বিজেপির ভোটের রাজনীতির বলি হচ্ছেন দিল্লির কথিত বাংলাদেশিরা!

India-67a19940858f3.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট: ভারতের পশ্চিম দিল্লির উত্তমনগর ইস্ট মেট্রো স্টেশন থেকে মিনিট দশেকের হাঁটাপথে সরু ঘিঞ্জি গলির ভেতরে গরিব, প্রান্তিক মানুষদের একটা মহল্লা – মুখে মুখে যার নাম ‘বাঙালি বস্তি’। এলাকার কৃষ্ণা কলোনি আর কালী বস্তি ঘেঁষা এই পাড়াতে মূলত পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার বা আসামের নওগাঁ, বরপেটা জেলা থেকে আসা বাংলাভাষী মুসলিমদের বসবাস, আর সেখান থেকেই জনপদের এহেন নামকরণ।

মূলত কনস্ট্রাকশন সাইটে মুটেমজুর খেটে, জঞ্জাল কুড়িয়ে বা রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করে দিন কাটায় এই বাঙালি বস্তির পুরুষরা।

তবে গত প্রায় দু’মাস ধরে এই বস্তির মানুষজন ভয়ে সিঁটিয়ে আছেন। কারণ বলা নেই কওয়া নেই দিনেদুপুরে বা রাতবিরেতেও মহল্লায় হানা দিচ্ছে দিল্লি পুলিশের টিম।

বস্তিতে সবার আধার বা ভারতের জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার কার্ড বা রেশন কার্ড, গ্রাম পঞ্চায়েতের সার্টিফিকেট – এসব ঠিকঠাক আছে কি না, অভিযানে তারই পরীক্ষা চলছে দফায় দফায়। আর কোনো নথিপত্র ঠিকঠাক দেখাতে না-পারলেই ‘অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ সন্দেহে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

কালী বস্তিতে পলিথিন আর চাটাইয়ের বেড়া দিয়ে খাড়া করা ছোট্ট পানের দোকান চালান দিনহাটার আসলাম শেখ (আসল নাম নয়)। প্রায় ফিসফিস করে জানালেন, ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত বস্তি থেকে প্রায় জনাবিশেক বাঙালি নারী-পুরুষকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ – ফেরত এসেছেন মাত্র তিনজন! এবং অবিকল একই ছবি দিল্লির বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এরকম আরও বহু ‘বাঙালি বস্তি’তেই!

এসব জায়গা থেকে অবৈধ বিদেশি সন্দেহে যাদের আটক করা হচ্ছে, তাদের নিয়ে কী করা হচ্ছে সেটা নিয়ে দিল্লি পুলিশের অবশ্য কোনো রাখঢাক নেই।

বস্তুত গত দেড় মাসের ভেতর দিল্লি পুলিশের বিভিন্ন ডিস্ট্রিক্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি কমিশনাররা প্রায় প্রত্যেকে প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন, অভিযানে যারা কাগজপত্র দেখাতে পারেননি এবং যাদের বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করা হচ্ছে তাদের সবাইকেই ‘ডিপোর্ট’ করা হয়েছে।

ডিপোর্টেশন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যখন একটি দেশ সেখানে থাকা অন্য কোনো দেশের নাগরিককে কোনো কারণে তার নিজ দেশে ফেরত পাঠায়।

ভারতে যখন কোনো অবৈধভাবে প্রবেশ করা বাংলাদেশিকে শনাক্ত করা হয় এবং বাংলাদেশ দূতাবাসও ওই ব্যক্তির পরিচয় যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত করে যে তিনি সত্যিই বাংলাদেশি নাগরিক, তখন দুই দেশের সম্মতিতে তাকে সীমান্তের ওপারে ফেরত পাঠানো হয়ে থাকে।

অন্তত ‘ডিপোর্টেশন’ প্রক্রিয়াটা এভাবেই সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু এর বাইরেও গোপনে অনেক সময় সীমান্তের অন্য পারে কথিত বিদেশিদের জোর করে ঠেলে দেওয়া হয়েছে (পুশব্যাক)–এরকম অভিযোগ অতীতে বহুবারই উঠেছে।

তবে এখন দিল্লি পুলিশের কর্মকর্তারা ঢালাওভাবে বাংলাদেশিদের ডিপোর্ট করা হচ্ছে বলে ঘোষণা করার পর এই প্রশ্ন উঠছে যে তাহলে কি আবার সীমান্তের ওপারে জোর করে ঠেলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে?

