দিশেহারা কয়েক হাজার পাসপোর্ট প্রত্যাশী

image-831370-1722210244.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট: কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে হঠাৎ নারায়ণগঞ্জ জেলা অফিস পুড়িয়ে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কয়েক হাজার পাসপোর্ট প্রত্যাশী। এদের মধ্যে বিদেশ গমনেচ্ছুদের ভোগান্তি সীমাহীন। বিশেষ করে কর্মসংস্থান বা জরুরি চিকিৎসা সেবা নিতে যারা বিদেশ যেতে চান তাদের অনেকেই দীর্ঘ অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন গুনছেন। এছাড়া পাসপোর্টের মেয়াদ না থাকায় বিদেশে স্বজনের কাছে যেতে পারছেন না অনেকে।

তবে দ্রুতই জনভোগান্তি লাঘব করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে পাসপোর্ট অধিদপ্তর (ডিআইপি-ডিপার্টমেন্ট অব ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট)। শিগগিরই পুড়ে যাওয়া পাসপোর্ট পুনরায় প্রিন্ট করে সংশ্লিষ্টদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের নতুন করে আর কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হবে না। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ অফিস বন্ধ থাকায় পার্শ্ববর্তী তিন জেলা থেকে পাসপোর্টসংক্রান্ত সব সেবা দেওয়ার ঘোষণা হয়েছে। এমনকি জরুরি প্রয়োজনে ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত প্রধান বিভাগীয় কার্যালয় থেকেও সেবা নেওয়া যাবে বলে জানিয়েছে ডিআইপি।

এদিকে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ৫ সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) শিহাব উদ্দিন খান। অপর সদস্যরা হলেন, অধিদপ্তরের সিস্টেম অ্যানালিস্ট মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ভূঁঞা, ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের সহকারী পরিচালক মেজর ইমরাউল কায়েস ইমরুল, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক গাজী মাহমুদুল হাসান ও সহকারী সিস্টেম অ্যানালিস্ট মোস্তাফিজুর রহমান। ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কমিটির সদস্যরা ২৪ জুলাই সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় ভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এছাড়া অফিস ভবনের আশপাশের কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বক্তব্য নেয় তদন্ত কমিটি। পরে ধ্বংসপ্রাপ্ত অফিসের ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম, কম্পিউটার ও আসবাবপত্র মিলিয়ে অন্তত ৮ কোটি টাকার ক্ষতি নিরূপণ করা হয়। তবে চার তলা ভবনের কাঠামোগত ক্ষতি হিসাব করলে ক্ষয়ক্ষতির অঙ্ক ১০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান শিহাব উদ্দিন খান রোববার তার কার্যালয়ে বলেন, নারায়ণগঞ্জ অফিসের আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। একটি আলপিনও সেখান থেকে উদ্ধার করা যায়নি। লুটপাট এবং ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহতা দেখলে যে কারও গা শিউরে উঠবে। তিনি বলেন, অগ্নিসংযোগের আগে ভবনের নিচ তলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত নির্বিচারে লুটপাট করা হয়। এ সময় বিভিন্ন কম্পিউটার সরঞ্জাম, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি এমনকি জেনারেটর থেকেও মূল্যবান সামগ্রীগুলো খুলে নেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে ভবনের ছাদের একটি অংশ দেবে গেছে। এ থেকে আমরা ধারণা করছি, অগ্নিসংযোগে গান পাউডার বা অতি উচ্চ দাহ্য কোনো পদার্থ ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে। তবে এ বিষয়ে সিআইডির ক্রাইমসিন বিশেষজ্ঞরা নমুনা সংগ্রহ করেছেন। পুলিশের অনুসন্ধানে এ বিষয়ে হয়তো বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে আসবে।

জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির অপর সদস্য এবং অধিদপ্তরের সিস্টেম অ্যানালিস্ট মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ভূঁঞা বলেন, আগুন লাগানোর আগে ভবনের সিসি ক্যামেরাগুলো ভেঙে দেওয়া হয়। এ কারণে দুর্বৃত্তদের কোনো ছবি, ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া লুটপাটের সময় তারা সংরক্ষিত ডিভিআরও খুলে নিয়ে যায়। এমনকি অগ্নিসংযোগের পর ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এতে আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এছাড়া রেকর্ডরুমে সংরক্ষিত কয়েক হাজার গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৮ ও ১৯ জুলাই দুদফা অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর মধ্যে ১৮ জুলাই বিকালে একবার অফিস সময় শেষে আকস্মিক ভাঙচুর চালানো হয়। পরদিন ১৯ জুলাই রাত ৮টার দিকে ফের অফিসে ঢুকে আগুন দেয় এক দল দুর্বৃত্ত। এতে অফিসের অন্য সরঞ্জামের সঙ্গে বিতরণের জন্য প্রস্তুতকৃত প্রায় সাড়ে ৬ হাজার পাসপোর্ট পুড়ে যায়। এর মধ্যে ৫ হাজার ই-পাসপোর্ট এবং প্রায় দেড় হাজার এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) বুকলেট ছিল। এছাড়া ভবনের নিচ তলা থেকে শুরু করে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় চতুর্থ তলায় থাকা বায়ো এনরোলমেন্ট যন্ত্রপাতি, প্রশাসন শাখা, অফিস সরঞ্জাম এবং চতুর্থ তলার রেকর্ডরুম এবং অতিথিশালার সবকিছুই ভস্মীভূত হয়।

ডিআইপি কর্মকর্তারা বলছেন, পুড়ে যাওয়া বুকলেটগুলো পুনরায় প্রিন্টিংয়ের পর বিতরণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এজন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনসহ আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষ করতে কিছুটা সময় লাগছে। তবে এ ক্ষেত্রে কাউকে নতুন করে সরকারি ফি জমা দিতে হবে না। তবে যাদের আবেদন নারায়ণগঞ্জ অফিসের পোর্টালে জমা হলেও কেন্দ্রীয় সার্ভারে সংযুক্ত হয়নি সেগুলো নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে আবেদনের বিপরীতে ফের নতুন করে ফি জমা দিতে হবে কিনা তা জানতে আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জ অফিস বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জ, নরসিংদী ও মুন্সীগঞ্জ অফিস থেকে পাসপোর্টসংক্রান্ত সব সেবা নিতে হবে। এ জন্য নরায়ণগঞ্জের ৭টি থানার অন্তর্গত আবেদনকারীদের পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জ, নরসিংদী ও মুন্সীগঞ্জে আবেদন করতে হবে। এর মধ্যে ফতুল্লা ও নরায়ণগঞ্জ সদরের বাসিন্দরা কেরানীগঞ্জে আবেদন করবেন। এছাড়া সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারের বাসিন্দারা নরসিংদী এবং বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জের অধিবাসীরা মুন্সীগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমা দিতে পারবেন। তবে যাদের পাসপোর্ট তৈরি হয়েছিল কিন্তু বিতরণ করা হয়নি তারা আগারগাঁও বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস থেকে তাদের পাসপোর্ট গ্রহণ করবেন। ভবন মেরামত করে নারায়ণগঞ্জ অফিস আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে অন্তত ৪ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

Share this post

scroll to top