কেন্দ্র লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ, গভীরতা ১০ কিলোমিটার, এ বছর বাংলাদেশে ১০টি ভূমিকম্প সংঘটিত

Untitled-1-copy-2.jpg

খুলনার দর্পণ ডেস্ক : দেশে বিভিন্ন জেলায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫.৫। গতকাল শনিবার সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটের দিকে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
তবে, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে একটি গার্মেন্টসের ৮০ শ্রমিক আহত হয়েছেন। এছাড়া আতঙ্কিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী হলের ২য় তলা থেকে লাফ দিয়ে নামতে গিয়ে পায়ের গোড়ালিতে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ইউরোপীয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) ও মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা- ইউএসজিএস জানায়, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল কুমিল্লা থেকে ৪৬ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণপশ্চিমে এবং লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে। ভূপৃষ্ঠ থেকে এর গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫.৫।
ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ। ঢাকার আগারগাঁও ভূমিকম্প গবেষণা কেন্দ্র থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ৮৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫.৬। আবহাওয়া অফিস বলছে এটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প।
ভূমিকম্পে সারা দেশের ন্যায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামও কেঁপে ওঠে। এসময় উপজেলার ছুপুয়া আমির শার্টস নামক গার্মেন্টসের দেয়াল ধসে গেছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এতে আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে ৮০ শ্রমিক আহত হয়েছেন।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাঃ গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, আহতের সংখ্যা বাড়ছে। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কয়েক জনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে, অতঙ্কিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ মিনহাজ সূর্যসেন হলের ২৩৩ নম্বর কক্ষ থেকে লাফিয়ে আহত হয়েছেন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্যদিকে হুড়োহুড়ি করে শিক্ষার্থীরা পাঠকক্ষ থেকে বেরোতে গিয়ে পাঠকক্ষের দরজা ভেঙে গিয়েছে। ভাঙা কাঁচে কয়েকজন ছাত্র সামান্য জখম হয়েছেন। এ ছাড়াও তাড়াতাড়ি করে বিভিন্ন কক্ষ থেকে নামতে গিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আহত শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। ওই ছাত্র গোড়ালিতে আঘাত পেয়েছেন।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মোঃ বাচ্চু মিয়া জানান, ওই শিক্ষার্থীর ডান পায়ের গোড়ালিতে ফ্যাকচার হয়েছে। চিকিৎসকরা তাকে ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি দিয়েছেন।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ১০টি হালকা ও মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে। এতে জানমালের তেমন ক্ষতি না হলেও বড় ধরনের ভূমিকম্পের আভাস পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বছর প্রথম ভূকম্পন অনুভূত হয় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের পাশাপাশি কেঁপে ওঠে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট জেলাও। ৩ দশমিক ৯ মাত্রার এ ভূমিকম্পে জানমালের তেমন ক্ষতি হয়নি।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে মাঝারি মাত্রার জোড়া ভূমিকম্প আঘাত হানে। দেশটির আয়াবতি ও রাখাইন রাজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের কক্সবাজারেও ভূকম্পন অনুভূত হয়। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার আগারগাঁও থেকে ৩৭৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১।
চট্টগ্রামে গত ৩০ এপ্রিল ৪ দশমিক ৬ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল অক্ষাংশ ২২ দশমিক ৯৩ ডিগ্রি উত্তর, দ্রাঘিমা ৯৪ দশমিক ১৯ ডিগ্রি পূর্ব মিয়ানমারের মাউলাইকে। রাজধানীর ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এর দূরত্ব ছিল ৪০০ কিলোমিটার। গত ৫ মে রাজধানীতে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। উৎপত্তিস্থল ঢাকার সিটি সেন্টার থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে দোহারে। গত ৫ জুন ৩ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে বঙ্গোপসাগরে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মিয়ানমারের কাছে বঙ্গোপসাগরের তলদেশে।
গত ১৬ জুন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূকম্পন অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের গোলাপগঞ্জ, মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৫। গত ১৪ আগস্ট সিলেটে ফের ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। একই সঙ্গে ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায়ও এটি অনুভূত হয়। উৎপত্তিস্থল ছিল আসামের মেঘালয়, গভীরতা ছিল ৩৫ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ২২৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে। ঠিক ১৬ দিনের মাথায় অর্থাৎ ২৯ আগস্ট সিলেট মহানগরীর আশপাশে ফের মৃদু কম্পন অনুভূত হয়। এর মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৫। উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের জৈন্তাপুরে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যে ৪ দশমিক ৪ মাত্রার মৃদু ভূমিকম্প আঘাত হানে। আসামে আঘাত হানা ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশের সিলেট জেলাও। ঢাকা থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ২৬৩ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে ভারতের আসামের কাছাড়ে। ১৭ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলে ৪.২ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার দূরে টাঙ্গাইল সদরে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫ কিলোমিটার গভীরে ছিল এর অবস্থান।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top