ডেস্ক রিপোর্ট: কৃষকের ঘরে জন্ম নিয়ে ভাগ্যগুণে মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান রাজিদুল ইসলাম। মাত্র আড়াই বছরের ক্ষমতায় বদলে ফেলেছেন নিজের ভাগ্য। গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল বাড়ি। রয়েছে নিজের চলাচলের জন্য দামি ব্রান্ডের গাড়ি। করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন। জমি দখলের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। রাজিদুল দৌলতপুর উপজেলার ধামশ্বর ইউনিয়নের হাতকোড়া গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে। তার বাবা একজন কৃষক। বর্তমানে মাছের ব্যবসা করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২১ সালে মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান রাজিদুল ইসলাম। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। শূন্য থেকে রাতারাতি উন্নতি হয় ভাগ্যের। ভাগ্যের পরিবর্তন করতে ছায়া নেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের। এরপর শুরু হয় টেন্ডারবাজি, পদবাণিজ্য, সরকারি চাকরি বাণিজ্য ও জমি দখল। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সহজ-সরল লোকজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। অথচ এদের কারও কোনো দপ্তরে চাকরি হয়নি। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার ধান্দার দোকান খুলে বসেছিলেন ছাত্রলীগের এ নেতা। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ক্যাডার হিসাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রভাব বিস্তার করে নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছে রাজিদুল। এলাকায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অন্যের জমি দখল করে আলিশান ভবন নির্মাণ করেছেন তিনি। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ ভাগিয়ে নিয়ে জেলায় আধিপত্য বিস্তার করে অবৈধ সম্পদের মালিক বনে গেছেন। রয়েছে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীও। আর এ ক্যাডার বাহিনী দিয়ে অন্যের জমি দখল আর চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন রাজিদুল।
তিল্লী গ্রামের হারুন পীর বলেন, ‘রাজিদুল আমার ১৫ শতাংশ পৈতৃক সম্পত্তি দখল করে নিয়েছেন। ওই জায়গার মধ্যে বড় বড় গাছ ছিল, তাও কেটে নিয়ে গেছেন।’ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজে আউট সোর্সিংয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সাটুরিয়া উপজেলার কায়সার নামে একজনের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা নেন রাজিদুল। তাকে চাকরি না দিয়ে নানাভাবে হয়রানি করেন তাকে।
ভুক্তভোগী কায়সারের খালাতো ভাই রাসেল বলেন, ‘আমার হাত দিয়ে রাজিদুলকে ৩ লাখ টাকা দিই। কিন্তু চাকরি না দিয়ে টাকা গায়েব করার জন্য পাঁয়তার করে যাচ্ছেন। দিনের পর দিন সময় নিয়ে চাকরি দেননি। গত দুই বছর ধরে টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না তিনি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দৌলতপুর উপজেলার ধামশ্বর গ্রামের এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘চাকরির জন্য ছয় লাখ টাকা দিয়ে রাজিদুলের পেছনে পেছনে ঘুরছি। টাকাও ফেরত পাচ্ছি না। চাকরি তো হলোই না।
স্থানীয়রা জানান, মাত্র দুতিন বছরে রাজিদুলের ভাগ্য বদল হয়ে গেছে। কোটি টাকা খরচ করে আলিশান বাড়ি বানিয়েছেন। নিজের জন্য ২০ লাখ টাকা দিয়ে প্রাইভেটকার কিনেছেন।
ছাত্রলীগের এ নেতার বাড়িতে গেলে তার মা জানান, রাজিদুলের কোনো খোঁজখবর নেই। বাড়িতেও ফোন করে না। তার মা আরও বলেন, আমাদের বাড়িতে কোনো ভাঙচুর বা হামলা হয়নি। রাজিদুলের বাবা বর্তমানে পুকুরের মাছ বিক্রি করে বলে জানান তিনি। গত ৫ আগস্টের পর থেকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিদুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে রাজিদুল ইসলামের ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে সব বন্ধ পাওয়া যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমম্বয়ক ওমর ফারুক বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের এ নেতার সব অবৈধ সম্পদ জব্দ করে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। ছাত্রলীগের নামে এরা নিরীহ ছাত্রদের ওপর অমানবিক নিষ্ঠুরভাবে হামলা করেছে। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাজিদুল ইসলামকে গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানান।