ডেস্ক রিপোর্ট: গোটা বিশ্বের নজর ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে। সেই নির্বাচন শেষে হাতে এসেছে ফল। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ জয়ে দারুণ খুশি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলো। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য কি সেই অর্থে খুশি হতে পেরেছে ট্রাম্পের এ জয়ে? গাজা যুদ্ধে বরাবরই ইসরাইলকে সমর্থন দেওয়া ট্রাম্পের পুনরায় ক্ষমতার চেয়ারে বসাকে কীভাবে দেখছে মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশগুলো?
ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া নিয়ে আগে থেকেই উদ্বিগ্ন ছিল ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশ। কেননা, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে আগামীতে ইসরাইলের পক্ষে সমর্থন বাড়ার আশঙ্কা ছিল। সেই আশঙ্কা এখন সত্যি হলেও হতে পারে।
তবে এতোসব কিছুর পরও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়েছেন, সেই সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপনের কথা বলেছেন। জো বাইডেনের সময়ে অবরুদ্ধ সুযোগগুলো ট্রাম্পের সময়ে পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। সেই সঙ্গে নতুন সুযোগ তৈরি হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ইসরাইল
ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় আসায় কথিত সবচেয়ে খুশি হওয়াদের একজন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ট্রাম্পের বিজয় নিয়ে তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘হোয়াইট হাউসে আপনার ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন আমেরিকার জন্য একটি নতুন সূচনা। ইসরাইল ও আমেরিকার মধ্যে মহান জোটের জন্য একটি শক্তিশালী প্রতিশ্রুতির প্রতিনিধিত্ব করে। একসঙ্গে, আমরা আমেরিকা-ইসরাইল জোটকে শক্তিশালী করব’
দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরাইল কাটজ ট্রাম্পের জয়ের পর বলেছেন, ‘একসঙ্গে, আমরা আমেরিকান-ইসরাইল জোটকে শক্তিশালী করব। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনব এবং ইরানের নেতৃত্বে অশুভ অক্ষকে পরাজিত করতে দৃঢ় থাকব।’
সৌদি আরব
সৌদি রাজপরিবার, আরেকটি গ্রুপ যার ট্রাম্পের ফিরে আসায় খুশি হয়েছেন। কেননা, ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকার সময় সৌদি রাজপরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। যে কারণে ট্রাম্প ফের ক্ষমতায় আসায় তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান এবং তার ছেলে, ডি ফ্যাক্টো শাসক ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ এবং জনগণের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, যা প্রত্যেকে সকল ক্ষেত্রে শক্তিশালী এবং বিকাশ করতে চায়।’
ফিলিস্তিন
ট্রাম্প এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সম্পর্ক কখনই উষ্ণ ছিল না। তবুও ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছে দেশটির প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। সেই সঙ্গে ট্রাম্প ফিলিস্তিনের জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দেবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
এই নেতা বলেন, ‘আমরা শান্তির প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিতে অটল থাকব এবং আমরা নিশ্চিত যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আপনার নেতৃত্বে, ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করবে।’
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা হামাস জানিয়েছে, ‘নতুন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের অবস্থান নির্ভর করবে ফিলিস্তিনি জনগণ, তাদের বৈধ অধিকার এবং তাদের ন্যায্যতার প্রতি তার অবস্থান এবং বাস্তব পদক্ষেপের ওপর।’
তুরস্ক
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান ট্রাম্পকে ‘বন্ধু’ উল্লেখ করে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি একটি ন্যায্য বিশ্বের জন্য আরও প্রচেষ্টা করা হবে। আমি আশা করি নির্বাচনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ এবং মিত্র জনগণ এবং সব মানবতার জন্য শুভ হবে।’ সেই সঙ্গে ট্রাম্পের সময়ে ইউক্রেন ও গাজায় সংঘাতের অবসান হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন এরদোগান।
ইরাক
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানী ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বিবৃতিতে লিখেছেন, ‘আমরা পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য ইরাকের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করছি। আমরা এই নতুন পর্বটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের দুই দেশের মধ্যে গভীর সহযোগিতার সূচনার জন্য উন্মুখ, যা টেকসই উন্নয়ন অর্জনে অবদান রাখবে এবং দুই বন্ধুত্বপূর্ণ জনগণকে উপকৃত করবে।’
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যত্র দেশ
লেবানন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান এবং মিশরের নেতারাও ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। নতুন করে ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা।