ডেস্ক রিপোর্ট: ড. আতিউর রহমান ২০০৯ সালের ১ মে থেকে ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে একটি শক্তিশালী ব্যাংক খাত পেয়েছিলেন।
কিন্তু অদক্ষতা, ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বকীয়তাকে খর্ব করা, ঋণখেলাপিদের সুবিধা দেওয়ায় খাতটি ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে। তিনিই মূলত ব্যাংক খাত ধ্বংসের মূলহোতা। তার সময়েই ব্যাংকের সব সূচকের আবনতি ঘটে।
তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শৃঙ্খলা ভেঙে ফেলেন, পরিদর্শনব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেন। ব্যাংকিং সেক্টরে লুটপাটের সুযোগ করে দেন তিনি। তার সময়ে নীতিমালার শিথিলতায় শুরু হয় জালিয়াতি। ওই সময়ে হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক, ক্রিসেন্ট, অ্যাননটেক্সের জালিয়াতি প্রকাশিত হয়। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে দেওয়া নয় ব্যাংকের কোনোটিই দাঁড়াতে পারেনি। অপরিকল্পিত ও অদক্ষ আইটি ব্যবস্থাপনা সম্প্রসারণের কারণে রিজার্ভ চুরির সুযোগ তৈরি হয়।
২০১০ সালের শুরুতে সোনালী ব্যাংকে হলমার্ক ও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি হয়। দুটি ব্যাংকে বড় জালিয়াতি হলেও আতিউরের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি। তার সময়ে লুটপাটকারীদের নজর পড়ে জনতা ব্যাংকে। দুর্বল তদারকির পাশাপাশি প্রচলিত নীতিমালাগুলো শিথিল করে লুটপাটকারীদের আরও বেশি সুযোগ করে দেন।
২০১৫ সালে ঋণখেলাপিদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইতিহাসে নজিরবিহীন ছাড় দেওয়া হয়। ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি খেলাপি ঋণ নবায়নে বড় ছাড় দেওয়া হয়। এতে ৫০০ কোটি টাকা এবং এর বেশি মেয়াদি ঋণ ১২ বছর ও চলমান ঋণ ৬ বছর মেয়াদে নবায়ন করার সুযোগ আসে। কিস্তির ১ থেকে ২ শতাংশ অর্থ জমা দিয়েই এ সুযোগ দেওয়া হয়। ব্যাংকের ‘কস্ট অব ফান্ড’-এর সঙ্গে ১ শতাংশ সুদ যোগ করে সুদ নির্ধারণের কথা বলা হয়। এ সুযোগ সীমিত সময়ের জন্য দেওয়া হলেও তা চলমান থাকে। আগে খেলাপি ঋণ ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের জন্য নবায়ন করা যেত। এ নীতিমালার ফলে বেক্সিমকো গ্রুপসহ সরকারের ঘনিষ্ঠ শিল্পগ্রুপগুলো দফায় দফায় খেলাপি ঋণ দীর্ঘমেয়াদে নবায়ন করেছে।
২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি বড় অঙ্কের ঋণ নীতিমালা শিথিল করা হয়। ফলে বড় গ্রাহকরা বেপরোয়া গতিতে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আপত্তি উপেক্ষা করে আতিউর আন্তর্জাতিক লেনদেন নিষ্পত্তির সংস্থা সুইফটের সঙ্গে আরটিজিএস-এর সংযোগ দিয়েছিলেন। যাতে ব্যাংকগুলো অনলাইনে লেনদেন করতে পারে। এতেই রিজার্ভ চুরির পথ সুগম হয়। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমসের নিউইয়র্ক শাখায় রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে এখনও ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। অপরিকল্পিত তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা ও সম্প্রসারণের কারণেই ওই চুরি হয়েছিল।
ড. আতিউরের সময় ব্যাংকের সব সূচকে অবনতি ঘটে। গভর্নর হওয়ার সময় খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। পদত্যাগের সময় ছিল ৫৯ হাজার ৪১১ কোটি টাকা।