সেটা যদি হয়ও, বাংলাদেশ সরকারের জ্ঞাতসারে বা তাদের জানিয়ে যে এটা করা হচ্ছে না, নির্ভরযোগ্য সূত্রে বিবিসি সেটাও জানতে পেরেছে।

এরই মধ্যে দিনকয়েক আগে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডিপোর্টেশন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, অবৈধভাবে যারা ভারতে প্রবেশ করেছেন তাদের ফেরত পাঠানোর মধ্যে অন্যায় কিছু নেই– বরং সেটা করাই সরকারের দায়িত্ব।

এমনকি ডিপোর্টেশন যে হচ্ছে, সরকারি মুখপাত্র প্রকারান্তরে সেটাও মেনে নিয়েছেন। যদিও সম্প্রতি ঠিক কতজনকে ডিপোর্ট করা হয়েছে, সেই নির্দিষ্ট সংখ্যাটা তিনি বলতে পারেননি।

ফলে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ধরতে রাজধানী দিল্লিজুড়ে পুলিশের ব্যাপক অভিযান আর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য– এই ‘দুয়ে দুয়ে চার’ করেই ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশি বলে যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে তাদের আবার গোপনে সীমান্তের অন্য পারে ঠেলে দেওয়ার প্রক্রিয়াও হয়তো নীরবে ও সন্তর্পণেই শুরু হয়ে গেছে।

দিল্লিতে গভর্নরের হুকুম আর ধরপাকড়

গত ১০ ডিসেম্বর, দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক মাসদুয়েক আগে শহরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনা নির্দেশ দেন, শহরের সব অলিতে-গলিতে পাড়া-মহল্লায় গিয়ে খুঁজে বের করতে হবে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কোন বিদেশিরা লুকিয়ে আছে।

প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সাজ সাজ রব পড়ে যায় দিল্লি পুলিশের অন্দরমহলে। বিগত প্রায় দুই দশক ধরে একেবারেই নিষ্ক্রিয় ছিল পুলিশ বিভাগের ‘বাংলাদেশ সেল’, আবার নতুন করে সেগুলো জিইয়ে তোলা হতে থাকে।

‘বাংলাদেশ সেল’ হলো দিল্লির বিভিন্ন থানার সঙ্গে যুক্ত পাঁচ বা দশজন পুলিশ সদস্যকে নিয়ে তৈরি বিশেষ সেল, যাদের দায়িত্ব ছিল শহরের বিভিন্ন কলোনি বা বস্তিতে গা ঢাকা দিয়ে থাকা অবৈধ বাংলাদেশিদের খুঁজে বের করা।

এই সেলগুলোর প্রতিটিতে থাকেন একাধিক বাংলাভাষী কর্মকর্তা, যাদের মূল কাজই হলো সন্দেহভাজনদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে ও তাদের ডায়লেক্ট থেকে আন্দাজ করা তারা আসলে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা বা আসামের বাঙালি – না কি বাংলাদেশ থেকে আসা! তারপর চলে সন্দেহভাজনদের পরখ করার কাজ!

