খুলনা-মোংলা বাণিজ্যিক রেল চালু ১ জানুয়ারি : খুলনা-যশোর-মোংলা রুটে চলবে ৩ জোড়া যাত্রীবাহি ট্রেন

Untitled-1-copy-4.jpg

খুলনার দর্পণ ডেস্ক : মোংলা বন্দরের সাথে রেল যোগাযোগ উদ্বোধনের পর বাণিজ্যিকভাবে যাত্রীবাহি রেল চলাচল শুরু হচ্ছে। সম্ভাব্য সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি। যাত্রী সুবিধার কথা বিবেচনা করে খুলনা-যশোর-মোংলা রুটে তিন জোড়া যাত্রীবাহি ট্রেন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত ২ নভেম্বর খুলনা-মোংলা নতুন সেকশন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের যোগাযোগ খাতে আওয়ামী লীগ সরকার মাত্র এক দশকের মধ্যে দেশজুড়ে বিশাল রেল নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছে।
রেলভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, খুলনা-যশোর-মোংলা রুটে নতুন যাত্রীবাহি ট্রেন সার্ভিস চালু হতে যাচ্ছে। এ পথে কমিউটার ট্রেন চালানো হবে। ট্রেনগুলোর নম্বর হবে ১১৩-১১৮। এর মধ্যে খুলনা-যশোর পথে একজোড়া ও যশোর-মোংলা পথে দুই জোড়া ট্রেন চলাচল করবে।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল (রাজশাহী) জোনের ব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানান, ট্রেনের সময়সূচি অনুযায়ী খুলনা থেকে ট্রেন ছাড়বে সকাল ৬টায়, যশোর পৌঁছাবে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে, যশোর থেকে ট্রেন ছাড়বে সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে এবং মোংলা পৌঁছাবে সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে।
মোংলা থেকে ট্রেন ছাড়বে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে, ট্রেনটি যশোর স্টেশনে পৌঁছাবে দুপুর ১টা ৫ মিনিটে, সেখান থেকে ১টা ৫৫ মিনিটে ট্রেন ছেড়ে মোংলা পৌঁছাবে বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে।
অন্যদিকে মোংলা থেকে ট্রেন ছাড়বে বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে, যশোর পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে, যশোর থেকে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে ট্রেন ছেড়ে খুলনা পৌঁছাবে রাত ৯টায়।
যশোর থেকে মোংলা পর্যন্ত এ ট্রেনের ভাড়া ধরা হয়েছে, শোভন সাধারণ ১২৫ টাকা, শোভন চেয়ার ১৫০ টাকা ও প্রথম শ্রেণির সিট ২০০ টাকা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সূত্র জানায়, আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছয়টি সরাসরি রেল যোগাযোগ রয়েছে।
ভারতীয় রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের সংযোগের জন্য নয়টি ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট (বর্ডার পয়েন্ট) রয়েছে। এই রুটের মধ্যে বর্তমানে খোলা আছে ছয়টি, কিন্তু ট্রেনগুলো পাঁচটিতে চলাচল করে, একটি রুটে এখনও চলাচল শুরু হয়নি। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত রেল যোগাযোগের জন্য একটি নতুন ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আঞ্চলিক রেলপথ ও আন্তঃদেশীয় রেলপথের মধ্যে একটি দর্শন। এটি ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের একটি অংশ। ঢাকা-কলকাতা রুটে এই ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট (বর্ডার পয়েন্ট) দিয়ে আন্তর্জাতিক মালবাহি ট্রেনসহ দুই দেশের মধ্যে যাত্রীবাহি ট্রেন “মৈত্রী এক্সপ্রেস” চলাচল করে। যাত্রীবাহি ট্রেন “বন্ধন এক্সপ্রেস” মালবাহি ট্রেনের সাথে খুলনা-বেনাপোল-কলকাতা রুটের বেনাপোল (বাংলাদেশ)-পেট্রাপোল (ভারত) ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট ব্যবহার করে। রোহনপুর (বাংলাদেশ)-সিঙ্গাবাদ (ভারত) ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টটিও ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের একটি অংশ। এই রুট দিয়ে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে মালবাহি ট্রেন চলাচল করে। বিরল (বাংলাদেশ)-রাধিকাপুর (ভারত) ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টটি ২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় চালু করা হয়েছিল। বর্তমানে, এই ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টটি বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপালের