খুলনার দর্পণ ডেস্ক : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চার মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন শেখ হাসিনা। এর মধ্যে ২০০৯ সালের পর থেকেই টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছেন তিনি। কোনো সন্দেহ নেই ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ফের পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতায় আসবেন শেখ হাসিনা।
সরকারের দাবি নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ; অংশ নিচ্ছে ২৯টি দল। তবুও সবচেয়ে বড় বিরোধী দল ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম একমাত্র দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ভোট বর্জন করছে। চাইলেও দলটি কমই নির্বাচনে অংশ নিতে পারতো। কারণ গত ছয় সপ্তাহে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নভেম্বরের শেষ থেকে হেফাজতে থাকা পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত যারা গ্রেপ্তার হননি তাদের অনেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন।
প্রায় ১৫ বছরের ক্ষমতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির জীবনযাত্রার মানের সবচেয়ে বড় উন্নতিতে অবদান রেখেছেন। চীন ও ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী স্বার্থকেও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করেছেন তিনি।
তিনি তার পিতার ব্যক্তিত্বকে ঘিরে একটি ‘কাল্ট দাঁড় করেছেন’। তার পিতা ১৯৭৫ সালে একটি অভ্যুত্থানে খুন হয়েছিলেন। তার ছবি এখন ঢাকার সর্বত্র শোভা পাচ্ছে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ২০১৮ সাল থেকে গৃহবন্দী আছেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বাংলাদেশের পূর্ববর্তী দুটি নির্বাচন ব্যাপকভাবে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে গেছে। আসছে নির্বাচন বিএনপিকে দুর্বল করে দিতে পারে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের ছাপ তৈরি করতে আওয়ামী লীগ তার দলের সদস্যদের, তাদের পরিচিতদের ও বিরোধী দল থেকে দলত্যাগকারীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে উৎসাহিত করেছে।
২৮ অক্টোবর এক সমাবেশের পর দলের সমর্থক ও পুলিশের মধ্যে রাজপথে সহিংসতার কারণে বিএনপির সদস্যদের গণগ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে এতে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে দুই পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
সরকারের দাবি, এই সহিংসতা শুরু করেছে বিএনপি। কিন্তু দলটি বলছে উল্টো। আইনজীবী ও বিএনপি নেতা মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, তারা আমাদের হাজার লোককে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি। এই অবৈধ নির্বাচনে অংশ নেয়ার অর্থ নির্বাচনকে বৈধতা দেয়া।
শেখ হাসিনা দেশের অনেক জায়গায় জনপ্রিয়। সাম্প্রতিক মার্কিনভিত্তিক ‘ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের’ এক সমীক্ষা তাকে ৭০ শতাংশ রেটিং দিয়েছে। তবে শহরগুলোতে বিশেষ করে নড়বড়ে অর্থনীতি সরকারের প্রতি অসন্তোষ বাড়িয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জানুয়ারিতে আইএমএফ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশ। বৈদেশিক রিজার্ভ কম, ব্যাংকিং ব্যবস্থা চাপের মধ্যে পড়ে জনগণের সমস্যা আর জটিলভাবে বেড়েছে।
তারপরও প্রবৃদ্ধি মোটামুটি শক্তিশালী, গত আর্থিক বছরে মাত্র ৬ শতাংশের নিচে। ১৩ ডিসেম্বর আইএমএফ তার বেল-আউট প্রোগ্রামের প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছে। শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকার চেষ্টাও তাই দৃঢ় হচ্ছে।