে।

আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলেন, আমাদের দেশে অ্যাডিনোভাইরাস নিয়ে কোনো নজরদারি নেই, এটা সত্যি। এ কারণে সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না, কারা কিভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন বা যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে ঠিক কত শতাংশ অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত।

আরেক ভাইরাস বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলামও পরীক্ষার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, কলকাতায় যে ভাইরাসে রোগীরা আক্রান্ত হচ্ছেন, সেই ভাইরাসের কোন উপধরনে আমাদের এখানে মানুষ অক্রান্ত হচ্ছেন, সেটি জানা অত্যন্ত জরুরি।

কলকাতায় নিয়মিত যাওয়া-আসার কারণে আমাদের এখানেও অ্যাডিনোভাইরাসের কলকাতার ধরনটি আসতে পারে বলে মনে করেন অধ্যাপক ডা. সমীরণ কুমার সাহা। তিনি বলেন, যেহেতু কলকাতায় এর প্রকোপ বেড়েছে, আর আমাদের দেশের মানুষরা নিয়মিতই কলকাতায় যাওয়া-আসা করছেন; তাই এই ভাইরাস আমাদের এখানে দ্রুতই চলে আসবে। ইতোমধ্যে এই ভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলেও শুনেছি।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, অ্যাডিনোভাইরাস আক্রান্ত একজন থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়াতে পারে—বিশেষ করে, স্পর্শ ও করমর্দনের মতো শারীরিক সংস্পর্শ, হাঁচি-কাশি, হাত ভালোভাবে না ধুয়ে নাক-মুখ ও চোখে স্পর্শ, আক্রান্ত শিশুদের ডায়াপার পরিবর্তনের সময়। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের উপসর্গ অনেকটা করোনার মতো—সর্দি-জ্বর, গলাব্যথা, তীব্র ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, চোখ ওঠা। পাকস্থলির প্রদাহের কারণে ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব ও পেটে ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও মূত্রাশয়ে প্রদাহ, নিউরোলজিক ডিজিস, যেমন: ব্রেইন ও স্পাইনাল কর্ডে সমস্যা হতে পারে।

সতর্কতা হিসেবে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে বলে জানান অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর। তিনি বলেন, মাস্ক পরাটা খুব জরুরি। আমরা একসময় করোনার কারণে নিয়মিত মাস্ক পরতাম, এখন পরছি না। নিয়মিত বাড়ির বাইরে সবাইকে আবারও মাস্ক পরা শুরু করতে হবে।

এ ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। এসবের মধ্যে আছে—সাবান-পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ভালোভাবে হাত ধোয়া; অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ না করা; অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, আক্রান্ত হলে বাড়িতে অবস্থান করা, হাঁচি-কাশির সময় নাক-মুখে রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করা, অন্যের ব্যবহৃত কাপ-গ্লাস-খাবাবের থালা-বাটি ব্যবহার না করা ইত্যাদি।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top