উপকূলে ত্বীন চাষে অপার সম্ভাবনা, তৈরি হবে কর্মসংস্থান

agree-20220904110520.webp

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক…..

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ত্বীন (ফিকাস ক্যারিকা) ফলের চাষাবাদ বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ত্বীন চাষের উপযোগী। তাই কৃষিতে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন দ্বার খুলবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ত্বীন ফল চাষাবাদের উপযুক্ততা ও সম্ভাব্যতা মূল্যায়নে একটি পিএইচডি গবেষণা হয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক ড. শামীম আহমেদ কামাল উদ্দীন খানের তত্ত্বাবধানে গবেষণাটি করেছেন একই ডিসিপ্লিনের সাবেক শিক্ষার্থী ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (এল আর) রুবায়েত আরা। সহ-তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ছিলেন প্রফেসর ড. মো. আব্দুল মান্নান। প্রায় তিন বছর ধরে গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালিত হয়।

গবেষকরা বলেন, ত্বীন ফল ভারী কাদা, দো-আঁশ, বেলে দোআঁশ এবং হালকা বালুর মতো বিস্তৃত মাটিতে ভালভাবে জন্মানো যায়। এর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য উপক্রান্তীয় এবং হালকা জলবায়ু প্রয়োজন। এছাড়া ফল উৎপাদনের জন্য শুষ্ক জলবায়ুসহ হালকা বৃষ্টিপাত প্রয়োজন এবং এটি পাকার জন্য কমপক্ষে আট ঘণ্টা দিনের আলো প্রয়োজন। বাংলাদেশে এ জলবায়ু পরিস্থিতির প্রায় সবকটিই বিরাজ করছে। তাই সঠিক পদ্ধতি মেনে চাষাবাদ করতে পারলে কৃষিতে কর্মসংস্থান তৈরি ও বৈদেশিক আয়ের এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।

গবেষণার জন্য চাষ করতে গিয়ে দেখা গেছে, লবণাক্ত ও অ-লবণাক্ত জমিতে গাছের বৃদ্ধি বা ফলনের তারতম্য খুব বেশি নয়। এটি ১০ ডিএস/এম’র অধিক মাত্রার লবণাক্ততা সহনশীল বলেও প্রতীয়মান হয়েছে। সাধারণত মাটিতে ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত লবণাক্ততা বেশি থাকে। তবুও এতে টিকে থাকতে পারে ত্বীন ফলের গাছ। তাই অনায়াসেই উপকূলীয় অঞ্চলে চাষাবাদ করা যাবে এটি। এছাড়া কোনো রাসায়নিক সার ছাড়াই মাটিতে জৈব ও কম্পোস্ট সার মিশিয়ে ত্বীন চাষে সাফল্য পাওয়া গেছে।
এর আগে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল খুলনার অপেশাদার বাগান মালিকরা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে সংগ্রহ করা ত্বীন চাষের চেষ্টা করেছিলেন। যা এ অঞ্চলে প্রাথমিকভাবে এ ফসলের চাষের সম্ভাবনা দেখায়।

রুবায়েত আরা জাগো নিউজকে বলেন, ফলটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে গেলে কৃষকরা বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন। প্রথমত এর চাষাবাদ পদ্ধতি এখনো এদেশে পরিচিত হয়ে ওঠেনি। চাষের উপকরণ ও বীজ সহজলভ্য নয় বরং যারা চারা সংগ্রহ ও বিক্রির কাজ করছেন তারা যথেচ্ছা আচরণ করছেন। পাশাপাশি সার প্রয়োগের মাত্রা ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ সম্পর্কে এখনো কৃষকরা পুরোপুরি জানেন না। সংগ্রহোত্তর (পোস্ট হারভেস্ট) পরিচর্যা সম্পর্কেও সঠিক জ্ঞান না থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ড. শামীম আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ত্বীন ফলের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো জলাবদ্ধতা। তাই এটি চাষ করতে হলে মাটির উঁচু ঢিবি তৈরি করে দিতে হবে। অথবা নালা পদ্ধতিতে চার-ছয় ফুট দূরত্বে রোপণ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ত্বীন মধ্যপ্রাচ্যের ফল হলেও এটি সেখানে বছরে মাত্র একবার ফল দেয়। কিন্তু বাংলাদেশে সারাবছর প্রায় একই রকম ফলন পাওয়া যায়।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top