এরপরই ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে পুরো রাজধানীজুড়ে শুরু হয়ে যায় বাংলাদেশি খোঁজার অভিযান। দিল্লি পুলিশের যে মোট ১৫টা ডিস্ট্রিক্ট, তার সবগুলো জুড়েই টানা দু’মাস ধরে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

উত্তমনগরেই শুধু নয়, দক্ষিণ দিল্লির বসন্ত কুঞ্জ ঘেঁষা বাঙালি বস্তি, মহিপালপুরের কাছে রুচি বিহার কিংবা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে শাস্ত্রী পার্ক, সীলমপুর, কাপাসহেডা, ডাবরি, মদনপুর খাদার, রংপুরী, বাওয়ানা, জাহাঙ্গীরপুরী এরকম বাঙালি-অধ্যুষিত সব এলাকাতেই অভিযান চালানো হতে থাকে।

শহরের কেন্দ্রস্থলে নতুন দিল্লি রেল স্টেশনের লাগোয়া পাহাড়গঞ্জ এলাকার শস্তার হোটেলগুলো, কিংবা বিভিন্ন হাসপাতালের কাছাকাছি গেস্ট হাউসগুলোতেও পুলিশি হানা চলতে থাকে – বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বা ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও কোনো বিদেশি লুকিয়ে আছেন কি না তা দেখতে।

এরকম প্রায় প্রত্যেক দফা অভিযানের পরই দিল্লি পুলিশ দাবি করেছে, প্রতিটিতেই তারা অবৈধ বাংলাদেশিদের খুঁজে পেয়েছে – কোনোটিতে হয়তো দু’তিনজন, কোথাও আবার এক সঙ্গে আটজন। গত ছয় সপ্তাহে শহর জুড়ে আটকের মোট সংখ্যাটা দুশোর প্রায় কাছাকাছি বলে দিল্লি পুলিশের বিভিন্ন ব্রিফিং থেকে প্রাপ্ত তথ্যই জানাচ্ছে।

আরও তাৎপর্যপূর্ণভাবে, দিল্লি পুলিশের একাধিক ডেপুটি কমিশনার – ডিসিপি (সেন্ট্রাল) এম হর্ষবর্ধন, ডিসিপি (সাউথ) অঙ্কিত চৌহান, ডিসিপি (সাউথওয়েস্ট) সুরেন্দ্র চৌধুরী বা ডিসিপি (দ্বারকা) অঙ্কিত সিং – প্রত্যেকে এই সব অভিযানের পর প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, অভিযানে ধৃত সন্দেহভাজন বাংলাদেশিদের ‘ডিপোর্ট’ও করা হয়েছে।

এই প্রতিবেদনের জন্য যখন বসন্ত কুঞ্জের বাঙালি বস্তি, উত্তমনগর বা জাহাঙ্গীরপুরীতে গিয়েছি – ওই সব এলাকার বাঙালিরাও জানিয়েছেন তাদের যে সব প্রতিবেশীকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে তারা প্রায় কেউই এখনও ফিরে আসেননি। আর একটা বিষয় হলো, এই ধৃতদের সবাই মুসলিম। কোনো হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে অবৈধ বাংলাদেশি সন্দেহে ধরা হয়েছে বলেও এখনও পর্যন্ত খবর নেই।

ডিপোর্টেশনের রাজনীতি

তথাকথিত অবৈধ বাংলাদেশিদের ঘিরে দিল্লিতে যে তুলকালাম চলছে, তার সঙ্গে অনেকেই শহরের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের সম্পর্ক টানছেন।

ভারতের রাজধানী শহরে বিধানসভা ভোট আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি (বুধবার), যেখানে টানা এক দশক ধরে ক্ষমতায় আছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন আম আদমি পার্টি (আপ)।

দিল্লি বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হলেও রাজধানীতে তারা ক্ষমতার বাইরে প্রায় দীর্ঘ সাতাশ বছর, ফলে কেজরিওয়ালের হাত থেকে দিল্লি বিধানসভার দখল ছিনিয়ে নিতে বিজেপি এবার ভীষণই মরিয়া।

সেই ভোটের মাত্র দুমাস আগে ঠিক দু’মাসের জন্য দিল্লিতে অবৈধ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে লেফটেন্যান্ট গভর্নরের নির্দেশ যে ভোটের কথা ভেবেই, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা প্রায় সবাই সে ব্যাপারে নিশ্চিত।

