গুমের পর ইলিয়াস পরিবারের সঙ্গে যেসব নাটক করেছিল র‌্যাব

Elias-2-y-677ba93ab47f0.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট: বিএনপির প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালক আনসার আলীকে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে বনানীর রাস্তা থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তুলে নিয়ে যায়।  এরপর থেকেই নিখোঁজ।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ১৫ বছরে গুম-খুনের বিচারের লক্ষ্যে নতুন গুম কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এদিকে গুমের অভিযোগ জমা নেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।  বর্তমানে এই ট্রাইব্যুনালে তদন্তের অধীন রয়েছে ইলিয়াস আলীর গুমের অভিযোগ।

জানা গেছে, ইলিয়াস আলী আর বেঁচে নেই তা অনেকটা নিশ্চিত। আগামী মার্চের শেষদিকে গুম তদন্ত কমিশন আরও একটি রিপোর্ট জমা দেবে সরকারকে।

গুম কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, ইলিয়াস আলী ফিরে আসার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। ইলিয়াস আলীকে অপহরণের ক্লু পাওয়া গেছে এবং এ বিষয়ে আরও তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, তদন্ত অনেকদূর এগিয়ে গেছে। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। পুরোপুরি তদন্ত শেষ হলে খোলাসা হওয়া যাবে।

ইলিয়াস আলীকে অপহরণের পর গুম করার প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ হয়। বিএনপি হরতাল ঘোষণা করলে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয় ইলিয়াস আলীকে ফেরতের দাবিতে। সিলেটে তুমুল বিক্ষোভ দমনে গুলিও চালিয়েছিল পুলিশ। পুলিশের গুলিতে বিশ্বনাথে ইলিয়াস আলীর নির্বাচনী এলাকায় ৭ জন নিহত হয়েছিলেন। তখনই আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ এক বক্তব্যে উপহাস করে বলেছিলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার শাড়ির আঁচলে ইলিয়াস আলী লুকিয়ে আছেন।’

এদিকে ঘটনার চারদিন পর র‌্যাব সদর দপ্তরের মোশতাক নামে এক কর্মকর্তা ইলিয়াস আলীর স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ফোন করে শোনান আশার বাণী। ওই র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, আমাদের কাছে ইনফরমেশন আছে, উনাকে (ইলিয়াস আলী) পাওয়া যেতে পারে, আপনারা প্রিপারেশন রাখেন। এরপর ওই র‌্যাব কর্মকর্তা আরও একদিন ফোন করে একই কথা শোনান।

এর কিছুদিন পর ইলিয়াস আলীকে পাওয়ার আশার বেলুন ফুটো করে দেন ওই র‌্যাব কর্মকর্তা। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে পরিবারের সদস্যদের জানান, যে ইনফরমেশনটা ছিল সেটা এখন আর নেই। এই বিষয়ে আর কিছু বলতে পারছেন না বলে জানিয়ে দেন।

কয়েকদিন পর জনৈক এক ব্যক্তি ফোন করে ইলিয়াস আলীর স্ত্রীকে জানান, ইলিয়াস আলী জীবিত আছেন। আপনি ইচ্ছে করলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন। কীভাবে সাক্ষাৎ করা যায় সেটাও তিনি বলে দিলেন।

স্বামীর সন্ধান পেতে পরদিনই প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের সুযোগ চেয়ে আবেদন করে পরিবার। অনুমতিও মেলে। দুই পুত্র ও শিশুকন্যাকে গণভবনে ডাকেন শেখ হাসিনা। তার সন্তানদের মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনাও দেন।

শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের কিছুদিন পর গাজীপুরের পুবাইল থেকে ইলিয়াস আলীর স্ত্রীর মোবাইলে আরও একটি ফোন আসে। এক নারী ফোন করে জানান, ইলিয়াস আলীকে পাওয়া যেতে পারে, দ্রুত পুবাইলে আসেন। বেশ কয়েকজন দলীয় নেতা ও র‌্যাব কর্মকর্তা মোশতাকসহ দ্রুত পুবাইলে যায় পরিবার। সেখানে যাওয়ার পর স্থানীয়রা জানান, একজন লোককে মাইক্রোবাসে করে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এরপর তার স্ত্রীর কাছে আরও একটি উড়ো খবর আসে- মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে ইলিয়াস আলীকে ফিরে পাওয়া যেতে পারে। সেখানে র‌্যাব অভিযান চালায়। পরে ইলিয়াস আলীর পরিবার জানতে পারে, বিভ্রান্ত করতেই এমন খবর রটানো হয়।

শেখ হাসিনার নির্দেশে ইলিয়াস আলীকে প্রথমে অপহরণের পর গুম এবং খুনের পর র‌্যাব এভাবেই নাটক করে পরিবারের সঙ্গে।

স্বামীর সন্ধানের জন্য উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন স্ত্রী লুনা। একটি হেভিয়াস কর্পাস আবেদন দায়ের করে সন্ধান পেতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার অনুগত হাইকোর্ট তখন কোনো আদেশ দেয়নি।

উল্লেখ্য, ইলিয়াস আলী ও তার সঙ্গে ড্রাইভার আনসার আলীকে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল বনানীর ২ নম্বর সড়কের সাউথ পয়েন্ট স্কুলের সামনে থেকে অপহরণ করা হয়। সেদিনই তিনি বিকালে সিলেট থেকে ফিরে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সাবেক শেরাটন ও বর্তমানে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে একটি বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন।

বৈঠক শেষে রাত ১১টার দিকে রওয়ানা হয়েছিলেন বনানীর বাসার দিকে। ইলিয়াস আলীর বাসার কাছাকাছি অবস্থান থেকেই তাকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকের পাশাপাশি সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন তিনি।

Share this post

scroll to top