ডেস্ক রিপোর্ট: আড়াই মাসের অধিক সময় পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয়েছে একাডেমিক কার্যক্রম। এর আগে ৩১ মে শিক্ষকদের পেনশন স্কিম বাতিলের আন্দোলনের মাধ্যমে বন্ধ হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়।
এর মধ্যে কোটা বাতিল আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীদের একদফা আন্দোলনে শেখ হাসিনার পদত্যাগ পর্যন্ত গড়িয়েছে। অবশেষে রোববার একাডেমিক কার্যক্রম চালু হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ
কাডেমিক কার্যক্রম চালু হলেও কোনো বিভাগেই ক্লাস শুরুর সংবাদ পাওয়া যায়নি। প্রথম দিনেই মার্কেটিং ও বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের পদত্যাগ দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এর মধ্যে মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান মো. জহির উদ্দিন আরিফের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিন বেলা ১১টায় চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছায় পদত্যাগের দাবিতে আগামীকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। এছাড়া দুপুর সাড়ে ১২টায় চেয়ারম্যান জহির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে রফিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভাগের চেয়ারম্যানের পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটামসহ ১২ দফা দাবি কোষাধ্যক্ষের কাছে জমা দেন।
এছাড়া কয়েকটি বিভাগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের মতবিনিময় হয়েছে। এ সময় শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে মিড পরীক্ষার মার্কস প্রকাশ করা, যথাসময়ে শিক্ষকদের ক্লাসে উপস্থিত থাকা, যথাযথভাবে খাতা মূল্যায়ন করাসহ তাদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরেন। বিভাগের শিক্ষকরাও কীভাবে শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া যায়, সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ চান।
জবি থেকে উপাচার্য নিয়োগের দাবি : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্যসহ সব প্রশাসনিক পদে নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। এদিন বেলা ১২টায় মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁঠালতলা থেকে শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘মানি না মানব না, অতিথি পাখি মানব না,’ ‘জবি থেকে ভিসি চাই, দিতে হবে, দিতে হবে’, ‘ভাড়াটে ভিসি আর নয়, জবি থেকে ভিসি চাই’ স্লোগান দেন।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নূর নবী বলেন, সব শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হতে হবে। অতিথি পাখির মতো বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে, আবার চলে যায়। অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন উপাচার্য এলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে পরিচিত হতে তার দুই বছর পার হয়ে যায়। কোনো অতিথি পাখি কোনো ভিসি এলে, ক্যাম্পাস বুঝতে তার বছর খানিক লেগে যায়।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৫-২০২৪ সাল পযন্ত দীর্ঘ ২০ বছরে হাজার হাজার শিক্ষার্থী বের হয়েছে। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো দীর্ঘদিন কর্মরত কোনো শিক্ষককে ভিসি হিসাবে নিয়োগ দিতে পারেনি। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই জগন্নাথ শিক্ষকদের মধ্য থেকে ভিসি চাই। যদি এই জগন্নাথের শিক্ষকদের মধ্য থেকে ভিসি নিয়োগ না হয়, আমরা আবার বুকের তাজা রক্ত দিয়ে মাঠে নামব।
ধুপখোলা মাঠ জবিকে হস্তান্তর : পুরান ঢাকার ধুপখোলা খেলার মাঠের দখল পুনরায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে ফিরিয়ে দিয়েছেন ঢাকা জেলা প্রশাসন। রোববার বিকাল ৪টায় ঢাকা জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমাস এ মাঠের দখল হস্তান্তর করেন।
এদিন বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হেঁটে ধুপখোলা মাঠে যান ঢাকা জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমানসহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবির চৌধুরীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
ধুপখোলা মাঠের ৫ দশমিক ৩২ একরের মধ্যে সাড়ে চার একর জায়গা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে হস্তান্তর করে ঢাকা জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতেই মাঠের ফটকে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ’ লেখা সংবলিত নামফলক ব্যানার টানিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে ফুটবল পাসিংয়ের মাধ্যমে মাঠ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ।
ঢাকা জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, আজকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ তাদেরকে হস্তান্তরের মাধ্যমে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সূচনা হলো। আমি চাই, এখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্থায়ী সাইনবোর্ড হোক। আপনাদের অসংখ্য হল বেদখল হয়ে গেছে, দুর্বৃত্তরা দখল করে নিছে। আপনারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নির্বাচন করুন। শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে ঢাকা জেলা প্রশাসন আপনাদের সব হল উদ্ধার করব।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ঢাকা শহরে এক হাজার সাত শতাধিক বাড়ি আছে, যেসব দুর্বৃত্তরা দখল করে আছে। তারা অনেক সময় লিজ নবায়ন করে না। সেসব বাড়িতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করে দিতে পারি। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আপনারা যে বিজয় দেখিয়েছেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরের ইতিহাসে আমরা আর দেখিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবীর চৌধুরী বলেন, এই ধুপখোলা মাঠে দীর্ঘদিন ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করে আসছে। কিন্তু করোনাকালীন হুট করে মাঠটি আমাদের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হলো। কী কারণে মাঠটি আমাদের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হলো, তা আমি এখনো বুঝে উঠতে পারিনি। আমি আশা করব, জেলা প্রশাসন আমাদেরকে সর্বোচ্চ সহায়তা করবে।
এ সময় কোষাধ্যক্ষ ধুপখোলা মাঠে খুব দ্রুত একটি টুর্নামেন্ট আয়োজনের ঘোষণা দেন।