দিল্লির শাসক দল আম আদমি পার্টির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতেই অবৈধ বংলাদেশি ও রোহিঙ্গারা শহরের নানা প্রান্তে শিকড় ছড়াতে পেরেছে, ভোটের প্রচারণায় বিজেপিও বারেবারেই এই অভিযোগ তুলছে।

আম আদমি পার্টির বিধায়ক মহিন্দর গোয়েল-সহ অন্য নেতারা এই বাংলাদেশিদের ভারতীয় পরিচয়পত্র জোগাড় করতেও সাহায্য করেছেন, অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির মুখপাত্র তথা সাবেক ক্যাবিনেট মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিও। একই অভিযোগ পুলিশও গোয়েলকে বারেবারে সমন পাঠিয়েছে।

দিল্লির নির্বাচনি চালচিত্রে এই যে অবৈধ বাংলাদেশি-বিরোধী ন্যারেটিভ গড়ে তুলে আপ-কে কোণঠাসা করা ও হিন্দুত্ববাদী ভোটকে সংহত করার চেষ্টা, তাতে অবশ্যই মদত জোগাচ্ছে দিল্লি পুলিশের সাম্প্রতিক অভিযান ও প্রায় নিয়ম করে ডজন ডজন বাংলাদেশিকে ‘ডিপোর্ট’ করার ঘোষণা!

কিন্তু কার্যক্ষেত্রে আদৌ কাউকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে কি না বা পাঠানো হলেও কতজনের ক্ষেত্রে তা করা হচ্ছে, সে ব্যাপারে এখনো কোনো প্রমাণ বা তথ্যই নেই!

তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা এমপি সুস্মিতা দেব এই কারণেই মনে করেন, ডিপোর্টেশনের নামে আসলে যেটা হচ্ছে সেটা নেহাত ভোটের রাজনীতি ছাড়া কিছুই নয়! ভোট হলেই আপনারা শুধু এই বাংলাদেশি খেদাও বুলি শুনবেন, অন্য সময় দেখবেন সব চুপচাপ! অথচ দিল্লি পুলিশ, বিএসএফ, এফআরআরও সবই তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে। কয়েক মাস আগে পর্যন্ত বাংলাদেশেও আমাদের একটি বন্ধু সরকারই ক্ষমতায় ছিল।

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী আসামের শিলচরের এই রাজনীতিবিদ বলছিলেন, তাহলে সত্যিই সদিচ্ছা থাকলে সকাল-বিকাল ফাঁকা হুমকি না-দিয়ে অমিত শাহ তো বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলে অনুপ্রবেশকারীদের অনেক আগেই ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারতেন।

ফলে দিল্লির ভোটপর্ব মিটলে এই অবৈধ বাংলাদেশি পাকড়াও করার উদ্যোগও থিতিয়ে যাবে বলে রাজনৈতিক মহলে অনেকেরই ধারণা। লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনা যে দু’মাসের সময়সীমা দিয়েছিলেন সেটাও ততদিনে শেষ হয়ে যাবে।

এর আগে শেষবার যখন অবৈধ বাংলাদেশি সন্দেহে ধৃতদের গোপনে ভারত সীমান্ত পার করিয়ে দেওয়ার বড়সড় ঘটনা সামনে এসেছিল, সেটা ছিল ২০১৯ সালে নভেম্বর মাস।

ভারতের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন তখন অভিযোগ করে, দক্ষিণ ভারতের ব্যাঙ্গালোর থেকে দফায় দফায় বাংলাদেশি সন্দেহে ধৃতদের পুলিশ পাহারায় ট্রেনে চাপিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আনা হচ্ছে এবং বিএসএফের সাহায্য নিয়ে গোপনে সীমান্তের অন্য পারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

