ডেস্ক রিপোর্ট: সন্ত্রাসী হারুন বিশ্বাসের আতঙ্কে ভুগছে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার আন্ধারমানিক ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থেকে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হারুন এখনো ত্রাস হয়ে আছে বিএনপি পরিচয়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একসময়ের সর্বহারা নেতা হারুন স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আত্মসমর্পণের পর যোগ দিয়েছিল বিএনপিতে। তবে ১৪/১৫ বছরে দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি তাকে। বরং আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে নানা অপকর্ম চালিয়েছে আন্ধারমানিক ইউনিয়নে। ৫ আগস্টের পর আবার বিএনপি হয়ে অব্যাহত রেখেছে আতঙ্ক সৃষ্টি। এরই মধ্যে হামলা, ভাঙচুর, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির অভিযোগে হারুনসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কাজীরহাট থানায়। তারপরও বন্ধ হয়নি তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। পুলিশ বলছে, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাকে। তবে এলাকায় ঠিকই প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন হারুন। সন্ত্রাসী নানা কর্মকাণ্ডের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। উপজেলা বিএনপি বলছে, দলের পরিচয়ে কেউ চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস করলে তার দায় নেবে না বিএনপি।
আন্ধারমানিকে চলমান এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড হিসাবে আলোচিত হচ্ছে হারুন বিশ্বাসের নাম। একসময়ের কুখ্যাত সর্বহারা নেতা হারুনের নেপথ্য সহযোগিতার কারণেই মৃদুলসহ অন্যরা সেখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর সাহস পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত সংঘটিত সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কুশীলবও এই হারুন, এমনটাই বলছেন সবাই। হারুনের ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত একাধিক এলাকাবাসী নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘১৫ অক্টোবর দলীয় পদ-পদবি স্থগিত করা হয় স্থানীয় যুবদল নেতা মৃদুল তালুকদারের। এরপর ১৬ অক্টোবর রাতে হারুন ও মৃদুলের নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় স্থানীয় বিএনপি কর্মী তুর্য রাঢ়ি, মহি রাঢ়িসহ ৮/১০ জনকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সেখানে যাওয়ার পর তাদের সামনেও চলে বেপরোয়া হামলা-মারধর। এ ঘটনায় মহিউদ্দিন রাঢ়ি বাদী হয়ে কাজীরহাট থানায় মৃদুল, হারুনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
৫ আগস্টের আগে বিএনপি পরিচয় লুকিয়ে আওয়ামী লীগ সেজে এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতেন হারুন। তার চাচাতো ভাই প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা শহিদ বিশ্বাসের পরিচয়ে তখন চলতেন তিনি। শহিদ বিশ্বাস ছিলেন তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মাহফুজুর রহমান লিটনের ডান হাত। একসময়ের কুখ্যাত সর্বহারা নেতা হওয়ায় এমনিতেই হারুনকে ভয় পায় এলাকার মানুষ। তার ওপর এখন বিএনপি পরিচয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করায় ভয়ে মুখ খুলতে চান না কেউ। বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, কাদিরাবাদ এলাকার হাসু খা, নুরু হাওলাদার এবং পত্তনীভাঙ্গা গ্রামের কাশেম খাঁ হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনাগুলোয় সরাসরি যুক্ত থাকার অভিযোগ ছিল হারুন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। এছাড়া কাজীরহাটের হাছেন খলিফা এবং খাসেরহাটের হারুন সরদার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। হত্যার এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার কার্যক্রম চলছে আদালতে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর ৮নং ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সভাপতি আনোয়ারের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং ইমান উদ্দিনের বাড়িতে হামলার অভিযোগ রয়েছে হারুন-মৃদুলসহ তাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে। বর্তমানে সালিশির নামে বাণিজ্যের পাশাপাশি বালু উত্তোলনসহ সব ধরনের ব্যবসায় চাঁদা আদায় করছেন তারা। স্থানীয় ড্রেজার ব্যবসায়ী পূর্বভঙ্গা ওয়ার্ডের যুবদল নেতা আবু বক্কর সিদ্দিকের কাছেও প্রতিফুট বালুর বিপরীতে ২ টাকা করে চাঁদা দাবি করেন তারা। দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে তুলে মিয়ারহাটে নিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। এসব বিষয়ে দলীয় নেতাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়েরের পরই মৃদুলের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয় বিএনপি। তবে হারুন বিশ্বাসের কোনো পদ-পদবি না থাকায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আন্ধারমানিক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, ‘মৃদুলের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে দল। হারুন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যা বলা হচ্ছে, তার সবটা সত্যি নয়। সে আসলে চিৎকার-চ্যাঁচামেচি করে কথা বলে এবং একটু বদমেজাজি। তাই হয়তো অনেকে তাকে ভয় পায়। যে মাপের সন্ত্রাসী হারুনকে বলা হচ্ছে, তা সে নয়।’
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গিয়াসউদ্দিন দীপেন বলেন, ‘কারও ব্যক্তিগত অপকর্মের দায় নেবে না দল। এটি দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি প্রশাসনকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
অভিযোগ অস্বীকার করে হারুন বিশ্বাস বলেন, ‘স্থানীয় রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। কোনোরকম অপকর্মের সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই।’
কাজীরহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজাহারুল ইসলাম বলেন, মৃদুল তালুকদার, হারুন বিশ্বাসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। আমাদের কাছে থাকা তথ্য এবং স্থানীয় এলাকাবাসীর যেসব বক্তব্য, তাতে মৃদুল ও হারুন বিশ্বাস সন্ত্রাসী হিসাবে পরিচিত। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।