কোটাবিরোধী আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই

image-825428-1720394276.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট: আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকে কোটা বাতিলের আন্দোলন হচ্ছে। এ কোটা বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে বহাল হয়েছে। এখন পড়াশোনা বাদ দিয়ে ছেলেমেয়েরা আন্দোলন করছে। এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। রোববার সকালে গণভবনে যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মুক্তিযোদ্ধা ও নারীদের কোটা বাতিল করতে কোটাবিরোধী আন্দোলন হচ্ছে। এই কোটা কিন্তু একবার বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু ফলাফলটা কী? পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার হিসাব যদি দেখা যায়, দেখা যাবে-আগে কোটা থাকতে মেয়েরা যে পরিমাণ সুযোগ পেত, সেই পরিমাণ সুযোগ আর তারা পায়নি। এমনকি অনেক জেলা প্রত্যন্ত অঞ্চল, সেই অঞ্চলের মানুষগুলো কিন্তু বঞ্চিত থেকে গেছে।

তারাও চাকরি পাচ্ছে না। এটা হলো বাস্তবতা। তিনি বলেন, এইরকম বঞ্চিত হওয়ায় মামলা হয়েছে এবং হাইকোর্ট একটা রায় দিয়েছেন। হাইকোর্টের রায় আমরা সব সময় মেনে নিই। কিন্তু আমরা দেখলাম যে এখন কোটাবিরোধী আন্দোলন আবার গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে এখন কোটাবিরোধী আন্দোলন করছে। সেখানে মেয়েরাও আছে। এখানে আমার একটা প্রশ্ন, আগে যারা কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছিল, তারা পাবলিক সার্ভিস কমিশনে কতজন পরীক্ষা দিয়েছিল? এবং কতজন পাশ করেছিল? সেই হিসাবটা একটু বের করা দরকার। তারা দেখাক যে পরীক্ষা দিয়ে বেশি পাশ করেছিল। আর মেয়েরা বেশি পাশ করে বেশি চাকরি পেয়েছে কিনা? সেটা আগে তারা প্রমাণ করুক।

শেখ হাসিনা বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এভাবে আন্দোলন করা এটা তো সাবজুডিস। কারণ আমরা সরকারে থেকে এভাবে কিন্তু কোনো কথা বলতে পারি না। কারণ হাইকোর্ট রায় দিলে হাইকোর্ট থেকেই আবার আসতে হবে। কিন্তু আজকে আন্দোলনের নামে পড়াশোনার সময় নষ্ট করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
কেউ যাতে বঞ্চিত না থাকে, সেজন্য স্তরভেদে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সবার জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম দিয়েছি। এটা আমাদের ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে ছিল।
কারণ শুধু সরকারি চাকরিজীবীরা পেনশন পান, আর বাকিরা বঞ্চিত থাকেন। কেউ যেন বঞ্চিত না থাকেন-সেজন্য স্তরভেদে সর্বজনীন পেনশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, সর্বজনীন পেনশনের একেবারে নিম্নস্তরের জন্য বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি। তারা যদি ৫০০ টাকা রাখেন, তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে আরও ৫০০ টাকা দেওয়া হবে। কারণ তারাও যেন ভালোভাবে আজীবন পেনশন পান। যারা রাজনীতি করেন তারাও এখানে যুক্ত হতে পারেন। তাহলে বৃদ্ধ বয়সে নিশ্চয়তা পাবেন। বৃদ্ধ বয়সে কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। ছেলেমেয়ের ঘাড়ের বোঝা হবেন না। আমাদের যুব মহিলা লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মী সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হতে পারে। তারা নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য।

আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি : আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করে নির্বাচন করেছে। এর আগে ৯৬ সালে খালেদা জিয়া ভোটারবিহীন নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তাদের ক্ষমতায় রাখেনি। মাত্র দেড় মাসের মাথায় তিনি পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। সে সময় আমরা আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলাম।

আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের যুব মহিলা লীগের নেত্রীদের রাজপথে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। এমন কি আমাকে গ্রেফতারের সময় বাধা দিতে গিয়ে অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। যাদের অনেককে ছোট বাচ্চা ঘরে রেখেও কারাগারে যেতে হয়েছে। বিএনপির অস্ত্রধারী নেতাকর্মীরাও যুব মহিলা লীগের ওপর অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। তাদের সেই অত্যাচারের ছবি, চিত্র অনেক কিছুই এখনো রয়েছে। অত্যাচার-নির্যাতনকালে মা-বোন বলে তারা কোনো সমীহ করেনি।

সশস্ত্র বাহিনীকে বিশ্বমানের করে গড়ে তোলা হচ্ছে : বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে ঢাকা সেনানিবাসে প্রেসিডেন্টের গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) সদর দপ্তরে ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন। এ সময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক সশস্ত্র বাহিনীকে আরও উন্নত ও বৈশ্বিক মানদণ্ডে গড়ে তোলার জন্য তার সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে।

তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। আমার বাবার হাতে গড়া সশস্ত্র বাহিনীকে আরও উন্নত ও আন্তর্জাতিকমানের করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ ২১ বছর পর ৯৬ সালে তার সরকার গঠনের উল্লেখ করে বলেন, যে সশস্ত্র বাহিনী আমার বাবার হাতে গড়া তাকে আরও উন্নত করা, আন্তর্জাতিকমানসম্পন্ন করার সেই পদক্ষেপ আমি নিয়েছিলাম পাশাপাশি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নতি যাতে হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে পরিকল্পিত ভাবে কাজ করা শুরু করি।

একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে তার সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর আরও উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ৯৮ সালে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ এবং ওয়ার কলেজ’ আমি গড়ে তুলি। মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ৯৯ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট), আমর্ড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ তখন থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি ২০০০ সালে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীতে নারী অফিসার অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, জাতীয় ও এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সুনাম অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কালের পরিক্রমায় প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট একটি অত্যন্ত সুসংহত বাহিনী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। পিজিআর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খালেদ কামাল অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

 প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকালে আত্মাহুতি দানকারী পিজিআর সদস্যদের পরিবারের কাছে অনুষ্ঠানে অনুদান ও উপহার হস্তান্তর করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী পিজিআর সদর দপ্তরে পৌঁছালে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী সেখানে একটি গাছের চারাও রোপণ করেন।

Share this post

scroll to top