‘আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম, কিন্তু আমি বোঝাতে পারিনি’

image-840469-1724120722.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এসময় ক্ষমতাসীনদের কেউ কেউ গোপনে দেশ ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এদিকে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর কোনো খোঁজ ছিল না সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের।

অবশেষে আত্মগোপনে থেকে মুখ খুললেন আলোচিত এই ব্যারিস্টার। তিনি শুরু থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন বা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন বলে দাবি করেছেন। একইসঙ্গে, তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকার বিষয়টি বোঝাতে পারেননি জানিয়ে দুঃখ প্রকাশও করেছেন।

সোমবার রাতে সামাজিকমাধ্যমে এক ভিডিওবার্তা দেন ব্যারিস্টার সুমন। সেখানে তিনি এসব কথা বলেন। তবে ভিডিওতে তার অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি সাবেক সংসদ সদস্য।

ভিডিওতে সুমন বলেন, ‘আমি শুরু থেকে ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কোটা সংস্কারের পক্ষে ছিলাম এবং এই আন্দোলনে যারা আহত-নিহত হয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পক্ষেও আমি ছিলাম।  কিন্তু আমার ব্যর্থতা হলো, আমি আপনাদের বোঝাতে পারিনি।  আমি এই ব্যর্থতার জন্য আমার যারা ফলোয়ার আছেন, আমার কাছে যারা প্রত্যাশা করেছেন সবার কাছে কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। ’

গত ১৫ বছরে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারা সোচ্চার ছিলেন তাদের মধ্যে নিজেকে অন্যতম বলেছেন ব্যারিস্টার সুমন।

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা এখন যে কাঠামোগত সংস্কার চাচ্ছেন, অথচ এই সংস্কারের জন্য দীর্ঘ বছর আগে থেকে কাজ করে যাচ্ছি আমি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ, গত ১৫ বছরে যে দুই-তিনজন মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, তাদের মধ্যে হয়তো আমাকে একজন পাবেন। আমি এস আলমের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে টাকা পাচারের জন্য মামলা করেছি।’

‘আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির যিনি প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, আমেরিকাতে তার নয়টি বাড়ি থাকা নিয়ে আমি নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছি। পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে নিজে বাদী হয়ে দুদকে মামলা করেছি। জাতীয় সংসদে তার বিরুদ্ধে আমি বক্তব্য দিয়েছি। কর কমিশনার মতিউরের বিরুদ্ধে মামলা করেছি, সালাম মুর্শেদীর বাড়ি নিয়ে মামলা করেছি, ফুটবলের দুর্নীতি নিয়ে কাজী সালাউদ্দিন সম্পর্কে কথা বলেছি। অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে আমি নিজে মামলা করেছি, পরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার ৮ বছরের সাজা হয়েছে।’

‘আপনারা জানেন, আমার জীবনে কত ঝুঁকি ছিল। কোটা আন্দোলন শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে সংবাদ সম্মেলন করে বলতে বাধ্য হয়েছি, জিডি করেছি যে আমার জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। সুতরাং এই যুদ্ধে সবসময় আমি চেষ্টা করেছি। এখন আপনারা যে যুদ্ধ শুরু করেছেন, ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে যে যুদ্ধ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ, এই যুদ্ধে সবসময় আমি দোয়া করি। এই যুদ্ধে সবসময় আমার জায়গা থেকে শরিক থাকার চেষ্টা করব।’

কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন সরকার পতনের এক দফায় রূপ নিল, তখন শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন।  শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিরোধিতাও করেন তিনি।

এর আগে ব্যারিস্টার সুমন বলেছিলেন, ‘যারা ফেসবুকে প্রোফাইল লাল করেছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই— আমি ততটুকু পর্যন্ত লাল যতটুকু দাবি যৌক্তিক পর্যায়ে ছিল, কোটা সংস্কারের জন্য ছিল, আমি ততটুকু পর্যন্ত লাল ছিলাম। কিন্তু যখন আমার নেত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাচ্ছেন এবং ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছেন, তখন আমি আপনাদের পক্ষে নেই। কেননা আপনাদের যেমন আমার নেত্রীর বিরোধিতা করার অধিকার আছে, আমারও আমার নেত্রীর পক্ষে দাঁড়ানোর অধিকার আছে।’

বিভিন্ন সময় নানা সামাজিক ইস্যু নিয়ে ফেসবুকে কথা বলে আলোচনায় উঠে আসেন ব্যারিস্টার সুমন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনে নির্বাচিত হন তিনি।

Share this post

scroll to top