চট্টগ্রামে গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীরা

image-830765-1722023985.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট: গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাকর্মীরা। অনেকেই চলে গেছেন আÍগোপনে। থাকছেন না বাসাবাড়িতে। বন্ধ করে রেখেছেন মোবাইল ফোন। কর্মীদের সঙ্গে সিনিয়র নেতাদের যোগাযোগ প্রায় বন্ধ। যে যেভাবে পারছেন, কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে গ্রেফতার এড়ানোই এখন তাদের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে সহিংসতা-নাশকতার অভিযোগে একের পর এক মামলা হচ্ছে। এসব মামলায় এরই মধ্যে তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। অনেকের বাসাবাড়িতে রাতে হানা দিচ্ছে পুলিশ। তাই পারতপক্ষে বাড়িঘরে যাচ্ছেন না তারা। যদিও চট্টগ্রামের বিএনপি নেতারা দাবি করে আসছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল না। এরপরও গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। বিএনপির দাবি, সরকার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দিয়ে বিএনপিকে ঘায়েল করতে চাইছে। এ কারণে অতীতের মতো নিরীহ নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে পুলিশ আবারও নেমেছে মাঠে ।

চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ১৬ জুলাই নগরীর মুরাদপুরে সংঘর্ষে দুই শিক্ষার্থী ও এক পথচারীসহ তিনজন মারা যান। আহত হন অন্তত ৬০ জন। ১৮ জুলাই বহদ্দরাহাট এলাকায় সংঘর্ষে প্রাণ হারায় আরও দুজন। এছাড়া ষোলশহর ও শাহ আমানত সেতু এলাকায়ও সংঘর্ষ হয়। মিছিল হয় নগরীর বিভিন্ন স্থানে। এসব ঘটনায় হত্যা মামলা ছাড়াও বিভিন্ন থানায় পুলিশের ওপর হামলা, নাশকতা, বিস্ফোরক, ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা হয়েছে।

নগর পুলিশ সূত্র জানায়, নগরীর ছয় থানায় এক সপ্তাহে ১৮টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে কোতোয়ালি থানায় চারটি, পাঁচলাইশে ছয়টি, খুলশীতে একটি, চান্দগাঁও থানায় চারটি, বাকলিয়া, হালিশহর ও ডবলমুরিং থানায় একটি করে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা প্রায় ৩৮ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির মুখপাত্র সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী  জানান, ১৬ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত ১০ দিনে বিভিন্ন মামলায় প্রায় ৩৩০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ অনেকের বাসাবাড়িতে হানা দিচ্ছে। আতঙ্কে অনেকেই ঘরে থাকার সাহস পাচ্ছেন না। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এখানে-ওখানে।

বিএনপি দলীয় সূত্র জানায়, আগে থেকেই মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীরা। সিনিয়র নেতাদের প্রায় সবার বিরুদ্ধেই মামলা রয়েছে। কারও কারও মামলার সংখ্যা শতাধিক। আদালতে হাজিরা দিতে দিতেই দিন কাটে। এ অবস্থায় নতুন মামলা বিপাকে ফেলে দিয়েছে। কিছুদিন আগে নগর বিএনপির দুই সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে কেন্দ্র থেকে। এ কমিটি যখন দল গোছানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ঠিক তখনই বাধা হয়ে দাঁড়াল নতুন মামলা। গ্রেফতারের শঙ্কায় শিগগিরই বিএনপি নেতাকর্মীরা দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান।

এক বিবৃতিতে তারা বলেন, সাধারণ ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপি সচেতনভাবেই সরাসরি যুক্ত হয়নি। কিন্তু নিরীহ এই ছাত্র আন্দোলনকে দমন করার জন্য সরকার প্রথম থেকেই এটাকে রাজনৈতিক আন্দোলন হিসাবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে। এই আন্দোলন দমনে সাধারণ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। সারা বিশ্ব থেকে এ ঘটনা আড়াল করতে পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সম্পৃক্ত না থাকলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, ঘরে ঘরে তল্লাশি ও হয়রানি করা হচ্ছে। টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে না পেয়ে তাদের আÍীয়স্বজনকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।

Share this post

scroll to top