লিবিয়ায় মানবপাচারের নির্মমতা, দুটি গণকবর থেকে ৫০ মৃতদেহ উদ্ধার

ezgif-45f08a7927137f-67a97c47c6c5b.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট: লিবিয়ার কর্তৃপক্ষ দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় মরুভূমি এলাকায় দুটি গণকবর থেকে প্রায় ৫০টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। রোববার দেশটির কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। ইউরোপে পাড়ি জমানোর চেষ্টায় থাকা অভিবাসীদের জন্য এটি আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনা।

কর্তৃপক্ষের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা ছবিতে দেখা গেছে, পুলিশ ও মেডিকেল টিম মরুভূমির বালির নিচ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করছে, যেগুলো কম্বলে মোড়ানো ছিল।

কুফরাভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন আল-আব্রিন চ্যারিটি জানিয়েছে, বেশ কয়েকজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল, তারপর তাদের কবর দেওয়া হয়।

একই দিনে কুফরায় মানবপাচার চক্রের একটি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে দ্বিতীয় গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়, যেখানে অন্তত ৩০টি মৃতদেহ পাওয়া গেছে। কুফরার নিরাপত্তা চেম্বারের প্রধান মোহাম্মদ আল-ফাদিল জানিয়েছেন, জীবিত উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের বক্তব্য অনুযায়ী, এই গণকবরে প্রায় ৭০ জনকে দাফন করা হয়েছে।

পরে কর্তৃপক্ষ মানবপাচার কেন্দ্র থেকে ৭৬ জন অভিবাসীকে মুক্ত করে এবং তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়, যাদের মধ্যে একজন লিবিয়ান ও দুইজন বিদেশি নাগরিক। সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে অভিবাসীদের আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।  তদন্ত চলার সময় তাদের আটক রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রসিকিউশন।

লিবিয়ায় অভিবাসীদের গণকবরের সন্ধান নতুন কিছু নয়।  গত বছর দেশটির শুয়াইরিফ অঞ্চলে অন্তত ৬৫ অভিবাসীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।

উল্লেখ্য, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপে যাওয়ার প্রধান ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত লিবিয়া। ২০১১ সালে স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকে বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে।  দেশটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি সরকার কার্যত আলাদা শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করছে, যাদের প্রত্যেকটির পেছনে বিভিন্ন মিলিশিয়া গোষ্ঠী ও বিদেশি শক্তির সমর্থন রয়েছে।

দেশটির অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মানবপাচারকারীরা লিবিয়ার প্রতিবেশী ছয়টি দেশ—চাদ, নাইজার, সুদান, মিসর, আলজেরিয়া ও তিউনিসিয়ার সীমান্ত দিয়ে অভিবাসীদের পাচার করছে।

পাশাপাশি, ইউরোপে পৌঁছানোর জন্য অভিবাসীদের ছোট রাবারের নৌকা ও অনিরাপদ জলযানে তুলছে তারা, যা ভয়ংকরভাবে বিপজ্জনক ভূমধ্যসাগরীয় যাত্রার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে।

জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বছরের পর বছর ধরে লিবিয়ায় অভিবাসীদের ওপর চলমান নির্যাতন, বাধ্যতামূলক শ্রম, মারধর, ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনা নথিভুক্ত করে আসছে। বেশিরভাগ সময় মানবপাচারকারীরা অভিবাসীদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য নির্মম নির্যাতন চালায়।

এছাড়া, যেসব অভিবাসী সমুদ্রে আটকে পড়ে এবং লিবিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়, তাদের সরকারি আটককেন্দ্রগুলোতে বন্দি করে রাখা হয়, যেখানে তারা নির্যাতন, ধর্ষণ ও মুক্তিপণ দাবির শিকার হয় বলে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে।

Share this post

scroll to top