ডেস্ক রিপোর্ট: সাড়ে চার বছর যশোরের পুলিশ সুপার ছিলেন আনিসুর রহমান। বর্তমানে তিনি নৌ পুলিশের ডিআইজি। যশোরে দায়িত্বকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে আয় করেছেন কোটি কোটি টাকা। বিএনপি-জামায়াত এমনকি আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। খুন, গুম ও ক্রসফায়ারে হত্যা ও পঙ্গু করে দেওয়া, দখল, টেন্টারবাজি, নিয়োগ-বাণিজ্যে ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। তার অপকর্মের প্রতিবাদ করলেই চরম নির্যাতনের শিকার হতে হতো। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর এসপি আনিসুর রহমানের নির্যাতন, হত্যা, গুমের শিকার ভুক্তভোগীরা মুখ খুলছেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত যশোরের আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে চারটি।
সাবেক এসপি আনিসের নির্যাতনের শিকার মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয়কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের দায়িত্বকালে যশোর জেলায় চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। তার নির্দেশে খুন, গুম, ক্রসফায়ার, পঙ্গু করা ও শারীরিকভাবে নির্যাতন চালিয়েছে পুলিশ। এসপি আনিসের নির্দেশে রাতের আঁধারে শহরের গাড়িখানা রোডের ৪০টি পরিবারকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ ও লুটপাট করে পুলিশ। এ অত্যাচারের প্রতিবাদ করায় ২০১৭ সালে আমাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে আমার ছেলেকেও মাদকের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করে। পরে আমরা আদালতের মাধ্যমে মিথ্যা মামলায় মুক্তি পেয়েছি। তার সাড়ে ৪ বছরের অপকর্মের ফিরিস্তি বলে শেষ করা যাবে না।’
২০১৪ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট পর্যন্ত যশোরের পুলিশ সুপার পদে কর্মরত ছিলেন আনিসুর রহমান। তার সময়ে পুলিশের নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যেও ছিলেন শীর্ষে। সীমান্তবর্তী জেলা যশোরের স্বর্ণ, মাদক ও ভারতীয় পণ্য চোরাচালানে আদায় করতেন কোটি টাকার হিস্যা। করতেন টেন্ডার নিয়ন্ত্রণও।
সর্বশেষ মঙ্গলবার যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যশোরের সাবেক পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি শিকদার আক্কাস আলীসহ সাত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিএনপি কর্মী মোহাম্মদ মাসুম গুমের অভিযোগে মামলা হয়েছে।
মনিরামপুর উপজেলার জয়পুরের গ্রামের পল্লি চিকিৎসক বজলুর রহমান ও আনিসুর রহমানকে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার অভিযোগে ১৯ আগস্ট যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যশোরের সাবেক পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানসহ ৪৮ জনকে বিবাদী করে আদালতে দুটি মামলার আবেদন করা হয়।
এ ছাড়া মণিরামপুর উপজেলার জয়পুরের আবু সাঈদকে ‘ক্রসফায়ারে হত্যার’ অভিযোগে সাবেক এসপি আনিসুর রহমানসহ আটজনের নামে ১৯ আগস্ট মামলা হয়েছে যশোর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।