ডেস্ক রিপোর্ট: ব্যাংক খাতের বিষফোড়া খেলাপি ঋণ। যার পরিধি এখন অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে দুই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এই ফোড়া নিরাময়ে গত সাড়ে ১৫ বছরে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। উলটো নানা সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ফলে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণ।
এছাড়া ১০-১৫টি নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পর্ষদও ভেঙে দেওয়া হতে পারে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর দেওয়া হবে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আলোচ্য সময়ে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। লুটপাটে রাঘববোয়ালদের ঋণ এখনো খেলাপির খাতায় আসেনি।
তাদের মতে, চলতি বছরের মধ্যে প্রকৃত খেলাপি ঋণের চিত্র বেরিয়ে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রকৃত খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়াতে পারে সাত থেকে আট লাখ কোটি টাকায়। যদিও ২০০৯ সালে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার কোটি টাকা।
মূলত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে ব্যাংক খাতের এই করুণ পরিণতি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা।
এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫৫ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা বা ৩৫ শতাংশ। ২০২৩ সালের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
তিন মাস আগে মার্চ প্রান্তিকে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ছিল এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের মোট বিতরণ করা ঋণের ১১.১১ শতাংশ। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার ৯৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের জন্য দেওয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্তের একটি হলো, ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার কমানো। ২০২৪ সালের মধ্যে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে বলেছে সংস্থাটি। কিন্তু খেলাপি না কমে উলটো বেড়ে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ উঠেছে। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি হার প্রায় ৩৩ শতাংশে উঠেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের জুন-২৪ প্রান্তিকের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জুন মাস শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ দুই হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩২ দশমকি ৭৭ শতাংশ খেলাপি। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ৯৯ হাজার ৯২১ কোটি টাকা; ঋণের ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আর বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ঋণের ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ বা ৫ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩২২৯ বা মোট ঋণের ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বহু আগে থেকে বলে আসছি বাংলাদেশ ব্যাংক যে তথ্য প্রকাশ করছে এটা খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত দুই লাখ ১১ হাজার কোটি টাকার সঙ্গে আরও অন্তত তিন লাখ কোটি টাকা যোগ করতে হবে। তাহলে প্রকৃত খেলাপি পাঁচ লাখ কোটি টাকার বেশি হবে।