ইতিহাস গড়ে ফিরলেন ট্রাম্প

trump_-672bd87aec6ea-672bdce24a524.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট: ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজকীয় প্রত্যাবর্তন। দোর্দণ্ড প্রতাপে ইতিহাস গড়ে হোয়াইট হাউজের মসনদে ফিরলেন তিনি। উলটে দিলেন জরিপের সব হিসাব-নিকাশ। ফলে মার্কিন সিংহাসনে প্রথম নারী প্রেসিডেন্টের স্বপ্নও থেকে গেল অধরা। মঙ্গলবার মার্কিনিরা আরেকবার বেছে নিলেন এই রিপাবলিকান সারথিকে। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনি এমন কীর্তি গড়েছেন, যা তার আগে মাত্র একজন করেছিলেন। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয় মেয়াদে লড়ে পরাজিত হওয়ার পর আবারও নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যদিয়ে ১৩২ বছরের রেকর্ড ভাঙলেন তিনি। এর আগে এমন কৃতিত্ব ছিল শুধু সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের। শুধু তাই নয়, ট্রাম্পই হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হয়েছেন। ট্রাম্পের এমন অভাবনীয় বিজয়ে রিপাবলিকান শিবিরে চলছে বাঁধভাঙা উল্লাস। সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদেও তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা এসেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মার্কিন নাগরিকদের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে অর্থনীতি, অভিবাসন, কর্মসংস্থান ইত্যাদি। নির্বাচনি প্রচারে ট্রাম্প এসব বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপের কথা বলে ভোটারদের মন জয় করেছিলেন। বিজয়ী ভাষণে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের জৌলুস আরও বৃদ্ধির প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, এটি একটি চমৎকর বিজয়। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণযুগ রচিত হবে বলে আমি আশা করি। শক্তিশালী, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ আমেরিকা তৈরি না পর্যন্ত আমি বিশ্রাম নেব না। খবর বিবিসি, রয়টার্স, এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।

বাংলাদেশ সময় বুধবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে ভোট গণনায় উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোটে জিতে ট্রাম্প ম্যাজিক নম্বর ২৭০ পার করেন। এর মাধ্যমেই তার বিজয় নিশ্চিত হয়ে যায়। ট্রাম্পের মোট কলেজ ভোটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭৯ তে। দেশটির নির্বাচনে ফল নির্ধারণী ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্যখ্যাত জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা ও পেনসিলভানিয়াতেও লাল শিবিরের জয় হয়েছে। শুধু ইলেকটোরাল কলেজ ভোটই নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প পপুলার ভোটও প্রায় ৫০ লাখ বেশি পেয়েছেন। অন্যদিকে, কমলা হ্যারিস গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য নিউ হ্যাম্পশায়ারে জিতেছেন। এর ফলে তিনি ২২৩ কলেজ ভোট পেয়েছেন। বুধবার রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কয়েকটি রাজ্যে আংশিক ভোট গণনা বাকি ছিল।

বৈশ্বিক গবেষণা সংস্থা এডিসন রিসার্চ বলছে, ৭৮ বছর বয়সি ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হওয়ার জন্য প্রয়োজনের বেশি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়েছেন। হোয়াইট হাউজ পুনরুদ্ধার করেছেন তিনি, যা দেশটিতে চলমান মেরুকরণের রাজনীতিকে আরও গভীর করে তুলেছে। তার নেতৃত্বে দেশটির গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও পররাষ্ট্র সম্পর্ক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে পারে।

২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয় মেনে না নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টায় পরের বছরের ৬ জানুয়ারি মার্কিন ক্যাপিটল ভবনে তাণ্ডব চালান ট্রাম্পের কর্মী-সমর্থকরা। ওই সহিংসতার পর ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শেষ দেখেছিলেন অনেকে। কিন্তু সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে পেছনে ফেলেছেন নিজ দলের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের। এরপর মার্কিন অর্থনীতিতে জেঁকে বসা মুদ্রাস্ফীতি আর দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন দশায় ভোটারদের উদ্বেগকে পুঁজি করে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে নির্বাচনি প্রচার চালান তিনি। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির কথা জানিয়ে দেশ থেকে অবৈধ অভিবাসন অবসানের রূপকল্প তুলে ধরে ভোটারদের আস্থা অর্জন করেন।

নির্বাচনি প্রচারণায় ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ভোটে জিতলে তিনি মূল্যস্ফীতির অবসান ঘটাবেন এবং আমেরিকাকে ফের সাশ্রয়ী করে তুলবেন। এ লক্ষ্যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি ও শক্তি উৎপাদনকে আরও সম্প্রসারিত করবেন বলে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে, জ্বালানি খরচ যেন কম আসে, সেজন্য আর্কটিক মরুভূমির মতো এলাকাগুলোতে নতুন তেলকূপ খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন।

সিনেটে রিপাবলিকান ৫২, ডেমোক্র্যাট ৪১ : যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ৫১টি আসন দরকার। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টি এরই মধ্যে ৫২টি আসনে জয় নিশ্চিত করেছে। আর ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ৪১টি আসনে। একটি আসনে জয়ী হয়েছেন নির্দলীয় প্রার্থী। বাকি ছয়টি আসনের সিনেটর কে হচ্ছেন তা রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।

প্রতিনিধি পরিষদেও এগিয়ে রিপাবলিকানরা : যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ নিতে এগিয়ে রয়েছে নির্বাচিত ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টি। ৪৩৫ আসনের পরিষদে রিপাবলিকানরা এখন পর্যন্ত ১৯৮ আসনে এগিয়ে আছে। ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন ১৮০টি আসনে।

এদিকে নির্বাচনে বিভিন্ন স্থানে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনার কথা জানিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এসব ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

কবে দায়িত্বভার নেবেন ট্রাম্প : নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শপথ নেবেন। সেদিন থেকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। রীতি অনুযায়ী, ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। তবে তার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হবে এবং সেটি করা হবে ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি অনুসরণ করে। ১৭ জানুয়ারি ইলেকটোরাল কলেজের প্রতিনিধি, যাদের বলা হয় ইলেকটোর, তারা একসঙ্গে বসে তাদের ভোট দেবেন। সাধারণত যে অঙ্গরাজ্যে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী সেই প্রার্থীর পক্ষেই ওই রাজ্যের সব ইলেকটোরাল ভোট দেওয়া হয়। যদিও কখনো কখনো এর ব্যতিক্রমও দেখা গেছে। সেরকম হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও নজির রয়েছে। এরপর ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে সেনেটে আনুষ্ঠানিকভাবে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট গণনা করা হবে। সেই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ও নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস। ভোটগণনা শেষে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্পের নাম ঘোষণা করবেন।

Share this post

scroll to top