ব্যুরো এডিটর …
জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বস্তিতে নেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী। ঘাম ঝরানো প্রচারণা চালালেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও দিচ্ছেন ব্যাপক লড়াইয়ের আভাস।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী দুই প্রার্থী। একটু ছাড় দিতে রাজি নন কেউ কাউকেই।
খুলনা জেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে সরগরম ভোটের ময়দান। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য কিংবা সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যরা ব্যস্ত। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ ভোটারদের মাঝেও। জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নে প্রতিনিয়ত সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত গণসংযোগ করছেন প্রার্থীরা। সার্বজনীন ভোট না হলেও প্রতীক সম্বলিত পোস্টারের ছড়াছড়ি পথে-ঘাটে।
চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ। তার মার্কা মোটরসাইকেল। আনারস মার্কায় ভোট করবেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বিএমএ’র সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম এবং খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ক্রীড়া সংগঠক মোর্ত্তজা রশিদী দারা নির্বাচন করছেন চশমা প্রতীকে।
নির্বাচন ঘিরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মধ্যে অভ্যন্তরীণ চাপ বিরাজ করছে। দলের মনোনীত প্রার্থী শেখ হারুনের বিপক্ষে একই ঘরানার দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকায় অস্বস্তি দেখা যাচ্ছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ হারুনুর রশিদের দিকে অভিযোগ তুলেছেন স্বতন্ত্র দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী। গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী এস এম মোর্তুজা রশিদী দারা।
এ প্রসঙ্গে দারা বলেন, গত সোমবার (৩ অক্টোবর) খুলনা ক্লাবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ হারুনুর রশিদের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছেন এবং ভোটারদের কাছ থেকে ভোট বুঝে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। যা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পথকে রুদ্ধ করেছে।
দারা আরও বলেন, খুলনা জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য ৯টি ওয়ার্ডে নয়টি ভোট কেন্দ্র হবে বলে আমাদেরকে জানানো হয়েছিল। যখন নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদার মেয়র ভোট বুঝে নেবেন বলে হুমকি দিয়েছেন, তখন আমরা দেখলাম জেলা পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্রকে ভাগ করে খুলনা সিটি কর্পোরেশনে একটি ও রূপসা উপজেলার ভোটারদের জন্য একটি আলাদা কেন্দ্র স্থাপন করে মোট ১০টি ভোট কেন্দ্র করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের ৪২টি ভোটের জন্য আলাদা কেন্দ্র স্থাপন করে ভোট বুঝে নেওয়ার একটি কৌশলগত দিক বলে আমাদের মনে হয়েছে। যে কারণে ভোট কেন্দ্র দুটি করার বিষয়ে আমরা আপত্তি জানাচ্ছি এবং আগের মতো ৯টি কেন্দ্র রাখার দাবি করছি।
অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, আমার ওপর ক্ষমতাসীন দলের কোনো হুমকি আসছে না। হুমকি দেওয়া হচ্ছে ভোটারদের। এটা নির্বাচনের আচরণ বিধি লঙ্ঘন, অশোভন ও অনুচিত। খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক গত সোমবার তার ভাষণে হুমকি দিলেন। হারুন ভাই যেখানে প্রচারণায় যাচ্ছেন সেখানে এমপিরা কথা বলছেন। তারা নির্বাচনী প্রচারে তো কোনোভাবেই থাকতে পারেন না। আমরা কি একটি অসভ্য রাষ্ট্রে বাস করি যে প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় সংসদ সদস্যরা অংশ নেন? কেউ দেখার নেই? আমি অবশ্যই জেলা প্রশাসনে অভিযোগ দেব। তার পরিপ্রেক্ষিতে যদি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়; এরা তো আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে।
তিনি আরও বলেন, এখন ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে। নির্বাচনের দিন কেন্দ্র দখল করবে। এমপি-মেয়র যদি হুমকি দেয় ভোটাররা তো শঙ্কিত হবেই। হারুন সাহেব তো নিজেকে প্রার্থী মনে করেন না। মনে করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী হলে যে তার অনেক কিছু সংকুচিত হয়ে আসে। সেটা তো উনি ভাবেন না। মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা ঠিক না। এটা একটি নষ্ট সংস্কৃতি। এটা বন্ধ হওয়া উচিত বাংলাদেশে। মানুষ যাকে মনে চাবে তাকে ভোট দেবে। এটাই তো গণতন্ত্র।
দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর অভিযোগ প্রসঙ্গে শেখ হারুনুর রশিদ বলেন, আমরা মাস্তান কিংবা চাঁদাবাজ না। কাউকে হুমকি-ধমকি দেব। তাদের অভিযোগ সত্য নয়।
আগামী ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার ভোটে ৯টি সাধারণ সদস্য পদে ২৮ ও তিনটি সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। নির্বাচনে মোট ভোটার ৯৭৮ জন। তারা হলেন- খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র, ৩১ কাউন্সিলর, ১০ সংরক্ষিত কাউন্সিলর, ৬৮ ইউপি চেয়ারম্যান, ৯ উপজেলা চেয়ারম্যান, ১৮ ভাইস চেয়ারম্যান, সব সাধারণ ও সংরক্ষিত ইউপি সদস্য।