জমি অধিগ্রহণের টাকা পেতে ৪০ বছর ধরে ঘুরছেন নুর চেহের বেগম

top-20220803195811.webp

জেলা প্রতিনিধি….
দীর্ঘ চার দশক আগে জমি হাতছাড়া হলেও এখনো অধিগ্রহণের টাকা বুঝে পাননি নুর চেহের বেগম। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় দেনদরবার ও মামলা-মোকদ্দমাও হয়। মামলায় নিজের পক্ষে আদালতের রায় এলেও হাতে টাকা আসেনি তার। জমি অধিগ্রহণ করা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এ বিষয়ে কোনো তৎপরতা না থাকায় এবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দ্বারস্থ হয়েছেন নুর চেহের বেগম।

বুধবার (৩ আগস্ট) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) শহীদ শাহ আলম বীরোত্তম অডিটোরিয়ামে দুদকের গণশুনানির খবর পেয়ে সেখানে যান নুর চেহের বেগম। এরপর গণশুনানিতে অভিযোগটি তুলে ধরেন দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮০-৮১ সালে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরে সে জমি বন্দরকে বুঝিয়েও দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। কিন্তু জমির মূল মালিককে অধিগ্রহণের টাকা না দিয়ে অন্য ব্যক্তির হাতে টাকা তুলে দেয়া হয়। এতে ঘটনা গড়ায় মামলা-মোকাদ্দমা পর্যন্ত। একপর্যায়ে মূল মালিক চট্টগ্রাম মহানগরীর নিউমুরিং দক্ষিণ হালিশহর এলাকার বাসিন্দা মৃত আলীম উল্লাহর স্ত্রী নুর চেহের বেগমের পক্ষে রায় দেন আদালত। এ নিয়ে জমির ক্ষতিপূরণের টাকা ফিরে পেতে ছয়জনের বিরুদ্ধে ছয়টি সার্টিফিকেট মামলা করেই দায় সাড়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

এরইমধ্যে বিভিন্ন দেনদরবার ও মামলা মোকাদ্দমা করেও কোনো সুফল না পাওয়ায় দুদকের গণশুনানিতে যান ভুক্তভোগী চেহের বেগম।

শুনানিতে ক্ষতিগ্রস্ত নুর চেহের বেগমের ছেলে মিজানুল হক বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর আগে তাদের জমিটি অধিগ্রহণের সময় তিনি মায়ের গর্ভে ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি দেখে আসছেন, জমির ক্ষতিপূরণ তথা অধিগ্রহণের টাকা পাওয়ার জন্য তার মা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। বন্দর কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণের টাকা জেলা প্রশাসনকে দিলেও জেলা প্রশাসন তাদের পরিবারকে কোনো টাকাই দেয়নি। অবশেষে তারা বিষয়টি নিয়ে দুদকের শরণাপন্ন হয়েছেন।

এসময় বন্দরের ডেপুটি ম্যানেজার (ভূমি) জিল্লুর রহমান বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ করেছে। অধিগ্রহণ করা জমি বন্দরকে বুঝিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। অধিগ্রহণের অর্থও জেলা প্রশাসনকে যথাসময়ে পরিশোধ করেছে বন্দর। এখানে বন্দরের কোনো দায় নেই।

এসময় ভুক্তভোগী মিজানুল হক বলেন, জমি অধিগ্রহণের পর কোনো ক্ষতিপূরণ না পেয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। ১৯৯০ সালে ওই মামলায় তার মায়ের পক্ষে আদালতের রায় আসে। এরপর অন্য একটি জায়গা তার মাকে পুনর্বাসন করা হয়। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষ পুনর্বাসনের জায়গা থেকেও তাদের বিতাড়িত করা হয়।

মিজানের ভাষ্য, ২০০৬ সালে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ মাঠের এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন দুদক চেয়ারম্যানকে অভিযোগটি জানানো হয়। তখন এ নিয়ে তদন্তও হয়। শুনানিতে মিজানের কান্নায় পুরো অডিটোরিয়াম নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে।

নুর চেহের বেগনের সন্তান মিজান বলেন, যারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে জেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিপূরণের অর্থ তুলে নিয়েছে, পরে বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদেরই পুনর্বাসন করেছে। কিন্তু আমরা জমির প্রকৃত মালিক ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও ক্ষতিপূরণ পাইনি। আমাদের পুনর্বাসনও করা হয়নি।

শুনানিতে দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ চাইলে তাদের সিএসআর (সোশ্যাল করপোরেট রেসপনসিবিলিটি) ফান্ড থেকে নুর চেহের বেগমের পরিবারকে পুনর্বাসন করতে পারে। এছাড়া তৎকালীন সময়ে জমি অধিগ্রহণের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিযোগের বিষয়ে একটি অনুসন্ধান পরিচালনা হতে পারে। সে ধরনের ব্যবস্থা নিতে দুদক কমিশনারকে অনুরোধ জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, বর্তমান আইনের ধারায় ক্ষতিপূরণ পেতে চাইলে ভুক্তভোগীকে হয়তো আরও ২০-৪০ বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে। ফলে বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত। এসময় তিনি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত নুর চেহের বেগমকে পাঁচ লাখ টাকার অর্থসহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top