মধ্য দিয়ে মালবাহি ট্রেন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত। চিলাহাটি (বাংলাদেশ)-হলদিবাড়ি (ভারত) ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টটি ১৯৬৫ সালে বন্ধ হয়ে যায়। ২০২১ সালে ১ আগস্ট এ রুটে মালবাহি ট্রেন চলাচল আবার শুরু হয়। বর্তমানে এই রুট দিয়ে মিতালী এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত চলছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চলতি বছরের ১ নভেম্বর আখাউড়া (বাংলাদেশ)-আগরতলা (ভারত) রেলপথের উদ্বোধন করেন। তবে এ রুটে এখনও ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। শাহবাজপুর (বাংলাদেশ)-মহিশাসন (ভারত) রুটের ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট, যা ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের একটি অংশ, ৭ জুলাই ২০০২-এ বন্ধ হয়ে যায়। কুলাউড়া (বাংলাদেশ) থেকে শাহবাজপুর (ভারত) পর্যন্ত লাইন স্থাপন ও ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট খোলার কাজ চলছে, কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হলেও কাজ শেষ হয়নি। বুড়িমারী (বাংলাদেশ)-চেংরাবান্ধা (ভারত) ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টটি ১৯৭১ সালে বন্ধ হয়ে যায়। মোগলহাট (বাংলাদেশ)-গীতলদহ (ভারত) ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টে লালমনিরহাট-মোগলহাট সেকশনটি ১৯৯৬ সালে বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৮ সালে বন্যায় মোগলহাট-গীতলদহ রুটে রেলওয়ে ব্রিজ ধ্বংসের কারণে ভারতের সাথে এই রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ কামরুল আহসান গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা বন্ধ ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টগুলো খুলে দেয়ার কাজ হাতে নিয়েছি। আগামী দুই বছরের মধ্যে কুলাউড়া-শাহবাজপুর ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট (বর্ডার পয়েন্ট) চালু করা হবে। বাকি দুটি ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট খুলতে সময় লাগবে। ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বাড়ানো হবে।” এদিকে, ফেনী (বাংলাদেশ)-বিলোনিয়া (ভারত) রুটে আরেকটি নতুন ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট খোলার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ভারতীয় অনুদানে ফেনী-বিলোনিয়া রেললাইন পুনর্নির্মাণের জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। দেশের সব স্থলবন্দর দিয়ে রাস্তা আছে, কিন্তু আন্তঃদেশীয় যোগাযোগের জন্য সেগুলোর অবস্থা যথেষ্ট ভালো নয়।
সূত্র জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আখাউড়া-আগরতলা, বেনাপোল-কলকাতা এবং তামাবিল-ডাউকি-শিলং-গুয়াহাটি রুটে বাস চলাচল করে। বুড়িমারী-শিলিগুড়ি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে সরাসরি বাস যেতে দেয়া হচ্ছে না। তবে ভারতের শিলিগুড়ি যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের বুড়িমারী সীমান্ত দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা রয়েছে। দুদেশের মধ্যে রেলপথে উভয় দেশের যাত্রী পরিবহণ হলেও মালামাল পরিবহণের ক্ষেত্রে শুধু ভারত থেকে মালবাহি ট্রেনযোগে বাংলাদেশে পণ্য আসে। বাংলাদেশে পণ্য খালাস শেষে খালি কনটেইনার ভারতে ফিরে যায়। দুদেশের মধ্যে ট্রেনযোগে পণ্য আমদানি-রপ্তানি শুরু করতে উভয় দেশের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। আগামী বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকেও পণ্যবাহি ট্রেন যাবে ভারতে।
রেলওয়ে অপারেশন দপ্তর সূত্র বলছে, ভারত থেকে পণ্যবাহি ট্রেন বাংলাদেশে আসায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০০ কোটি টাকা আয় করেছে বাংলাদেশ রেল। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ আয় আরও ১০ কোটি বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্ধ থাকা বাকি রুট চালু হলে পুরোদমে রেলযোগে পণ্য আমদানি-রপ্তানি শুরু হবে। এতে বছরে ৫০০ থেকে ২০০ কোটি টাকা আয় হবে বাংলাদেশ রেলের। বর্তমানে রেলে যাত্রী পরিবহণ করে বছরে আয় করে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top