৪ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছেন সমিতির চেয়ারম্যান

Khulna-1-2308081423.jpg

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট..

খুলনায় প্রায় দেড় হাজার গ্রাহকের চার কোটি টাকা নিয়ে স্যাংগুইন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান শেখ আহসাবুর রহমান পালিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন সমিতির মাঠকর্মী ও গ্রাহকরা।

এদিকে, এ ঘটনায় গত ৫ আগস্ট সব কর্মচারীদের পক্ষে খুলনা সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সমিতির ব্যবস্থাপক ও মাঠকর্মী আবু ছাত্তার সানা। চেয়ারম্যান শেখ আহসাবুর রহমান যেন বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন তিনি।

সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, স্যাংগুইন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতিটি সমবায় দপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন নেওয়া। সমিতিটির চেয়ারম্যান শেখ আহসাবুর রহমান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার ছেলে শেখ মেহেদী হাসান। গত ১১ বছরেরও বেশি সময় ধরে সমিতি কার্যক্রম চালাচ্ছিল। খুলনা নগরীর টুটপাড়া এলাকায় ওই সমিতির কার্যালয়। গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করাই ছিল সমিতির প্রধান কাজ। বর্তমানে গ্রাহক প্রায় দেড় হাজারের মতো। ফিক্সড ডিপোজিট করার অনুমোদন না থাকলেও চেয়ারম্যান নিজে অবৈধভাবে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে বেশি মুনাফা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে টাকা জমা রাখতেন। বর্তমানে ১৭ জন মাঠকর্মী রয়েছেন। ওই মাঠকর্মীরাই বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রাহক ও আমানত সংগ্রহ করে সমিতিতে টাকা জমা রাখতেন।

সমিতির ব্যবস্থাপক আবু ছাত্তার সানা বলেন, তিনি ওই সমিতির নামমাত্র ব্যবস্থাপক ছিলেন। কিন্তু তার কাছে কাগজপত্র বা কোনো কিছুই দেওয়া হতো না। ৫ আগস্ট সকালে মাঠকর্মীরা কার্যালয়ে গিয়ে দেখেন, সেটি তালা দেওয়া। এরপর কয়েক দফা চেয়ারম্যানকে ফোন করা হলেও তার ফোন বন্ধ ছিল। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও ফোন বন্ধ পাওয়ায় তারা নগরীর পূর্ব বানিয়াখামার এলাকায় চেয়ারম্যানের ভাড়া বাসায় গিয়ে খোঁজ নেন। এ সময় ওই বাড়ির মালিক জানান গত বৃহস্পতিবার পরিবার ও মালামাল নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন আহসাবুর রহমান।

তিনি আরও জানান, পরে চেয়ারম্যানের ছেলে ও ওই সমিতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহেদী হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বাবার পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানান। চেয়ারম্যানের পালিয়ে যাওয়ার খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে গ্রাহকরা টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন মাঠকর্মীদের।

আবু ছাত্তার সানা জানান, গ্রাহকদের ৪ কোটি টাকারও বেশি জমা রয়েছে ওই সমিতিতে। তার নিজের তিন লাখ টাকাসহ আত্মীয়-স্বজনদের ৩০ লাখ টাকা জমা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। প্রতি মাসের ৫ তারিখে সমিতির মাঠকর্মীদের বেতন দেওয়া হয়। এ মাসে দেওয়া হয়নি। একদিকে সমিতির গ্রাহকদের চাপ অন্যদিকে মাঠকর্মীদের মানবেতর জীবন, সব মিলিয়ে খুব ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন তারা।

সমিতির মাঠকর্মীরা জানান, চেয়ারম্যানের কাছে ওই সমিতির পাস বই, টাকা জমা ও ঋণ দেওয়ার রশিদসহ সব ধরনের কাগজপত্র রয়েছে।

নগরীর মিস্ত্রিপাড়া এলাকার বাসিন্দা স্বামী না থাকা রাফেজা বেগম জানান, ওই সমিতিতে ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা জমা রেখেছিলেন তিনি। এর মধ্যে এক লাখ টাকা তার মেয়ের। তিনি মিস্ত্রিপাড়া বাজারে দোকানে পানি সরবরাহ করে ও বিভিন্ন জায়গা থেকে ওই টাকা জোগাড় করেছিলেন। ইচ্ছা ছিল, মরে গেলে যেন ওই টাকা দিয়ে তার দাফন ও দোয়ার অনুষ্ঠান করা হয়। সমিতির চেয়ারম্যান পালিয়েছেন শুনে পাগলের মতো হয়ে গেছেন তিনি। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘তিল তিল করে জমানো টাকা ওই সমিতিতে রেখেছিলাম। এখন কী করবো বাবা। আমার তো সবই গেল।’

সমিতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মেহেদী হাসান দাবি করেন, ২০১৪ সালের দিকে তার মায়ের সঙ্গে বাবা শেখ আহসাবুর রহমানের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে তারা মায়ের সঙ্গে আলাদা হয়ে যান। তার বাবা আরেকটা বিয়ে করে সেই পরিবার নিয়ে থাকতেন। তাদের সঙ্গে বাবার কোনো যোগাযোগ ছিল না।

কেন ও কী কারণে সমিতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তার নাম রাখা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, কখনো ওই সমিতিতে যাননি তিনি। কখনো কোনো কাগজেও সই করেননি। তিনি মনে করছেন, তাকে ফাঁসাতেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তার নাম রেখে গ্রাহকদের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন তার বাবা শেখ আহসাবুর রহমান।

খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন জানান, সমিতির একজন কর্মচারী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে কোনো কাগজপত্র দিতে পারেননি। যে কারণে মামলা রেকর্ড না করে অভিযোগ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top