ভোট দিন, উন্নয়ন শান্তি ও সমৃদ্ধি দেবো : শেখ হাসিনা

Untitled-15-copy-5.jpg

খুলনার দর্পণ ডেস্ক : আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইশতেহার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ইশতেহার ঘোষণা করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
তিনি এ সময় বলেন, আরও একবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন। আপনারা আমাদের ভোট দিন, আমরা আপনাদের উন্নয়ন, শান্তি ও সমৃদ্ধি দেবো।
ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ‘স্মার্ট সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে এই নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন-
দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা আবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারও আমরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে একটি বাস্তবায়নযোগ্য নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করেছি। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮-এর নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনাগুলির ধারাবাহিকতা দ্বাদশ নির্বাচনী ইশতেহারেও রক্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বাদশ নির্বাচনী ইশতেহার পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা থাকা সত্ত্বেও সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে সবসময়ই যে আমরা শতভাগ সফল হয়েছি, এমন দাবি করবো না। তবে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কথামালার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। আমরা যা বলি তা বাস্তবায়ন করি। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন তার প্রমাণ। তবে মাঝে-মধ্যে মনুষ্য-সৃষ্ট, প্রাকৃতিক এবং বৈশ্বিক বাধাবিপত্তি আমাদের চলার গতিপথকে মন্থর করেছে। ২০১৩-১৬ সময়ে বিএনপি-জামাতের অগ্নি-সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ বিস্তারের চেষ্টা মোকাবেলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হয়েছে। ২০০৯ সালের পর থেকে বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে ২০২০ সালে যখন বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়ে। এই মহামারি গোটা বিশ্বের অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে তছনছ করে দিয়েছিল।
আমাদের সরকার একবিংশ শতাব্দীর এই ভয়াবহ মহামারি সফলভাবে মোকাবেলা করার পাশাপাশি অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। তবে করোনাভাইরাস মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই প্রথমে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এ বছর ইজরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ। যেকোনো যুদ্ধ শুধু দুই প্রতিবেশির সমরাস্ত্র ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না।
যেমন : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সমরাস্ত্র যুদ্ধের পাশাপাশি ভয়াবহ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছে। অবরোধ-পাল্টা অবরোধের ফলে গোটা বিশ্বের অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা হয়েছে। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অধিক মূল্যে পণ্য ক্রয় ও আমদানি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। দেশি মুদ্রার মানের ব্যাপক অবনতিতে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দ্রব্যমূল্য এবং মানুষের জীবনযাপনের ওপর। বহুমুখী ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমরা অনেক সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি রোধ করতে পারিনি। এ সমস্যা শুধু আমাদের দেশের নয়, এ সমস্যা ধনী-গরিব সকল দেশের। তবে, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতা সম্প্রসারণসহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে নি¤œবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্ত মানুষের দুর্দশা লাঘবের। আমরা আশা করি, খুব শিগগিরই আমরা এই অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে পারব, ইনশাআল্লাহ।
নির্বাচন এলেই মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ এবং উন্নয়ন-বিরোধী একটি চক্র ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে সক্রিয় হয়ে ওঠে। নির্বাচনে কুটকৌশল অবলম্বন বা কারচুপির মাধ্যমে কিংবা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে তারা আটঘাট বেঁধে মাঠে নামে। সফল না হলে জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিশোধ স্পৃহায়। অগ্নি-সন্ত্রাস, যানবাহন পোড়ানো, বোমাবাজি, নাশকতা বা সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে ঘরবন্দী করতে চায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তার ওপর এবার তারা বিদেশ থেকেও কলকাঠি নাড়ছে। জনগণের ম্যান্ডেট পাবে না- এটা বুঝতে পেরে আগে থেকে এবার তারা সন্ত্রাসী কর্মকা-ে লিপ্ত হয়েছে। হরতাল-অবরোধের নামে যানবাহন পোড়ানো, মানুষ হত্যা, রেল লাইন উপড়ে ফেলাসহ বিভিন্ন নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে। মা ও শিশুর অগ্নিদগ্ধ লাশ সকলের বিবেককে প্রচ-ভাবে নাড়া দিয়েছে। এই ধরনের হীন কাজ আর সহ্য করা যায় না। জনগণের সাড়া না পেয়ে ভাড়াটে বাহিনী দিয়ে এসব নাশকতা চালিয়ে জান-মালের ক্ষতি করছে। সন্ত্রাস করে নির্বাচন বানচাল করার স্বপ্ন-সাধ কোনোদিনই তাদের পূরণ হতে দেবে না এদেশের জনগণ। ২০১৩-২০১৬ সময়ে যেমন আপনারা ওদের প্রতিহত করেছিলেন; আসুন, এবারও সম্মিলিতভাবে ওদের প্রতিহত করি। স্বাধীনতাবিরোধী, উন্নয়নবিরোধী এই শকুনের দল আর কোনো দিন যাতে বিষময় দন্ত-নখর বসিয়ে বাংলাদেশকে ক্ষতবিক্ষত করতে না পারে- আসুন, এই বিজয়ের মাসে এ শপথ নেই।
বিগত ১৫ বছরের সরকার পরিচালনার পথ-পরিক্রমায় যা কিছু ভুলত্রুটি তার দায়ভার আমাদের। সাফল্যের কৃতিত্ব আপনাদের। আমাদের ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমরা কথা দিচ্ছি, অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে আপনাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভবিষ্যৎ কর্মকা- পরিচালনা করবো। বাবা-মা, ভাই, আত্মীয়-স্বজন সকলকে হারিয়ে আমি রাজনীতিতে এসেছি শুধু আমার বাবা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজ শেষ করে এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। এ কাজ করতে গিয়ে আমাকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে বার বার। কিন্তু বাবার কথা ভেবে, আপনাদের কথা ভেবে আমি পিছ-পা হইনি। যতদিন আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখেন, সুস্থ রাখেন, ততদিন যা কর্তব্য হিসেবে আমি গ্রহণ করেছি, সেখান থেকে সরে আসবো না। আপনাদের সেবক হিসেবে কাজ করার মধ্য দিয়েই আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হতে যাচ্ছে দেশ। এই উত্তরণ যেমন একদিকে সম্মানের, অন্যদিকে বিশাল চ্যালেঞ্জেরও। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সক্ষমতা থাকতে হবে। একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে। মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়, মাতৃভূমির স্বাধীনতা থেকে শুরু করে এ দেশের যা কিছু মহৎ অর্জন, তা এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরেই ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠিত হবে। আসুন, আরও একবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন। আপনারা আমাদের ভোট দিন, আমরা আপনাদের উন্নয়ন, শান্তি ও সমৃদ্ধি দেবো।
ইশতেহারে অগ্রাধিকার পেয়েছে ১১ বিষয়ে :
আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারে স্লোগান- ‘স্মার্ট বাংলাদেশ : উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’।
ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মতো ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দিচ্ছে দলটি। এবার টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের জন্য ভোটের লড়াইয়ে নামার অনেক আগেই নির্বাচনী স্লোগান ঠিক করে ফেলেছে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা এখন দেশবাসীকে দেখাচ্ছেন ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশে পৌঁছে দেয়ার স্বপ্ন। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে ইশতেহারে এবার যেসব বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দিচ্ছে আওয়ামী লীগ তা হলো :
১. দ্রব্যমূল্য সকলের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। ২. কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। ৩. আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। ৪. লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। ৫. দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো। ৬. ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ৭. নি¤œ আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা। ৮. সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সকলকে যুক্ত করা। ৯. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। ১০. সাম্প্রদায়িকতা এবং সকল ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা। ১১. সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top