রাবি শিক্ষক তাহের হত্যা: দুই আসামির ফাঁসি যেকোনো দিন

1688818080.U.jpg

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট …….
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলার দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হতে আর কোনো বাধা নেই। সকল আইনি প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।

তাই জেল কোড অনুযায়ী অভিযুক্ত দুই আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে জুলাই মাসেই। কারাবিধি অনুযায়ী আগামী ২৫ জুলাই থেকে আগামী ১ আগস্টের মধ্যে যেকোনো দিন রাতেই ফাঁসি কার্যকর করা যাবে। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন নাকচের চিঠি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে পৌঁছায় এর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বর্তমানে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে বন্দি আছেন- রাবির ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিন এবং নিহত ড. এস তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম।

২০০৮ সালে নিম্ন আদালতে মামলার রায় ঘোষণার পর থেকেই রাবি শিক্ষক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় ফাঁসির দুই আসামি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।

রায় ও উচ্চাদলত থেকে সর্বশেষ আদেশের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এ দুই আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন। ঈদের আগেই রাষ্ট্রপতি এই প্রাণ ভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেন। তার কাগজপত্র গত বুধবার (৫ জুলাই) রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে পৌঁছায়। তাই শেষ এই প্রক্রিয়ায় আবেদন নাকচের পর এই দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরে আর কোনো আইনি বাধা নেই। রাজশাহী কারা কর্তৃপক্ষ এই দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করতে পারবেন।

তবে দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর প্রশ্নে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নিজাম উদ্দিন জানান, রাবি শিক্ষক হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা কারাবিধি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন। তবে সেই আবেদন নাকচ হয়ে গেছে। তার চিঠি ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ৫ জুলাই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে এসে পৌঁছেছে। এখন কারাবিধি মেনেই তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে।

এদিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের উপ-মহাপরিদশক (ডিআইজি প্রিজন) কামাল হোসেন বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ায় ফাঁসি কার্যকরে আর কোনো আইনি বাধা রইলো না। এখন জেল কোড অনুযায়ী ফাঁসি কার্যকরের ধাপগুলো এক এক করে বাস্তবায়ন করা হবে। জেল কোডে আদেশপ্রাপ্তির ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে বিধান রয়েছে। এর আগে দণ্ডিতদের শেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও তাদের সঙ্গে পরিবার এবং স্বজনদের শেষ দেখা করার সুযোগ দেওয়ারও বিধান আছে। ’

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের দায়িত্বে থাকা থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাবিহা সুলতানা জানান, তারা পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করে ফাঁসির রায় কার্যকরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

এর আগে গত ২ মার্চ ড. এস তাহের হত্যা মামলায় এই দুজনের ফাঁসি এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। নিম্ন আদালতে দুজনের মৃত্যুদণ্ডের যে রায় এসেছিল তাই বহাল থাকে আপিল বিভাগে, খারিজ হয় রিভিউ আবেদনও।

এজন্য প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না তাদের কাছে। তবে এরপরও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় দণ্ডিত এই দুজনের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে গত ৭ মে ফের রিট আবেদন করেন তাদের স্বজনরা। কিন্তু উত্থাপিত হয়নি মর্মে পরবর্তীতে সেই আবেদনও খারিজ করে দেন বিচারপতি মো. জাফর আহমেদ ও মো. বশির উল্ল্যার হাইকোর্ট বেঞ্চ। মূলত এর পরই কারা বিধি অনুযায়ী ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে এই ঘটনায় দোষ স্বীকার করে নিজেদের প্রাণ ভিক্ষার আবেদন জানান।

২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। ৩ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন।

দণ্ডিতরা হলেন- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. এস তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের সমন্ধি আব্দুস সালাম।

খালাসপ্রাপ্ত চার্জশিটভুক্ত দুই আসামি হলেন-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী। ২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল রাবি অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন করেন হাইকোর্ট।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top