দর্পন ডেস্ক: ১৯৫০-এর দশকে খনিজ তেল পাওয়ার আগ পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত ছিল মূলত ব্রিটিশ সরকারের অধীনে কতগুলো অনুন্নত এলাকার সমষ্টি। তবে খনিজ তেল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পাল্টে যেতে শুরু করে দেশটি। উন্নত জীবনের আশায় দেশটির যে সকল অধিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডায় গিয়েছিল। তারা এখন পুনরায় আমিরাতে ফিরতে শুরু করেছেন। এছাড়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ কর, ক্রমবর্ধমান পণ্যের দাম ও ভাড়া বৃদ্ধি এবং সেসব দেশের কম সুযোগ সুবিধা অনেককে আমিরাতে ফিরে যেতে বাধ্য করছে।
নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েলথের গবেষণা প্রধান অ্যান্ড্রু অ্যামোয়েলস বলেন, কানাডায় উচ্চ করের কারণে প্রকৃতপক্ষে দুবাইতে নতুন অভিবাসনের সৃষ্টি হচ্ছে। কানাডায় করের হার সংযুক্ত আরব আমিরাতের তুলনায় অনেক বেশি যা সম্ভবত একটি কারণ। এছাড়াও, কানাডার শীতকাল খুব দীর্ঘ। শুধুমাত্র জলবায়ুর কারণে কানাডা থেকে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জলবায়ুও ভালো।
কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীদের আমিরাতমুখী হওয়ায় ব্যবসার জন্য ভালো দিক হিসেবে বিবেচনা করছেন ডেভেলপারস প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। এ বিষয়ে সামানা ডেভেলপারসের সিইও ইমরান ফারুক বলেন, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনটি আগে কখনো হয়নি।
কানাডা থেকে যে ধরণের বিপরীত মাইগ্রেশন চলছে, যা শীর্ষস্থানীয় অভিবাসন দেশগুলোর মধ্যে ছিল। এই বিপরীত অভিবাসন শুরু হয়েছে বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দা ও আইনশৃঙ্খলার কারণে।
ইমরান ফারুক আরও জানান, সামানার বিভিন্ন প্রকল্পে ৫ থেকে ৬ শতাংশ বিনিয়োগ করেছেন কানাডার নাগরিকরা।
দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আরব দেশগুলো থেকে অনেক সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী গত এক দশকে সবুজ চারণভূমির সন্ধানে এবং শক্তিশালী পাসপোর্ট পাওয়ার আশায় কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশে চলে যান। কিন্তু জনসাধারণের নিরাপত্তা, জীবনযাত্রার মান এবং প্রিয়জনকে দেখার জন্য কম সময়ের ফ্লাইট তাদেরকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফিরে যেতে উৎসাহিত করছে।
কানাডায় উচ্চহারে দ্রব্যমূল্য ও ভাড়া বৃদ্ধি
গত বছর বাসা ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে কানাডায় বসবাসের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে চাপের মধ্যে ফেলেছে।
দানিউব গ্রুপ এবং দানিউব প্রপার্টিজের চেয়ারম্যান রিজওয়ান সেজান বলেন, যারা সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাস করেননি এবং কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন তারা সেখানে থাকতে পারেন। তবে যারা সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে মাইগ্রেট করেছিলেন তারা সেখানে কিছু সময় কাটিয়ে ফিরে আসছেন।
তিনি বলেন, আমাদের অধিকাংশ ক্রেতারাই কানাডিয়ান। যারা ভারত বা পাকিস্তানের অধিবাসী এমনকি তারা একসময় সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকতেন। কানাডায় বসবাসকারীরা তাদের আয়ের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কর প্রদান করেন। কিন্তু আরব আমিরাতে কোনো আয়কর নেই। সংযুক্ত আরব আমিরাত তার বাসিন্দাদের যেভাবে আদর করে, অন্যান্য দেশ তা করে না। সুতরাং, পাসপোর্ট পাওয়ার পর লোকেরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের দিকে বেশি আকৃষ্ট হন বেশি। কারণ পুরো বিশ্বে সংযুক্ত আরব আমিরাতই একমাত্র দেশ যেখানে চা থেকে শুরু করে পেট্রল পর্যন্ত যে কোনো কিছু অর্ডারের কয়েক মিনিটের মধ্যে বাড়ির দরজায় পাওয়া যায়।
সামানা ডেভেলপারসের সিইও ইমরান ফারুক বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হিসেবে কিছুদিন আগ পর্যন্ত আমেরিকানরা পিছিয়ে ছিলেন। তবে দিনে দিনে তাদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া আগে ইউরোপ থেকে গোল্ডেন ভিসার চাহিদা বেশি ছিল। এখন আমেরিকা থেকেও গোল্ডেন ভিসার চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সিইও ইমরান ফারুক পরিশেষে যোগ করেন দিন যত যাচ্ছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা যেমন বাড়ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জমির দামও ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।