ডেস্ক রিপোর্ট: শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীতে (আরএনবি) বহাল তবিয়তে রয়েছেন পূর্বাঞ্চল জেনারেল চৌকির সিআই (চিফ ইন্সপেক্টর) মোহাম্মদ আমান উল্লাহ আমান। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার সহযোগী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। এছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সাবেক সভাপতি এবিএম ফজলে করিমের অনুসারী হওয়ায় ‘ক্ষমতাধর’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন এই কর্মকর্তা। তবে পটপরিবর্তনের পরও একই স্থলে দায়িত্ব পালন করায় আগের চেয়ে বেশি ‘ক্ষমতাধর’ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে নানা অপকর্মের পরও তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। বরং তাকে নিয়ে কেউ কোনো কথা বললে উলটো বদলির শিকার হচ্ছে। এ নিয়ে সাধারণ আরএনবি সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জানা গেছে, ৪ আগস্ট চট্টগ্রামের পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় শিক্ষার্থীদের হামলায় আহত হয় চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ। স্টেশনের পার্সেল গেটের সামনে আহত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যান শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে সেখান থেকে আজিজকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় সিআই আমান। পরে সেখান থেকে আজিজের একটি পিস্তল উদ্ধার করে আমান তার হেফাজতে রাখে। কিন্তু পরদিন ৫ আগস্ট পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় সেই পিস্তল আরএনবির এসআই আমিরুল ইসলামের মাধ্যমে রেলওয়ে থানা পুলিশের কাছে জমা দেওয়া হয়। রেলওয়ে থানা পুলিশ সেটি গ্রহণ না করে কোতোয়ালি থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসি এসএম শহীদুল ইসলাম।
জানা যায়, চট্টগ্রাম জেনারেল শাখায় সিআই আমানের অন্যতম সহযোগী হিসাবে রয়েছেন এসআই সোলাইমান ও হাবিলদার ইউসুফ আলী। এর মধ্যে এসআই সোলাইমান প্রায় ১৪ বছর ধরে এবং হাবিলদার ইউসুফ ২০ বছর ধরে চট্টগ্রামে রয়েছেন। তাদের মাধ্যমে নানা ধরনের অপকর্ম করে আসছেন সিআই আমান। যার মধ্যে অফিস নিয়ন্ত্রণ করেন হাবিলদার ইউসুফ এবং বিভিন্ন স্থানের অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে চাঁদা আদায়ের কাজ করেন এসআই সোলাইমান। এছাড়া হাবিলদার ইউসুফ সিআই আমানের ভুয়া টিএডিএ বিল তৈরি করার দায়িত্ব পালন করেন। বাইরে না গিয়েও প্রতি মাসে অন্তত ১০ দিনের ভুয়া টিএ বিল করেন আমান। প্রতিদিনের টিএ বিল ৭০০ টাকা হারে প্রতি মাসে ৭ হাজার তুলে নেন তিনি। অন্যদিকে অফিসে থেকেও আমানের সহযোগিতায় টিএ বিল তুলে নেন ইউসুফ আলী। এছাড়া জেনারেলের আওতায় প্রতি মাসে অন্তত ৩০ জনের টিএ বিল হয়। সেই বিল থেকে ২০ শতাংশ হারে কমিশন আদায় করেন সিআই আমান। এদিকে হাবিলদার ইউসুফ আলীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে যুক্ত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এই কালোবাজারি চক্র থেকেও মাসোহারা আদায় করেন আমান। ২০ ডিসেম্বর চুরির অভিযোগে ব্যারাকে আটকে রেখে এক ভ্যানচালকের কাছ থেকে ৫৭ হাজার টাকা আদায় করেন এসআই সোলাইমান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই সোলাইমান বলেন, ভ্যানচালক ছিদ্দিকের কাছে রেললাইনের তিনটি টুকরো পাওয়া গিয়েছিল। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তাকে ব্যারাকে এনেছিলাম। পরে তাকে দুপুরের খাবার খাইয়েছি। কিন্তু তাকে শারীরিকভাবে কোনো আঘাত করা হয়নি। ৫৭ হাজার টাকা নয়, ওই ব্যক্তি জোর করে কেবল ৭ হাজার টাকা দিয়েছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে সিআই আমান উল্লাহ আমান বলেন, আমি কোনো ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই। কর্তৃপক্ষ বদলি না করলে আমার তো কিছু করার নেই।