মুন-মানহা এজেন্ট ব্যাংকিং বন্ধ: অর্থ লোপাট, নাকি যান্ত্রিক ত্রুটি

444-2302151139.jpg

নিজস্ব প্রতিবেদক…….

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের খুলনা নগরীর আড়ংঘাটা বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার (এজেন্ট: মুন-মানহা) গ্রাহকের প্রায় ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে শাখা প্রধান সোহেল শেখ আত্মগোপন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন এজেন্ট ব্যাংকের কয়েক হাজার গ্রাহক। লোভনীয় অফারের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে কয়েক কোটি টাকা হারানোর আশংকায় পড়েছেন গ্রাহকরা।

ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে এজেন্ট ব্যাংকের ওই শাখায় ‘বিশেষ বিজ্ঞপ্তি’র নামে নোটিশ ঝুলিয়েছে। যাতে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উল্লিখিত আউটলেটের লেনদেন সাময়িক বন্ধ আছে- বলে উল্লেখ করে পার্শ্ববর্তী আউটলেটে লেনদেন করতে বলা হয়েছে। সিনিয়র সেলস ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম নোটিশের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে নোটিশের সঙ্গে ঘটনার মিল না থাকার বিষয়ে তিনি ‘কর্তৃপক্ষের নির্দেশ’ বলে এড়িয়ে যান।

নগরীর আড়ংঘাটা থানাধীন তেলিগাতী বুচিতলা গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে সোহেল শেখ ২০১৮ সালে আড়ংঘাটা বাজারে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করেন। প্রতিষ্ঠানে অফিস কর্মচারীসহ বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক মাঠকর্মী নিয়োগের মাধ্যমে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আদলে ৬ বছরে দ্বিগুণ ও ১০ বছরে তিনগুণ মুনাফা দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে মেয়াদী আমানত (এফডিআর), মাসিক আমানত (এমএসএস) এবং ক্ষুদ্র পরিসরে ঋণ বিতরণ কর্মসূচির কাজ শুরু করেন সোহেল। বর্তমানে এজেন্ট ব্যাংকে কয়েক হাজার গ্রাহক রয়েছে। এছাড়া এ পর্যন্ত কয়েকশত ব্যক্তি বিভিন্ন মেয়াদে স্থায়ী আমানত হিসাবে লাখ টাকা জমা করেছেন। কিন্তু সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানের প্রধান সোহেল শেখ, ম্যানেজার মো. হান্নান, টেইলার পলি বেগম আত্মগোপনে থাকায় আড়ংঘাটা ডাচ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার এফডিআর কয়েক হাজার গ্রাহক তাদের আমানত ও সঞ্চয়ের প্রায় ২ কোটিরও বেশি টাকা নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছেন।

মুক্তি বেগম নামে এক ভুক্তভোগী গ্রাহক বলেন, ‘লাভের আশায় আমার সঞ্চিত অর্থ গচ্ছিত রেখেছিলাম ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায়। মাসিক ১০০০ টাকা লাভ দেওয়ার কথা বলে সোহেল আমার থেকে ২ লাখ টাকা নেন। টাকার গ্যারান্টি স্বরূপ সোহেলের স্বাক্ষরিত দুইশত টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তি করে দেওয়া হয়।’ অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে তিনি এখন শঙ্কায় আছেন।

কামাল হোসেন জানান, দীর্ঘ সময় ধরে সোহেল শেখ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ার মধ্য দিয়ে কার্যক্রম, স্থানীয় কর্মী নিয়োগ এবং ডাচ্ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা পরিচালনা করে এলাকার মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়। বাজারের ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় বিনিয়োগের পাশাপাশি তার প্রতিষ্ঠানগুলোতে লাখ লাখ টাকা গচ্ছিত রাখেন। এলাকার ক্ষুদ্র দোকানদার, ব্যবসায়ী, ভ্যান-চালক, শ্রমজীবীসহ নিম্ন আয়ের লোকজন তাদের গচ্ছিত ও সঞ্চয়কৃত টাকার নিরাপদ স্থান হিসেবে এখানে বিনিয়োগ করেন। এখন সোহেল শেখের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হতে চলেছেন গ্রাহকরা।

ডাচ-বাংলা এজেন্ট ব্যাংক খুলনার এরিয়া ম্যানেজার মো. সোহেল রানা গত ১১ নভেম্বর ডাচ বাংলা এজেন্ট ব্যাংক আড়ংঘাটা বাজার শাখা পরিদর্শন করেন। তিনি এফডিআর বাবদ নগদ টাকা নিয়ে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে জমা না করার জন্য এজেন্ট সোহেল শেখকে কারণ দর্শানের জন্য ৭ দিনের সময় দিয়ে সতর্কীকরণ নোটিশ দিয়ে যান। তবে সোহেলের অনুপস্থিতে নোটিশটি প্রতিষ্ঠানের সামনে টানানো হয়। সোহেল শেখ পলাতক থাকায় কর্তৃপক্ষ এজেন্ট ব্যাংকের এই শাখা বন্ধ করে দিয়েছেন বলে গ্রাহকরা জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আড়ংঘাটা এজেন্ট ব্যাংকিং এর কর্ণধর সোহেল শেখের ব্যবহৃত ফোনে একাধিকবার কল করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে এজেন্ট ব্যাংকের তদারকিতে থাকা ব্যাংকটির এরিয়া ম্যানেজার মো. সোহেল রানা বলেন, ‘আমি শাখা ভিজিট করে সকল ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন করেছি। উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। অনিয়ম ধরা পড়ার পরে সোহেল শেখকে নোটিশ পাঠিয়েছিলাম এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে সোহেল শেখ পলাতক থাকায় পরবর্তীতে কী হয়েছে, সেটি তার জানা নেই।’

এ বিষয়ে আড়ংঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু দিন আগে জেনেছি। তবে এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top