উদ্বোধনের চার মাসেও চালু হয়নি খুলনার গণহত্যা জাদুঘর

untitled-2-1711215121.jpg

নিজস্ব প্রতিবেদক:  প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের জুনে। পরে ১৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন খুলনায় অবস্থিত দেশের একমাত্র গণহত্যা জাদুঘরের নতুন ভবন। এর চার মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ভবনটি বুঝে পায়নি জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।

জাদুঘর ঘুরে দেখা গেছে, কাগজে-কলমে প্রকল্প শেষ হলেও নতুন ভবনের অনেক কাজ এখনও বাকি। চতুর্থ থেকে ষষ্ঠতলা গ্যালারির কাজ শেষ না হওয়ায় গণহত্যার দুর্লভ সংগ্রহগুলো বাক্সবন্দি করে রাখা হয়েছে। পুরোপুরি চালু না হওয়ায় দর্শনার্থীদের প্রবেশও আপাতত বন্ধ। শুধু লাইব্রেরি কক্ষে কোনো রকমভাবে চলছে দাপ্তরিক কার্যক্রম।

১৯৭১ সালের ইতিহাসের সবচেয়ে নারকীয় গণহত্যার তথ্য নতুন প্রজন্মসহ বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে ২০১৪ সালে খুলনায় গড়ে তোলা হয় ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’। অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন এর প্রধান উদ্যোক্তা। গত ১০ বছর ধরে ইতিহাসের ভয়াবহতম গণহত্যা-নির্যাতনের নিদর্শন সংরক্ষণ, বধ্যভূমি ও গণকবর-সংক্রান্ত তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা, গণকবর ও বধ্যভূমি চিহ্নিত করা এবং গবেষণা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। শুধু বাংলাদেশেই নয়, এশিয়ায় এ ধরনের জাদুঘর এটাই প্রথম।

শুরুতে ময়লাপোতা এলাকার শেরেবাংলা রোডের একটি ভাড়া বাড়িতে আর্কাইভ ও জাদুঘরের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৫ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নগরীর ২৬ সাউথ সেন্ট্রাল রোডে জমিসহ একটি বাড়ি উপহার দেন। ২০২০ সালে সেখানে ছয়তলা নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়নে ভবনটি নির্মিত হয়েছে। এটি তদারকি করছে খুলনার গণপূর্ত বিভাগ। কাজ চলাকালে সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার আরেকটি ভাড়া বাড়িতে জাদুঘরের নিদর্শন প্রদর্শন কাজ চলেছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ভাড়া বাড়ি থেকে নিজস্ব ভবনে এসেছে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।

নতুন ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, মূল ভবন ও রঙের কাজ শেষ। কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ের অনেক কাজ বাকি রয়েছে। বিশেষ করে নিচতলা মিলনায়তন, দ্বিতীয় তলার অফিস কক্ষ এবং চতুর্থ থেকে ষষ্ঠতলার গ্যালারির শেষ ধাপের কাজ চলছে। প্রবেশপথে টেরাকোটার মাটির ড্রেসিং, বাগানসহ অন্যান্য কাজও চলছে ধীরগতিতে। গ্যালারির কাজ শেষ না হওয়ায় গণহত্যার নিদর্শনগুলো আপাতত যত্নের সঙ্গে বাক্সবন্দি করে রাখা হয়েছে।

আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক ড. চৌধুরী শহীদ কাদের জানান, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সোনাডাঙ্গা ভাড়া বাড়ি ছেড়ে নতুন জাদুঘর ভবনে উঠেছেন তারা। কিছু কাজ বাকি থাকায় স্বল্প পরিসরে জাদুঘরের কার্যক্রম চলছে। গ্যালারি বুঝে না পাওয়ায় নিদর্শনগুলো প্রদর্শন করা যাচ্ছে না। চলতি মাসের মধ্যেই ভবন বুঝে পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।

গণপূর্ত বিভাগ-১ নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার বিশ্বাস বলেন, প্রায় ৩২ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণ হয়েছে। ভবনের সব কাজ শেষ। এখন ফিনিশিং ও পলিসের কাজ চলছে। এই মাসেই ভবনটি হস্তান্তর করা হবে।
তবে ভবন ঘুরে দেখে গেছে, ফিনিশিং কাজের গতিও ধীরে চলছে। এভাবে চলছে, আগামী মাসেও ভবন বুঝে পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।
জাদুঘরের ডেপুটি কিউরেটর মো. রোকনুজ্জামান বাবুল জানান, জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা, শহীদদের চিঠিসহ ১৯২ ধরনের নিদর্শন রয়েছে। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ সময়কার সাড়ে তিন শতাধিক ছবি। আর্কাইভে সংরক্ষিত রয়েছে প্রায় ১০ হাজারের বেশি ছবি ও ২ হাজারের মতো ভিডিও ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আর্কাইভে অসংখ্য দুষ্প্রাপ্য নথি রয়েছে।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির খুলনা জেলা সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যার বিষয়টি দেশে উপেক্ষিত ছিল। ২০১৫ সালে জাদুঘর ও আর্কাইভ চালুর পর থেকে এটি নিয়ে কাজ শুরু হয়। গণহত্যার ইতিহাস তুলে ধরা এবং নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক ধারণা দেওয়ার জন্য দ্রুত জাদুঘরটি চালু করা প্রয়োজন।

Share this post

scroll to top