ডেস্ক রিপোর্ট: গাজীপুর জেলা কারাগারের বিতর্কিত জেল সুপার আনোয়ারুল করিমের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠার পর তাকে সম্প্রতি বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি অবমুক্ত না হয়ে এখনও বহালতবিয়তে রয়েছেন। এতে করে কারা শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রায় দেড় বছর আগে তিনি গাজীপুরে জেল সুপার হিসাবে যোগদান করেন। এরপর থেকে কারাগার অভ্যন্তরে বিস্তর অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়মে পরিণত হয়েছে।
জেল সুপারের বাণিজ্য : সদ্য মুক্তি পাওয়া কয়েকজন বন্দি যুগান্তরকে বলেন, কারাগারের ভেতরে ক্যান্টিনে রান্না করা ১টি ডিম বিক্রি করা হয় ৫৫-৬০ টাকায়। কিন্তু পিসি বইতে ডিমের পরিবর্তে দেখানো হয় আইসক্রিম বা অন্য কোনো পণ্য। যার বাজার মূল্য ২৫ টাকা। রান্না করা ১ কেজি গরুর মাংস বিক্রি করা হয় ২ হাজার ৫০০ টাকায়। কিন্তু পিসি বইতে দেখানো হয় ১ বাটি গরুর মাংস মাত্র ১২০ টাকা। এছাড়া ব্রয়লার মুরগির মাংস প্রতি কেজি ক্যান্টিনে রান্না করে বিক্রি করেন ১৫-১৮শ টাকায়। পাঙাশ রান্না করে কেজিপ্রতি বিক্রি করেন ১২০০ টাকা। এভাবে চড়া দামে বিক্রি করে বন্দিদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৩০-৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন জেল সুপার আনোয়ারুল করিম।
এছাড়াও জেল সুপারের সহায়তায় কারাগারে বন্দি থাকা ৩০ জন আসামিকে অসুস্থ বানিয়ে কারা হাসপাতালে রাখা হয়েছে। শুরুতেই হাসপাতালের ভর্তি ফি নেওয়া হয় ২০ হাজার টাকা। পরে সেখানে নিয়মিত থাকতে চাইলে প্রতি মাসে দিতে হয় ১৫ হাজার টাকা। এ টাকা জেল সুপার ও ফার্মাসিস্ট মিলে ভাগবাঁটোয়ারা করে নেন। কারাগারে বন্দিদের জন্য দৈনিক ২২০ কেজি মসুর ডাল বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু বরাদ্দের মসুর ডাল থেকে ৫০ কেজির মতো দিয়ে বাকি ডাল তারা আত্মসাৎ করেন। দৈনিক ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ থেকে দেওয়া হয় ৩০০ কেজি। বাকি চাল তারা বিক্রি করে দেন। এসব কিছু অনিয়মের কলকাঠি নাড়েন কারারক্ষী মো. শামসুল হুদা। জেলারও অনেকটা জেল সুপারের কাছে জিম্মি দশায় রয়েছেন। যার কারণে তিনি ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পান না।
জেল সুপারের অর্ডালির চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্য: কারারক্ষী মো. শামসুল হুদার (১৩১৪৪) আলাদা একটা গ্রুপ রয়েছে। ওই গ্রুপের কাছে জিম্মি পুরো গাজীপুর জেলা কারাগারের বন্দিরা। কারারক্ষী শামসুল হুদার অন্যতম সহযোগী কারারক্ষী মো. রফিকুল ইসলাম (১৪৭৭৭), মো. রবিউল ইসলাম (১৩৩৭৫), কারারক্ষী নং (১৪৬৬৫) মো. মমিনুল ইসলাম, কারারক্ষী নং (১২৭৯৪) মো. আহসান হাবিব, কারারক্ষী নং ১২২৬০ মো. আজিজ, কারারক্ষী নং ১৩৫০১ মো. রেজাউল করিম। এই ছয়জন কারারক্ষী দিয়ে কারাগারে ভেতরে ও বাইরের সব চাঁদা তোলা হয়। কোনো ওয়ার্ডের মেড কে হবে, রাইটার হবে কে, কোন দায়িত্বে যেতে কত টাকা দেবে, কার রেট বেশি, কোন ওয়ার্ড থেকে মাসিক কত টাকা কালেকশন হবে এগুলোর দায়িত্বে রয়েছেন তারা। ঠিকমতো মাসে টাকা পরিশোধ করতে না পারলে বন্দিদের ওপর চলে অমানবিক নির্যাতন। ওই গ্রুপের সঙ্গে কোনো কারারক্ষী যোগ না দিলে মিলবে না কোনো সুযোগ-সুবিধা। কারারক্ষী শামসুল হুদা হলেন নিয়োগ বাণিজ্যর মূল হোতা। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ কর্মরত কারারক্ষী আল আমিনের কাছ থেকে নিয়োগ দেওয়ার নাম করে শামসুল ৯ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কারারক্ষী শামসুল হুদা ছিলেন দুর্নীতির দায়ে চাকরিচ্যুত হওয়া সাবেক ডিআইজি প্রিজন্স মো. বজলুল রশিদের একান্ত আস্থাভাজন। তাই কারারক্ষী শামসুল হুদা যে কারাগারে যোগদান করেন সেখানে কিছু কারারক্ষী নিয়ে গড়ে তুলেন একটি নিজস্ব বাহিনী। এদের মাধ্যমে কারাগারের ভেতরে জেল সুপার আনোয়ারুল করিমের ছত্রছায়ায় মাদক সরবরাহ করা হয়। অন্য কারারক্ষীরা তাদের এসব অপকর্ম নিয়ে মুখ খুললে চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দেন শামশুল হুদা। গাজীপুর কারাগারের জেল সুপার আনোয়ারুল করিম যুগান্তরকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আসছে সেগুলো সত্য নয়। পরে তিনি সংবাদ না করার শর্তে প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।