নিজস্ব প্রতিবেদক: দাকোপ উপজেলার হরিণটানা গ্রামে ধানক্ষেতে ইঁদুর ঢোকা ঠেকাতে বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতে রেখেছিলেন এক কৃষক। সবজি তুলতে গিয়ে সেই ফাঁদে জড়িয়ে গত ১৯ মার্চ ওই গ্রামের সঞ্জীব গাইনের মা চপলা গাইন ও স্ত্রী টুম্পা গাইনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। তাদের উদ্ধারে গিয়ে আহত হন সঞ্জীব গাইন নিজেও।
এর আগে কয়রা উপজেলার আমাদি ইউনিয়নের বেজাপাড়া গ্রামের রবিন মিস্ত্রি তাঁর ক্ষেতের ইঁদুর ঠেকাতে আইলে বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতে রেখেছিলেন। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর রাতে তাঁর ক্ষেতের আইল দিয়ে হেঁটে বিলে মাছ ধরতে যাচ্ছিলেন একই গ্রামের ইয়াছিন সানা ও আছাদুল। বিদ্যুৎস্পর্শে ইয়াছিন সানা নিহত ও আছাদুল গুরুতর আহত হন।
গত বছরের ২১ আগস্ট রাতে মাছের ঘেরে চোর ও ঘেরের আইলের সবজি রক্ষায় ইঁদুর ঠেকাতে গুনা তার ঝুলিয়ে বিদ্যুতের ফাঁদ পাতেন রূপসা উপজেলার আনন্দনগর গ্রামের জের আলী। অবৈধ এই ফাঁদে ছিল না কোনো সতর্কতামূলক চিহ্ন। সেই তারে জড়িয়ে মৃত্যু হয় গ্রামের ইকবাল শেখ নামের এক ঘের মালিক। তাঁকে খুঁজতে গিয়ে একইভাবে প্রাণ যায় তাঁর বড় ভাই মোদাচ্ছের শেখের।
শুধু এই তিন ঘটনাই নয়, মাঝে মধ্যেই খুলনার বিভিন্ন উপজেলায় ইঁদুর মারা বৈদ্যুতিক ফাঁদে মরছে মানুষ। কৃষকরা ধান, গম, সবজিসহ বিভিন্ন ক্ষেতে ইঁদুর ঠেকাতে গুনা তারে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে রাখছেন। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ এই ফাঁদ বন্ধে সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে ইঁদুর মারার ফাঁদ এখন মানুষ মারার ফাঁদ।
স্থানীয় লোকজন জানান, ঘেরের মাছ চুরি ঠেকানো, ঘেরের আইলের ফসল রক্ষা এবং কৃষি ক্ষেতের অন্যান্য ফসল রক্ষায় কৃষক জমির চারদিকে গুনা তার টানিয়ে তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেন। একটি তার মাটির খুব কাছাকাছি দেওয়া হয়, যাতে কোনো ইঁদুর ঢুকতে গেলে মারা যায়। আরেকটি তার ঝোলানো হয় কিছুটা ওপরে। সাধারণত বিদ্যুতের ফাঁদে কাউকে পাহারায় রাখতে হয়। কিংবা এমন কোনো চিহ্ন দিতে হয়, যা দেখে মানুষ বুঝতে পারে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাহারা বা চিহ্ন কোনো কিছুই থাকে না। এতে দুর্ঘটনা ঘটে বেশি।
পুলিশ জানায়, ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কয়রা উপজেলার গাজীনগর গ্রামে ইঁদুর মারা ফাঁদে বিদ্যুৎস্পর্শে খোকন মোড়ল নামে এক কৃষক নিহত হন। ২০২১ সালের ৯ অক্টোবর ডুমুরিয়া উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামে একইভাবে মারা যান কৃষক রবিউল ইসলাম মাহমুদ। নিজের ধানক্ষেতে ইঁদুর ঢোকা ঠেকাতে তিনি বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতেছিলেন। ২০২১ সালে তেরখাদা উপজেলার ইখড়ি গ্রামে নিজের পাতা ফাঁদে মৃত্যু হয় গৃহবধূ তাছলিমা আক্তারের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার অতিরিক্ত উপপরিচালক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, বৈদ্যুতিক ফাঁদ পাতা একেবারেই অবৈধ। বৈদ্যুতিক ফাঁদ ব্যবহারে কৃষকের অনুমতি নেই। এর পরও নির্দেশনা উপেক্ষা করে অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ এই ফাঁদ তৈরি করছে। এটা বন্ধ করা যাচ্ছে না।
দাকোপ থানার ওসি আবদুল হক বলেন, গত ১৯ মার্চ দুই মৃত্যুর ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি দেখার দায়িত্ব বিদ্যুৎ বিভাগের। তারা চাইলে পুলিশ সহযোগিতা করতে পারে।
খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জিল্লুর রহমান বলেন, গুনা তার ঝুলিয়ে তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কোনো অনুমতি নেই। এটা আইনের লঙ্ঘন।