ডেস্ক রিপোর্ট: অবিশ্বাস্য ব্যাটিং ধসে রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশের সকালটা শুরু হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মতো। বিনা উইকেটে ১০ রান নিয়ে খেলতে নেমে ২৬ তুলতেই নেই ছয় উইকেট। রোববার দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয়দিনে পাকিস্তানের দুই পেসার খুররাম শাহজাদ ও মির হামজার বোলিং তোপে বিধ্বস্ত তখন বাংলাদেশ। সেই ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে সপ্তম উইকেট জুটিতে লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ একটু একটু করে ইনিংস মেরামত করলেন। সেই জুটি ছুঁয়ে ফেলল ইতিহাসের সর্বোচ্চ চূড়া। যে উচ্চতা টেস্ট ক্রিকেটে ছুঁতে পারেনি আর কোনো জুটি। সপ্তম উইকেটে হলো ১৬৫ রানের জুটি। ৫০ রানের নিচে ছয় উইকেট হারানোর পর টেস্ট ইতিহাসের প্রথম দেড়শ রানের জুটি এটিই। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে মিরাজ ৭৮ রানে আউট হলেও ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো তিন অঙ্ক স্পর্শ করে লিটন থামেন ১৩৮ রানে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ অলআউট হয় ২৬২ রানে।
পাকিস্তান ১২ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে স্বস্তিতে নেই। ব্যাটিংয়ে ৫১ বলে ১৩* রানের লড়াকু ইনিংসের পর ১০ বল করেই পাকিস্তানের দুটি উইকেট তুলে নিয়েছেন হাসান মাহমুদ। নয় রানে দুই উইকেট হারানো পাকিস্তান আট উইকেট হাতে রেখে এগিয়ে রয়েছে ২১ রানে। দুঃস্বপ্নের সকালের পরও লিটন, মিরাজ ও হাসানের বীরত্বে তাই তৃতীয়দিনটা বাংলাদেশেরই।
লিটনের এই সেঞ্চুরির অন্যরকম মাহাত্ম্য আছে। মিরাজ ৭৮ রানে আউট হলেও লিটন চালিয়ে যান দারুণভাবে। তাকে কেউ সঙ্গ দিতে পারেন কি না সেই সংশয় তো ছিলই। তাসকিন আহমেদ মাত্র পাঁচ বল খেলেই আউট হয়ে ফেরেন। নবম উইকেটে হাসান মাহমুদ দাঁড়িয়ে যাওয়ায় সেঞ্চুরি পেতে সমস্যা হয়নি লিটনের। এই জুটি থেকে আসে ৬৯ রান। বৃষ্টির কারণে প্রথমদিনের খেলা ভেসে যাওয়ায় দ্বিতীয়দিন থেকে আগেভাগে খেলা শুরু হচ্ছে। কাল সকালে দাপট দেখাতে থাকেন স্বাগতিক দলের পেসাররা। বিশেষ করে খুররাম শাহজাদের বলে উইকেট ছুড়ে আসা শুরু করে টাইগাররা। প্রথম ছয় ব্যাটারের পাঁচজনই আউট হয়েছেন প্রায় একইভাবে। লেগ-মিডল, লেগ-স্টাম্প, এমনকি লেগের বাইরের বলেও আউট হয়েছেন-ভারসাম্য ধরে রাখতে না পেরে। ভালো হলেও ২৬ রানে ছয় উইকেট তুলে নেওয়ার মতো বিধ্বংসী ছিল না পাকিস্তানের বোলিং। ২৬ রানে টপ ছয় উইকেট হারানোর পর ফলো-অনের শঙ্কা চেপে ধরেছিল বাংলাদেশকে। কিন্তু উইকেটে যে কোনো জুজু ছিল না সেটা বুঝিয়ে দেন লিটন ও মিরাজ। থিতু হওয়ার পর তারা পৌঁছে যান রেকর্ডের চূড়ায়। আগের রেকর্ডটি ছিল আব্দুল রাজ্জাক ও কামরান আকমলের। ২০০৬ সালে ভারতের বিপক্ষে করাচিতে ৩৯ রানে ছয় উইকেট হারানোর পর ১১৫ রান যোগ করেছিলেন পাকিস্তানের দুই ক্রিকেটার। সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশের রেকর্ড জুটি ১৯৬ রানের। আগের টেস্টেই শ্রীলংকার বিপক্ষে মুশফিকুর রহিম ও মিরাজ করেছিলেন ১৯৬। এবার ৩০ রানের নিচে ছয় উইকেট হারানোর পর আট নম্বরে নেমে টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ ইনিংসটি এখন মিরাজের। ৭৮ রানের ইনিংসে তিনি পেছনে ফেলেছেন মঈন খানকে (৭০)।
মিরাজ আফসোস নিয়ে ফিরলেও দেশকে আনন্দে ভাসিয়েছেন লিটন। তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন হাসান। এই ডান-হাতি পেসার ৫১ বল খেলে ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন। এরপর শেষবেলায় ১০ বল করেই দুটি উইকেট নেন তিনি। তার আগে আবরার আহমেদের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি আলতো ছোঁয়ায় কাট করে দেন লিটন। পয়েন্ট দিয়ে বল চলে যায় সীমানায়। লিটন পেয়ে যান সেঞ্চুরি। ১১ চার ও এক ছক্কায় ১৭১ বলে মাইলফলক স্পর্শ করেন এই উইকেটকিপার-ব্যাটার। ৪৩ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এটি তার চতুর্থ সেঞ্চুরি। ২৭ মাসের বেশি সময় পর পেলেন তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া। ২০২২ সালের মে মাসে সবশেষ শ্রীলংকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। এর মাঝে পাঁচটি ফিফটি করলেও তিন অঙ্কের দেখা পাননি। এরপর যখন আউট হন তার নামের পাশে ১৩৮ রান। তার আউটের পর বাংলাদেশ কোনো রান তুলতে পারেনি। পাকিস্তানের খুররাম ৯০ রানে নেন ছয় উইকেট।