দেশ চালাবে অন্তর্বর্তী সরকার: জাতির উদ্দেশে সেনাপ্রধান

image-834500-1722894916.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট: সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, দেশে একটা ক্রান্তিকাল চলছে। সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ করেছিলাম। আমরা সুন্দর আলোচনা করেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীন দেশের সব কার্যক্রম চলবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান আরও বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে উনার সঙ্গে কথা বলব। তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করা হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কত সদস্যের হতে পারে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো খুব আর্লি স্টেজ। আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করা হবে। আজকেই (সোমবার) রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। রাতের মধ্যেই সমাধানে যাওয়ার চেষ্টা করব। দু-একদিন আমাদের সময় দেওয়া লাগতে পারে।

বৈঠকে কারা উপস্থিত ছিলেন-এমন প্রশ্নের জবাবে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, জামায়াতের আমির, বিএনপির শীর্ষ নেতা, জাতীয় পার্টির নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ছিলেন। আওয়ামী লীগের কেউ ছিল না। সময় কম ছিল। যাদের পেয়েছি, তাদের বলেছি। হেফাজতে ইসলামের মামুনুল হক ও জোনায়েদ সাকিও ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুলও ছিলেন। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বার্তাও দিয়েছেন, এখন ছাত্রদের কাজ শান্ত হওয়া ও আমাদের সাহায্য করা।

ভাঙচুর, হত্যা, সংঘর্ষ ও মারামারি থেকে জনগণকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, আপনারা যদি কথামতো চলেন, একসঙ্গে কাজ করি। নিঃসন্দেহে সুন্দর পরিণতির দিকে অগ্রসর হতে পারব। মারামারি ও সংঘাত করে আর কিছু পাব না। তাই দয়া করে ধ্বংসযজ্ঞ, অরাজকতা ও সংঘর্ষ থেকে বিরত হন। সবাই মিলে সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হব। রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হবে জানিয়ে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, তাদের সঙ্গে সুন্দর আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে কাজ পরিচালনা করব। ধৈর্য ধরেন, সময় দিন। আমরা সবাই মিলে সব সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হব।

সব হত্যা ও অন্যায়ের বিচার হবে উল্লেখ করে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, আপনারা সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখেন। আমরা সব দায়-দায়িত্ব নিচ্ছি। আপনাদের কথা দিচ্ছি, আশাহত হবেন না। যত দাবি আছে, সেগুলো আমরা পূরণ করব। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে নিয়ে আসব। আমাদের সহযোগিতা করেন। প্রতিটি হত্যার বিচার হবে।

সংঘাতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, অর্থসম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। লোকজন মারা যাচ্ছে। সংঘাতের পথে যাবেন না। শান্তি-শৃঙ্খলার পথে ফিরে আসেন। সেনাবাহিনী শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ চালিয়ে যাবে উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, সবার দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে সাহায্য করা। পরিস্থিতি শান্ত হলে কারফিউ বা জরুরি অবস্থার প্রয়োজন নেই। আমি আদেশ দিয়েছি, কোনো গোলাগুলি হবে না। সেনাবাহিনী, পুলিশ কোনো গুলি চালাবে না। আশা করছি, এই বক্তব্যের পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সেনাপ্রধান আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা সবাইকে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।

সেনাপ্রধানের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের বৈঠক : বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস; জাতীয় পার্টির জিএম কাদের, মুজিবুল হক চুন্নু, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ; হেফাজতে ইসলামের মাওলানা মামুনুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আমির মাওলানা সৈয়দ ফয়জুল করিম, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, হামিদুর রহমান আজাদ প্রমুখ নেতা দেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সোমবার সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে বৈঠকে অংশ নেন। আলোচনায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’ গঠনের প্রক্রিয়া ও রূপরেখা প্রণয়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

আলোচনা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনী প্রধান দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, সব হত্যাকাণ্ড ও অন্যায়ের বিচার করা হবে, আপনারা সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা রাখুন। সহিংসতার পথ ছেড়ে তিনি সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান এবং ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি শিগগিরই ছাত্র-শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে জানান। তিনি বলেন, পরিস্থিতি অচিরেই স্বাভাবিক হয়ে আসবে। সেনাবাহিনী প্রধান ছাত্রছাত্রীসহ দলমত নির্বিশেষে দেশের সব শ্রেণি পেশার মানুষের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।

Share this post

scroll to top