ডেস্ক রিপোর্ট: ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত কর্তৃক গত ১৯ জুলাই প্রদত্ত পরামর্শমূলক মতামতের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে।
আর এ সমর্থনে বুধবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের চলমান ১০ম বিশেষ জরুরি অধিবেশনে একটি গুরুত্বপূর্ণ রেজ্যুলেশন গৃহীত হয়েছে।
ফিলিস্তিন কর্তৃক উপস্থাপিত রেজ্যুলেশনটি বাংলাদেশসহ ৫৩টি দেশ কো-স্পন্সর করে। রেজ্যুলেশনটি ভোটের জন্য উপস্থাপিত হলে ১২৪টি দেশ এটির পক্ষে ও ১৪টি দেশ বিপক্ষে ভোট প্রদান করে এবং ৪৩টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। কো-স্পন্সর দেশ হিসেবে বাংলাদেশ রেজ্যুলেশনটির পক্ষে ভোট দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের সাম্প্রতিক পরামর্শমূলক মতামতের আলোকে, রেজ্যুলেশনটিতে ইসরাইলকে ফিলিস্তিন ভূখন্ডে তার বেআইনি উপস্থিতি বন্ধ করা এবং এর প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখন্ডে ইসরাইলের অন্যায় কাজের কারণে যে সকল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা পূরণে একটি আন্তর্জাতিক মেকানিজম প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এছাড়াও এই রেজ্যুলেশন বাস্তবায়নের উপর রিপোর্ট পেশ করার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে অনুরোধ জানানো হয়। বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা বিষয়ক চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের আলোকে ইসরাইল দ্বারা সংঘটিত নৃশংস অপরাধের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বানও জানানো হয় রেজ্যুলেশনটিতে। একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উপায় খুঁজে বের করার লক্ষ্যে আগামী এক বছরের মধ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় রেজ্যুলেশনটির মাধ্যমে।
বস্তুত, দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান বাস্তবায়নের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিরসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে রেজ্যুলেশনটি।
রেজ্যুলেশনটি উপস্থাপন উপলক্ষ্যে আজ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিশেষ জরুরি অধিবেশন চলাকালে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবদুল মুহিত বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে বক্তব্য প্রদান করেন।
রাষ্ট্রদূত মুহিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের এই সিদ্ধান্তকে ঐতিহাসিক বর্ণনা করে এটিকে স্বাগত জানান এবং সকল সদস্য রাষ্ট্রকে এটি মেনে চলার আহ্বান জানান।
তিনি গাজায় চলমান নৃশংসতা এবং হাজার হাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনির মৃত্যু নিয়ে বাংলাদেশের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত রেজ্যুলেশন ২৭২৮-এর আলোকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। ১৯৬৭ সালের পূর্বের সীমানা অনুযায়ী দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি অর্জনের একমাত্র পথ বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মুহিত।
এছাড়াও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি, অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখন্ডে ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারিত্ব এবং গণহত্যার মত অপরাধের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি গাজায় গুরুতর মানবিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিব এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই-কমিশনারের প্রদত্ত বিবৃতিরও প্রশংসা করেন।