মানহীন শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত বেকার বাড়ছে: রাষ্ট্রপতি

1675174410.president.jpg

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট…..
মানহীন শিক্ষায় দেশে উচ্চ শিক্ষিত বেকার বাড়ছে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির নামে সার্টিফিকেট বিতরণ করছে, গুদাম থেকে মাল বের করার মতো গ্রাজুয়েট তৈরির কারখানা খুলে বসেছে।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রথম সমাবর্তনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, যারা ব্যবসায় করতে চান বাংলাদেশে অনেক সম্ভাবনার খাত রয়েছে, সেখানে গিয়ে ব্যবসায় করতে পারেন। কিন্তু শিক্ষাকে নিয়ে ব্যবসায় করার মন-মানসিকতা পরিহার করাই সবার জন্য মঙ্গল।

তিনি বলেন, পত্র-পত্রিকা খুললেই দেখা যায় কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির নামে সার্টিফিকেট বিতরণ করে যাচ্ছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট তৈরির কারখানা খুলে বসেছে। অনেকটা গুদাম থেকে মাল বের করার মতো। প্রথমে আসবে, প্রথমে বের হবে।

আবদুল হামিদ বলেন, শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখল বা কর্মসংস্থানের জন্য কতটুকু যোগ্যতা অর্জন করল তার কোনো বালাই নাই। ফলে উচ্চ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য অন্যতম বড় একটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা। জাতির উন্নয়ন, উন্নত সমাজ গঠন ও বিশ্বমানের গ্রাজুয়েট তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুণগত মান, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। গুণগত মান ছাড়া উচ্চশিক্ষা মূল্যহীন। তাই উচ্চশিক্ষা যাতে কোনোভাবেই সার্টিফিকেট সর্বস্ব না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষার নামে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত না করার নির্দেশ দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশে বর্তমানে শতাধিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। শিক্ষা বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা বিস্তারে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তাদের এ উদ্যোগের ফলে আমাদের তরুণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা চাই না যে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচালিত হোক। আবার এটাও চাইনা যে শিক্ষাকে পণ্য বিবেচনা করে শিক্ষার নামে বিশ্ববিদ্যালয়কে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করুক।

তিনি আরও বলেন, বাবা-মা, অভিভাবক অনেক কষ্ট করেন। এমনকি শেষ সহায় সম্বল দিয়ে ছেলেমেয়েদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। যাতে তারা ভবিষ্যতে ভালো থাকতে পারে। তাদের সন্তানেরা যাতে সম্মানের সঙ্গে ও অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হয়ে বাঁচতে পারে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়।

আবদুল হামিদ বলেন, শিক্ষার সঙ্গে কর্মের সংযোগ ঘটাতে না পারলে ভবিষ্যতে এমন একটা সময় আসবে হয়তোবা শিক্ষার্থীর অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে বন্ধ করে দিতে হতে পারে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের রাষ্ট্রপতি বলেন, এ খাতের উদ্যোক্তাদের প্রতি আমার অনুরোধ আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত না করে জ্ঞান বিতরণ ও একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী গ্রেজুয়েট তৈরির প্রতিষ্ঠানে পরিণত করুন।

প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা বিস্তারের কোনো বিকল্প নেই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ন্যানো টেকনোলজি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হবে।

নিয়ম মানার ওপর গুরুত্বারোপ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে আইন বিধি-বিধান মেনে চালাবেন। শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতের পাশাপাশি নিজস্ব ক্যাম্পাস ও অবকাঠামো নির্মাণেও পদক্ষেপ নিতে হবে। নিজেদের ইচ্ছে আর সুবিধামতো বিশ্ববিদ্যালয় চালানো যাবে না।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উদ্দেশে আবদুল হামিদ বলেন, আপনারা উন্নত জাতি তৈরির মহান কারিগর। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সবাই কৃতী ও সেরা শিক্ষার্থী ছিলেন। আপনারা সমাজের সাধারণ মানুষের কাছে নেতৃস্থানীয় ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। আপনাদের হতে হবে নৈতিকভাবে বলিষ্ঠ চরিত্রের অধিকারী, নিরপেক্ষ, অকুতোভয় এবং সত্যবাদী। যুগোপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে আজকের তরুণ প্রজন্মকে। এ গুরুদায়িত্ব পালনে নিশ্চয়ই আপনারা সক্ষম বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

অভিভাবক উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, সন্তানদের প্রতি যত্নশীল হোন। এ সন্তানরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। সব সময় মনে রাখবেন যে, অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমাদের রয়েছে গর্ব করার মতো ইতিহাস-ঐতিহ্য। এ গৌরব সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার।

শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বইয়ের বাইরে জ্ঞান অর্জনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, শুধু পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না, পাঠ্য বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে বহির্জগতের জ্ঞান ভাণ্ডার থেকে জ্ঞান আহরণ করতে হবে। নিজেকে কর্মবীর ও জ্ঞানী করে তোলাই হবে শিক্ষার মূল লক্ষ্য।

তিনি আরও বলেন, উচ্চ চিন্তা ও সহজ জীবনাচরণ তোমাদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। সদাচরণ আর সদালাপ হচ্ছে শিক্ষা জীবনের ভূষণ। তোমরা সমাজের সকল অন্ধকার দূর করে আলোর পথে এগিয়ে যাও। তোমাদের নতুন জীবন হোক আলোকময়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, শিক্ষা উপমন্ত্রী জনাব মহিবুল হাসান চৌধুরী, সমাবর্তন বক্তা নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মি. কৈলাশ সত্যার্থী, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিস সারাফাত, উপাচার্য প্রফেসর ড. এইচএম জহিরুল হক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. শেখ মামুন খালেদ ও উপদেষ্টা প্রফেসর ড. রিদওয়ানুল হক।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top