চিড়িয়াখানার সর্বশেষ হাতিটি মুক্ত হলো ৪০ বছর পর

image-841344-1724316660.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট: দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় চিড়িয়াখানার শেষ হাতিকে (চার্লি) ৪০ বছর পর মুক্তি দেওয়া হয়েছে। হাতিটি ১৯৮৪ সালে জিম্বাবুয়ের হোয়াঙ্গে জাতীয় উদ্যান থেকে ধরা হয়েছিল। তখন হাতিটির বয়স ছিল ২ বছর।

তারপর চার্লিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বোসওয়েল উইলকি সার্কাসে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাকে নানা কসরত করতে শেখানো হয়েছিল। ২০০০-এর দশকের শুরুতে হাতিটি দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসা হয়।

সম্প্রতি প্রাণী কল্যাণ সংস্থাগুলো হাতিটির স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সেটির মুক্তির জন্য দাবি জানায়। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বন্যপ্রাণীর অধিকার নিয়ে কাজ করা ইএমএস ফাউন্ডেশন হাতিটি মুক্ত হওয়ার ঘোষণা দিয়ে জানায়, সেটিকে লিম্পু প্রদেশের শাম্বালা প্রাইভেট রিজার্ভে নেওয়া হয়েছে।

ফাউন্ডেশনটি জানিয়েছে, এই “ইতিহাস সৃষ্টিকারী ঘটনা” অনেক বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের সঙ্গে আলোচনার কারণে ঘটেছে। চিড়িয়াখানায় হাতিরা কষ্ট পায়— এটি নিয়ে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ উপস্থাপন করেছিল ইএমএস ফাউন্ডেশন ও সহযোগী সংস্থা।

চিড়িয়াখানায় থাকাকালীন চার্লি চারটি অন্য হাতির মৃত্যু দেখেছে। তার মধ্যে একটি ছিল হাতিটির বাচ্চা, যা এক মাসও বাঁচেনি। ২০১৯ সালে হাতিটি বিভিন্ন দুর্দশার লক্ষণ দেখাতে শুরু করে যা বন্দী প্রাণীদের মধ্যে একটি সাধারণ বিষয়।

দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় জীববৈচিত্র্য ইনস্টিটিউট জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়োজিত। শুরুতে তারা চার্লির সমস্যা অস্বীকার করে এবং বলে, এটি সার্কাস জীবন থেকে শেখা আচরণ এবং সেটি পুরোপুরি চলে যাবে না। তবে ইএমএস ফাউন্ডেশন জানায়, হাতিটির আচরণ “সঠিক” নয়।

মঙ্গলবার প্রাণী কল্যাণ সংস্থা ফোর পজ জানায়, চার্লির মুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রাণী কল্যাণের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফোর পজের প্রধান নির্বাহী জোসেফ ফাবিগান বলেন, তারা একসঙ্গে কাজ করে চার্লির একাকিত্ব শেষ করার চেষ্টা করছেন এবং তাকে সেটিকে নতুন প্রাকৃতিক বাসস্থানে উন্নতি করতে দেখেছেন।

চার্লির নতুন বাসস্থান ১০ হাজার হেক্টর আয়তনের একটি রিজার্ভ, যেখানে হাতিরা সফলভাবে পুনর্বাসন করা হয়। সেখানে, চার্লিকে পশুচিকিৎসক ও আচরণ বিশেষজ্ঞরা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন।

হাতিটি স্থানান্তর করার সময় নেতৃত্ব দেওয়া ড. আমির খলিল বলেছেন যে বন্দিদশার প্রভাব থাকলেও, “সফল হওয়ার সম্ভাবনা সব সময় থাকে।”

তিনি বলেন, নতুন পরিবেশে চার্লি কেমন মানিয়ে নিচ্ছে তা নিয়ে ইতিবাচক সংকেত দেখা যাচ্ছে এবং সে অন্য হাতিদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে।

ড. খালিল জানান, চার্লির সম্পূর্ণ স্বাধীন হতে কিছু সময় লাগবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সে বনে জন্মেছিল এবং প্রায় দুই বছর মায়ের সঙ্গে মুক্তভাবে ছিল।

ইএমএস ফাউন্ডেশনের পরিচালক মিশেল পিকওভার জানিয়েছেন, জোহানেসবার্গ চিড়িয়াখানায় তিনটি হাতি রয়েছে এবং তারা সেগুলোর মুক্তির জন্য মামলা করেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ২৫ হাজারের বেশি বন্য হাতি রয়েছে। কিন্তু পাচারকারীদের কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার হাতি অবৈধভাবে হত্যার শিকার হয় এবং মানুষের বসতি বিস্তারেও হাতিগুলোর বাসস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

Share this post

scroll to top