শুষ্ক মৌসুমে পানি সরবরাহ বাড়াবে খুলনা ওয়াসা

khulna-wasa-20221228192625.webp

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট…
চার মাস আগে গ্রাহক পর্যায়ে পানির দাম সর্বোচ্চ ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে খুলনা ওয়াসা। তবে কাঙ্ক্ষিত গ্রাহক সেবা দিতে পারেনি সংস্থাটি। ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে দুর্গন্ধ আর ময়লা থাকছে—এমন অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদের।

শুধু তাই নয়; ঠিকমতো পানি না পাওয়া, ভৌতিক বিল করার অভিযোগও উঠেছে সংস্থাটির বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের মধ্যেই আলোচনায় উঠে আসছে শুষ্ক মৌসুমে ওয়াসার পানির লবণাক্ততার বিষয়টিও। শুষ্ক মৌসুমে খুলনা ওয়াসার পানি থাকে লবণাক্ত, যা ব্যবহারের অনুপযোগী বলে দাবি গ্রাহকদের।

তবে খুলনা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, গ্রাহক সেবার মান আগের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি সরবরাহ আরও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানো হবে। লবণাক্ততা কমানোর জন্যও চেষ্টা করা হচ্ছে।

পানি সরবরাহের পাশাপাশি পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সংস্থাটি। দুই হাজার ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ চলমান। যা ২০২৫ সালে শেষ হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে খুলনা শহরের ১৫ লাখ মানুষের প্রতিদিন গড় পানির চাহিদা ২৪ কোটি লিটার। বর্তমানে খুলনা ওয়াসা ২১ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করছে। আসন্ন শুষ্ক মৌসুমে এই চাহিদা আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এই সময়ে মধুমতির পানি অতিমাত্রায় লবণাক্ত হয়ে থাকে। যা পরিশোধন করার পরও লবণাক্ত থেকে যায়।

খুলনা মহানগরীর টুটপাড়া এলাকার বাসিন্দা সিলভি হারুন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এলোমেলো খুলনা ওয়াসা। আজ পর্যন্ত একটি সেবাও সঠিকভাবে দিতে পারেনি। এজন্য আমরা মেয়র ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছি।’

তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে নলকূপগুলোতে পানি ওঠার কারণে নগরীতে পানির চাহিদা তেমন এটা থাকে না। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় নির্ভর করতে হয় ওয়াসার পানির ওপর। কিন্তু ওয়াসার পানি থাকে লবণাক্ত। যা ব্যবহার করা যায় না।

নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তালতলা রোডের বাসিন্দা তপন কুমার দাস জানান, প্রতি মাসে তার ২৫০-৩০০ টাকার বিল হয়। কিন্তু নভেম্বরে বিল আসে এক হাজার ১৩৬ টাকা। অফিসে গিয়ে জানতে পারেন, বিগত কয়েক মাস ০, ১ ইউনিট করে বিল করেছে। সেটা সমন্বয় করতে নভেম্বরে একসঙ্গে বেশি বিল করেছে। পরে সংশোধন করে তাকে ২৩৮ টাকার বিল দেওয়া হয়েছে। এমন অভিযোগ ওয়াসার আঞ্চলিক কার্যালয়ে রয়েছে শত শত।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, খুলনা ওয়াসার পানির বিলের জন্য কোনো রিডার আছে বলে মনে হয় না। মিটার রিডাররা মিটার দেখতে না এলেও পরবর্তী সময়ে শুরু হয় ভৌতিক কাণ্ড। যাদের বিল ৩০০-৪০০ টাকার মধ্যে থাকে হঠাৎ তাদের বিল হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। অফিসে গিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করে তা ঠিক করতে হয়। মাঝে মধ্যে বাড়তি বিল গুনতে হয়।

তবে নগরবাসীর এসব অভিযোগের জবাবে খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আবদুল্লাহ পিইঞ্জ বলেন, বর্তমানে খুলনা ওয়াসা যে পরিমাণ পানি সরবরাহ করছে শুষ্ক মৌসুমে তার চেয়ে ১০-১৫ শতাংশ বেশি সরবরাহ করার প্রস্তুতি রয়েছে। পানিতে যাতে লবণাক্ততা না থাকে সে চেষ্টা চলছে। আসন্ন শুষ্ক মৌসুমের আগেই কাজ সেরে ফেলা হবে।

পানিতে ময়লা আর দুর্গন্ধের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে নগরজুড়ে ড্রেনেজ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কাজ চলছে। এতে ওই এলাকার কোনো পাইপ যদি লিকেজ হয় তাহলেই শুধু পানিতে ময়লা পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, এমন ঘটনার খবর পেলেই সেখানে পর্যবেক্ষণ করে ঠিক করার ব্যবস্থা করা হয়।

বিল প্রদানে এখন আর কোনো ত্রুটি নেই দাবি করে ওয়াসার এই কর্মকর্তা বলেন, প্রত্যেক এলাকার জন্য আলাদা রিডার রয়েছে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটারের রিডিংয়ের ছবি তোলে। সেই ছবি দেখেই বিল করা হয়। এখানে ভুল হওয়ার কোনো বিষয় নেই।

২০০৮ সালের ২ মার্চ খুলনা ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হয়। খুলনা সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহ বিভাগের পুরাতন প্রায় আট হাজার গ্রাহক ওয়াসায় ন্যস্ত করা হয়। বর্তমানে খুলনা ওয়াসার গ্রাহক প্রায় ৩৯ হাজার।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top