এ সরকার কোনো বানের জলে ভেসে আসেনি: জ্বালানি উপদেষ্টা

image-844234-1724880007.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোর বোর্ডে ছাত্র প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ জ্বালানির কোনো কোম্পানিতে একান্ত অপরিহার্য না হলে সচিবরা আর চেয়ারম্যান হতে পারবেন না। পুনর্গঠনে অচিরেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া এই খাতে আগের যেসব চুক্তি হয়েছে, সেসব চুক্তি যাচাই-বাছাই করতে একটি স্বাধীন কমিটি গঠন করা হবে।

জ্বালানি বিভাগের আওতাধীন সকল কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। বুধবার বিকালে পেট্রোবাংলার অডিটোরিয়ামে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি সচিব এবং পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সরকারি কর্মকর্তাদের তেল দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের বেরিয়ে আসার আহবান জানিয়ে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, এখন মানুষ রিয়েল পরিবর্তন চায়। দুর্নীতি শুরু হয় মাথা থেকে। দুর্নীতিবাজ কখনো দক্ষ হতে পারে না। এখন যেখানেই হাত দিচ্ছি, একটা করে অনিয়ম পাচ্ছি। এখন সবাই দুর্নীতি করে। বিগত দিনে মন্ত্রীরা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন, সচিবরা সেই সুযোগ নিয়েছে।

এজন্য এখন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন, সেটা আমরা করব উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেশি বেশি পাওয়ার প্ল্যান্ট আর বেশি দামে জ্বালানি কেনা নয়, সাধারণ মানুষের সেবা কতটা নিশ্চিত হলো, তার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করা হবে। সুলভমূল্যে গ্যাস সরবরাহ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের মতো গ্রাহকসেবা দেখে বিবেচনা করা হবে কতটা সফল বা উন্নতি হচ্ছে এই খাতে। চেনা মুখ দেখে আর আমরা প্রকল্প নেব না। এক্ষেত্রে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা থাকবে বলেও জানান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আমরা সবাই সম্পদের হিসাব দেব। আমাদের সংস্থা প্রধানরাও সম্পদের হিসাব দেবেন। তিনি বলেন, আমাদের টাকা দিয়ে কোনো কাজ হাসিল করা যাবে না। কিন্তু কেউ যদি এরপরও মনে করেন, আমাদের টাকা দেবেন তাহলে আসতে পারেন, আমরা টাকা নিয়ে রিসিট দিয়ে দেব। দেশি টাকা হলে দেশি টাকার রিসিট দেব, আর ডলার হলে ডলারের রিসিট পাবেন। তিনি বলেন, আমি কর্মজীবনের শুরুতে শুল্ক বিভাগে কাজ করেছি। এরপর ইডকলে কাজ করেছি। বিদ্যুৎ সচিব হিসাবেও কাজ করেছি। আমাকে টাকা দিয়ে কেনা যাবে না। এটা মনে রাখতে হবে, এই সরকার কোন বানের জলে ভেসে আসা সরকার না। এই সরকারকে দুর্বল ভাবার কোনো কারণ নেই।

বিদ্যুৎ এবং গ্যাস আমদানির দিকে ইঙ্গিত করে ফাওজুল কবির বলেন, আমরা যা কিছুই কিনি বেশি দামে কিনি। ভারত আমাদের চেয়ে কম দামে গ্যাস-বিদ্যুৎ কেনে। আবার কেনার সময় অনেক ক্ষেত্রে ডিসকাউন্ট পেয়ে থাকেন। কিন্তু আমরা সেই ডিসকাউন্ট পাই না কেন, বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

আগের চুক্তিগুলোর বিষয়ে সভায় উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশেষ আইনে অনেক চুক্তি হয়েছে। এগুলোতে অনিয়ম হয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করতে আমরা শিগগির স্বাধীন একটি কমিটি গঠন করে দেব। আমাদের সময় দিতে হবে।

জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের ফর্মুলায় অনেক হিডেন কস্ট (অপ্রদর্শিত ব্যয়) নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন ফর্মুলায় জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়, সেটি সম্পর্কে জ্বালানি সচিব ভালো বলতে পারবেন। তবে হিডেন কস্ট আছে কিনা, সেটি খতিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, তথ্য অধিকার আইনে কেউ চাইলে আমরা ফর্মুলা সরবরাহ করব।

ভোলার গ্যাস সরবরাহের দায়িত্ব নির্দিষ্ট একটি কোম্পানিকে দেওয়া এবং কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করা উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এটা পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ভালো বলতে পারবেন। এ সময় পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জানান, বিশেষ আইনে ইন্ট্রাকোর সঙ্গে ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, এটি খতিয়ে দেখা হবে।

এলএনজি আমদানি বিষয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ভাসমান এলএনজি নিয়ে অনেক সমস্যা হচ্ছে। আপনারা সামিটের এলএনজি নিয়ে এখন কী হচ্ছে তা জানেন। আমি সামিটকে বলেছি, কী লাগবে বা কী করতে হবে সেটা আমার বিষয় না। আমার বিষয় আমি কবে গ্যাস পাব। তখন তারা একটা সময় আমাদের বলেছে। এ সময় তিনি বলেন, আমরা স্থলভাগে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের চিন্তা করছি।

দেশের সব নাগরিক সমহারে বিদ্যুৎ জ্বালানি পাবেন উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, যারা ঢাকায় বসবাস করেন তারা মানুষ, আর অন্য এলাকার মানুষ না, এটা হতে পারে না। গ্যাস-বিদ্যুৎ যদি রেশনিং করতে চান, তাহলে আগে আমার বাড়ি থেকে করেন। তিনি বলেন, আমি খুলনা যাব সেখানে দেখব, সাধারণ মানুষ কেমন গ্যাস ও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন, সেখানে আমি নিজেই দেখব। দেখে সন্তোষজনক হলেই আমি মনে করব, ভালো কাজ হচ্ছে। তিনি বলেন, খুলনাতে আমরা একটি ৮৮০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছি, কিন্তু সেখানে আমরা গ্যাস দিতে পারছি না। এটা কোনো ধরনের পরিকল্পনা হলো। গ্যাসের সংস্থান না করেই বিদ্যুৎকেন্দ্র কেন নির্মাণ করা হলো।

তিনি বলেন, আমরা শুরুতে এসেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ আইন ২০১০ বাতিল করেছি। এখন থেকে কাজ পেতে হলে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পেতে হবে।  আপনার ইচ্ছা হলে আপনি আপনার টাকা দিয়ে বেশি দামে রুই মাছ কিনতে পারেন। কিন্তু রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এমন হতে পারে না। মানুষ বিদ–্যতের নাম নিয়ে বিরক্ত। এমনকি আমি নিজেই বিরক্ত। তিনি বলেন, ২০১০ সালের আইনের ফলে বিদ্যুতের দাম বেড়ে গেছে। গণশুনানি না করেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর নীতি নিয়েছিল সাবেক সরকার। আমরা সেটি বাতিল করেছি। তবে সাবেক সরকারের সবকিছুই খারাপ বলে আমরা মনে করি না। আমরা তাদের সমালোচনা না করে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।

Share this post

scroll to top