শীতের পোশাক বিক্রিতে ভাটা

clothes-3-20221206172315.webp

নিজস্ব প্রতিবেদক…….
শীত পোশাকের দোকানগুলোতে ক্রেতা কম, ব্যবসায়ীরা হতাশ
‘ঘুম হতে আজ জেগেই দেখি শিশির-ঝরা ঘাসে/ সারা রাতের স্বপন আমার মিঠেল রোদে হাসে/ আমার সাথে করত খেলা প্রভাত হাওয়া, ভাই,/ সরষে ফুলের পাঁপড়ি নাড়ি ডাকছে মোরে তাই।’

পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের এই কবিতায় শীতের চিত্র ফুটে উঠলেও শহরে এখনো তার প্রভাব পড়েনি। তবে শীতের একটা আবহ চলে এসেছে। দিনে গরম পড়লেও রাতে হিমেল হাওয়া স্পর্শ করে যায় শরীর। প্রতিবছর এই ডিসেম্বর মাসে শীতের পোশাকের চাহিদা থাকে বেশ। কিন্তু এবার এখনো রাজধানীতে জমে ওঠেনি শীতের বাজার।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঢাকায় শীত কম, এরমধ্যে আবার রাজনৈতিক অস্থিরতা। সব মিলিয়ে শীত পোশাকের বেচাকেনা কম। আর ক্রেতারা বলছেন, শীতের তীব্রতা কম থাকায় এবং বাজারে নতুন ডিজাইনের পোশাক না থাকায় কেনাকাটা হচ্ছে কম।

শীতের সময় রাজধানীর গুলিস্তান ও বঙ্গবাজার মার্কেট থাকে জমজমাট। তবে এবার মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। দোকানগুলোতে ক্রেতা অনেকটাই কম। ফলে অলস সময় পাড় করছেন দোকানিরা। এছাড়া শীতের পোশাকেও নেই তেমন নতুনত্ব, ওঠেনি নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক। মার্কেটে যেসব পোশাক রয়েছে সেগুলো বিক্রি না হওয়ায় নতুন পোশাক তোলেননি ব্যবসায়ীরা।

শীতে অন্যান্য পোশাকের মতো বাড়তি চাহিদা থাকে ব্লেজারে, তবে এবার এতেও পড়েছে ভাটা। ব্লেজার বিক্রেতা গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া মার্কেটের রনি এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মো. হাসান জাগো নিউজকে বলেন, দোকানে কাস্টমার আসছে না। শীত কম পড়ছে এবার। অন্যান্য বছর এমন সময়ে ভালোই কাস্টমার থাকতো। কিন্তু এবার একেবারেই নেই। আমরা যে প্রোডাক্ট উঠিয়েছি সেগুলো বিক্রি করতেই হিমশিম খাচ্ছি। সামনে কি হবে বুঝতে পারছি না।

এদিকে গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া মার্কেটের কম্বল বিক্রেতা ওসমান মিয়া বলেন, বেচাকেনা নাই বললেই চলে। প্রতিদিন মাত্র ৫-১০ পিস বিক্রি হয়। অন্যান্য বছর এই সময়ে লাখ লাখ টাকার কম্বল বিক্রি হতো। অথচ এখন ডিসেম্বরের পাঁচদিন গেলেও বিক্রি নেই। শীত না থাকার কারণেই বেচাকেনা কম। এটা তো শীতের ব্যবসা। সামনে আবার ১০ তারিখ বিএনপির সমাবেশ, এজন্য মানুষ কেনাকাটা করছে না। তবে শীত পড়লে বেচাকেনা হবে, শীত না পড়লে ব্যবসায় লস। এখনও আমার দোকানে লাখ লাখ টাকার প্রোডাক্ট পড়ে রয়েছে।

পাইকারি দরে কম্বল কিনতে আসা খুচরা ব্যবসায়ী সমসুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, দেশের যে পরিস্থিতি, কখন কি হয় বলা যায় না। সেজন্য খুব বেশি কম্বল নিচ্ছি না। কারণ আমাদেরও তো বিক্রি করতে হবে। আর অন্যদিকে শীত তো সেভাবে পড়ছে না। বেশি শীত না থাকলে মানুষ কম্বল কিনবে না। তাই আগের মতো অনেক বেশি কম্বল আমরাও নিতে পারছি না।

বঙ্গবাজার মার্কেটের আল্লাহর দান গার্মেন্টসের মালিক মো. রাসেল বলেন, এবার শীতের ব্যবসা খুবই খারাপ। গত বছর এসময় দোকানে কাস্টমারের অভাব ছিল না। এখন রাত সাড়ে ১১টা বাজলেও একটি প্রোডাক্টও বিক্রি করতে পারিনি।

আরেক শীতের পোশাক বিক্রেতা মো. পারভেজ জাগো নিউজকে বলেন, দেশের পরিস্থিতি অনেক খারাপ। আগে ভালো ছিল। এখন বেচাকেনা নেই। দেশে যে অবস্থা, যে পরিস্থিতি চলতেছে ১০ তারিখের পর তো আরও ভয়াবহ অবস্থা হবে। তখন তো মানুষ আরও না খেয়ে মরে যাবে। আগে শীতের পোশাক উঠালেই শেষ হয়ে যেত। এখন স্টক হয়ে থাকে, বিক্রি করতে পারি না।

শীতের পোশাক কিনতে আসা নাজমুল আহসান বলেন, প্রথমত শীত কম থাকায় এতদিন পোশাক কিনিনি। এখনও তেমন শীত নেই, তবে সামনে পড়তে পারে, তাই পোশাক কিনতে এসেছি। আর এবার তো বাজারে তেমন নতুন ডিজাইনের শীতের পোশাক দেখছি না। গত বছরের পোশাকই ঘুরে ফিরে দেখছি। গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া মার্কেট ঘুরে বঙ্গবাজারে এলাম, কিন্তু সব জায়গায় একই অবস্থা। তাই দুটির বদলে একটি জ্যাকেটই কিনলাম, নতুন মডেল উঠলে আবার কিনবো।

বঙ্গবাজার মার্কেটের এক্সপোর্ট পয়েন্টের স্বত্বাধিকারী সিদ্দীকুল আলম সজল জাগো নিউজকে বলেন, করোনার সময়ের চেয়ে বেচাকেনা কম। এসময় শীত থাকার কথা অনেক। কিন্তু এর কোনো প্রভাবই দেখা যাচ্ছে না। আর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও অন্যরকম বুঝা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বিক্রি মাইনাসের দিকে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top