প্রশাসনিক অনুমোদন পেলো শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

Khulna-1-2302150742.jpg

নিজস্ব প্রতিবেদক……

অবশেষে প্রশাসনিক অনুমোদন পেলো শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে জমি নিয়ে নানান জটিলতা শেষে মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি পত্রে এ অনুমোদন প্রদান করা হয়।

অনুমোদনের ফলে ৫০ একর জমিতেই নির্মিত হচ্ছে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস।

জমি অধিগ্রহণের পরেই অবকাঠামো নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেহেদী নেওয়াজ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট ও ডেন্টাল কলেজগুলোকে অধিভুক্ত করা হয়েছে। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম চলবে। সে লক্ষ্যে ডিন, শিক্ষকসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রে জমি অধি গ্রহণের জন্য ৪৫৬ কোটি ২ লাখ ২৩ হাজার ১৮৪ টাকা ৬১ পয়সা অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের পরেই শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনায় একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন খুলনাবাসী। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুলনা সফরের আগে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানানো হয়। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠিও দেন জেলা প্রশাসক (বর্তমানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন অধিশাখা এবং নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব: ক্রয় ও সংগ্রহ অধিশাখা) মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। পরে জেলা প্রশাসক সম্মেলনেও এর যৌক্তিকতা তুলে ধরেন তিনি। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর খুলনায় একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়ে সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী।

২০২০ সালের ১৩ জুলাই মন্ত্রিসভায় শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইন, খুলনা-২০২০’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। পরের বছর ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বিলটি সংসদে পাস হয়। এরপর এই মেডিক্যালের প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। গত বছরের ৩ মে তিনি উপাচার্য পদে যোগদান করেন। এরপর থেকে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানিক কার্যক্রম।

খুলনার নিরালা আবাসিক এলাকায় একটি ভাড়া করা ভবনে শুরু হয় প্রশাসনিক কার্যালয়। সেখানে আলাদা কয়েকটি কক্ষে চলে প্রশাসনিক কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের ৭ মাস পর শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় খুলনার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার জন্য প্রকল্প পরিচালক ও উপ-প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়।

খুলনা মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মেহেদী নেওয়াজকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, আর উপ-প্রকল্প পরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয় শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. নুরুল মোমেনকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক ও খুলনা মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মো. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, খুলনা-মোংলা রেললাইন সংলগ্ন মাথাভাঙ্গা মৌজায় প্রাথমিকভাবে জমি বাছাই করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য সেখানে ১০০ একর জমির প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। সেই প্রস্তাবিত জমি অধিগ্রহণের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক অনুমোদন এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া গেছে। ফলে জমি অধিগ্রহণের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

তিনি আরও বলেন, কৃষি জমি ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকায় ৫০ একর জমি ব্যবহারে নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট স্থানে মাটির গুণগতমানের কারণে ওই স্থানে ৬ তলার অধিক উচ্চতর ভবন নির্মাণ ঝুঁকিপূর্ণ মর্মে সয়েল টেস্টিং রিপোর্ট পাওয়া গেছে। নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ ৬ তলা করে প্রতিটি ভবন নির্মাণ করা এবং ময়ূর খালকে সংরক্ষণের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে দৃষ্টিনন্দন জলাধার সৃষ্টি করার জন্য কমপক্ষে ৭০ একর ভূমি বরাদ্দ প্রয়োজন। উঁচু ভবন করা না গেলে ভবনের পরিমাণ বাড়াতে হবে। তখন জমি প্রয়োজন বেশি হবে। কিন্তু উঁচু ভবন করার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা গেলে সেখানে বহুতল ভবন করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা। তাদের নির্দেশনা মেনে সেখানে বহুতল ভবনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ফলে বহুতল ভবন নির্মাণ করা গেলে নির্ধারিত ৫০ একরেই পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস করা সম্ভব হবে।

তিনি আরও জানান, তিনটি ধাপে মোট ৪ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হবে পুরো অবকাঠামো। প্রাথমিক ধাপে ২ বছরের মধ্যে একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন ও হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে ৪ বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। শেষ ধাপে এক বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গতা পাবে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top