সেই ঘটনার পর থেকেই অবৈধ বাংলাদেশি সন্দেহে ভারতের যে কোনো প্রান্তে যারাই ধরা পড়ুন, তাদের নিয়ে ঠিক কী করা হচ্ছে সে ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও তাদের সংস্থাগুলো চরম গোপনীয়তা বজায় রেখে চলে।

ফলে এখন রাজধানীতে ভোটের মুখে পুলিশি অভিযানে যারা ধরা পড়েছেন তাদের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত ঠিক কী ঘটেছে, সেটাও এখনও খুব একটা পরিষ্কার নয়।

কিন্তু দিল্লিতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কথাবার্তা থেকে আভাস মিলছে যে এদের অনেকের ক্ষেত্রেই সত্যিকারের ডিপোর্টেশনের প্রক্রিয়া বাস্তবেও শুরু হয়ে গেছে। একটা খুব ছোট অংশকে ইতোমধ্যে নিজ দেশে খুব সম্ভবত ফেরতও পাঠানো হয়েছে, বাকি কারও কারও ক্ষেত্রে চলছে শেষ ধাপের কাজকর্ম!

অমিত শাহর মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা

বিবিসি নিজস্ব অনুসন্ধানে যেটা জানতে পেরেছে, দিল্লি পুলিশ ‘ডিপোর্ট’ করা হয়েছে মানে বলতে চেয়েছে তারা এই সন্দেহভাজন বিদেশিদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘এফআরআরও’ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে।

দিল্লি পুলিশের একটি পদস্থ সূত্র বিবিসিকে বলেছেন, আমাদের কাছে ডিপোর্ট করার অর্থই হলো এফআরআরও-র কাছে তাদের তুলে দেওয়া। অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্ত করে তাদের পেশ করার পরই আমাদের দায়িত্ব শেষ, এরপর বাকিটা সরকারের অন্যান্য বিভাগের ওপর নির্ভর করে।

এফআরআরও বা ‘ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস’ হলো ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থা, যারা ভারতে আগত পাকিস্তানি ছাড়া বাকি সব বিদেশিদের নথিভুক্তকরণ বা ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত বিষয়গুলো তদারকি করে। রাজধানী দিল্লি-সহ ভারতের বড় প্রায় সব শহরেই তাদের কার্যালয় আছে।

যাবতীয় প্রক্রিয়ার শেষে অবৈধ বিদেশিদের ‘ডিপোর্ট’ করার বা নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর মূল দায়িত্বও তাদেরই।

এখন দিল্লি পুলিশ ও এফআরআরও, এই দুটি বিভাগই কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন। এমনকি অতীতে সীমান্তের অন্য পারে ঠেলে দেওয়ার ঘটনা যাদের মাধ্যমে ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, সেই বিএসএফ বা সীমান্তরক্ষী বাহিনীও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণেই পরিচালিত হয়।

ফলে তথাকথিত ‘ডিপোর্টেশন’ ঘিরে দিল্লিতে যা চলছে, তার প্রায় পুরোটাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র আওতায় পড়ছে – দিল্লিতে রাইসিনা হিলসের নর্থ ব্লকে যার মন্ত্রণালয়ের সদর দফতর।

অমিত শাহ নিজেও ভারত থেকে অবৈধ বাংলাদেশিদের ‘খুঁজে খুঁজে বের করে ফেরত পাঠানো হবে’ বলে সাম্প্রতিক অতীতে একাধিকবার হুমকি দিয়েছেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশিদের উইপোকার সঙ্গে তুলনা করেছেন, সম্বোধন করেছেন ‘ঘুষপেটিয়া’ বলেও।

তবে এবারে দিল্লিতে পুলিশি অভিযানের পর ধৃত সন্দেহভাজনদের সত্যিই নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে অমিত শাহর মন্ত্রণালয় একেবারেই নীরব।

এফআরআরও-র হাতে এদের তুলে দেওয়ার পর তাদের সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছে, সেটা এখনও একেবারেই অস্পষ্ট।

Share this post

scroll to top