১৭ দিনেও আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত প্রতিবেদন

image-833933-1722715162.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট: কোটা সংস্কার আন্দোলনে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় গঠিত দুটি তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ঘটনার ১৭ দিনেও আলোর মুখ দেখেনি। পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে দুই পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

আবু সাঈদের লাশের ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা কর্তব্যরত চিকিৎসক ছুটিতে থাকায় তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। এতে মৃত্যুর এতদিন পরেও আবু সাঈদের নিহত হওয়ার প্রকৃত কারণ নিয়ে চলছে নানা লুকোচুরি। এছাড়া পুলিশের দায়ের করা মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে আবু সাঈদের মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

যদিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হয়েছেন। কিন্তু পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, আবু সাঈদ নিহত হওয়ার সময় পুলিশ প্রাণঘাতী কোনো ফায়ার আর্মস ব্যবহার করেনি। সে কারণে তার মৃত্যু নিয়ে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ছাড়া কোনো মন্তব্য করা সমীচীন নয়। তাই পুলিশও ময়নাতদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে।

ঘটনার দিন ১৬ জুলাই কোটা আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এ সময় তারা আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এ সময় নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।

ময়নাতদন্ত করেন রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক রাজিবুল ইসলাম। তিনি বর্তমান ছুটিতে আছেন। গত বৃহস্পতিবার তার দপ্তরে গেলে অফিস সহকারী জানান, আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন স্যার নিজের তত্ত্বাবধানে রেখেছেন। এটি নিয়ে তাই তিনি কোনো তথ্য জানাতে অস্বীকৃতি জানান।

আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান বলেন, সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাঈদের সহপাঠী, সঙ্গে থাকা আন্দোলনকারী, প্রত্যক্ষদর্শীসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। কিন্তু ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসক ছুটিতে থাকায় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না। তাই প্রতিবেদন জমা দিতে আরও সময় লাগবে।

পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রধান রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সায়েফুজ্জামান ফারুকী বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় নিখুঁতভাবে তদন্ত করতে সময় লাগছে। গত সোমবার সাত কর্মদিবস শেষ হয়েছে। তবে তদন্ত শেষ না হওয়ায় আরও সাত কর্মদিবস সময় বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে।

আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় প্রথম মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই বিভূতিভূষণ রায়। তবে এজাহারে গুলিতে সাঈদ মারা গেছেন এমন কোনো নির্দিষ্ট তথ্য নেই। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইটপাটকেলের আঘাতে কিংবা অন্য কোনো কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। আসামি হিসাবে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। এ নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ দাবি করেছেন, আবু সাঈদের হাত, বুক, পিঠ, মুখসহ শরীরের শতাধিক স্থানে বুলেটের আঘাতের চিহ্ন ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক সাবিনা আক্তার বলেন, সাঈদকে টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান  বলেন, প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয়। বিবরণীতে সাঈদের মৃত্যুর বিষয়টি আছে, কিন্তু এটা চূড়ান্ত কিছু নয়।

তিনি আরও বলেন, পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে কর্তব্যে অবহেলা, অপেশাদার আচরণ ও শৃঙ্খলাপরিপন্থি কাজের জন্য রংপুর পুলিশ লাইনসের এসআই আমির হোসেন ও তাজহাট থানার কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়কে গত শুক্রবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার আগে বিষয়টি প্রাথমিকভাবে জানার পর এসআই আমির হোসেনকে ১৭ জুলাই ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়কে ২৮ জুলাই পুলিশ লাইনসে ক্লোজ করা হয়।

Share this post

scroll to top