খুলনার দর্পণ ডেস্ক : ঠিক এক বছর আগের কথা। মাউন্ট মঙ্গানুইতে এক ইতিহাস লিখেছিল বাংলাদেশ। নিউ জিল্যান্ডকে তাদের মাটিতেই তাদেরকে হারিয়েছিল। সাদা পোশাকে বাংলাদেশ এতোটা দাপট দেখাতে পারবে, ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে ম্যাচ জেতাতে পারবে তা কেউ ভাবতেও পারেনি। বিশেষ করে তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসানদের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ছাড়া টেস্টের সবকটি দিনে ভালো করার ঘটনা ছিল বিস্ময়কর। কিন্তু মুমিনুল হকের নেতৃত্ব, মুশফিকুর রহিমের দায়িত্ববোধ এবং ইবাদত-তাসকিন-শরিফুলের দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচ নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ।
লম্বা সময় পর দুই দল আবার মুখোমুখি। এবারও সাকিব, তামিম নেই। নেই সেই ম্যাচের জয়ের নায়ক ইবাদত। দ্রুতগতির আরেক খেলোয়াড় তাসকিন নেই কাঁধের চোটে। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ছুটি নিয়েছেন লিটন দাস। তাদের অনুপস্থিতিতি নিশ্চিতভাবেই শূন্যতা তৈরি করছে। তবে তাদের ছাড়াও বাংলাদেশ দল এখন যেভাবে দাঁড়িয়েছে তা ভবিষ্যতের দল হিসেবে দেখছেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। কারও জন্য দল থেমে থাকবে না বলে জানালেন কোচ।
তামিম ইকবাল ক্রিকেট থেকে এখন অনেক দূরে। ফিটনেসের যা অবস্থা তাতে টেস্ট খেলার অনুপযোগী। সাকিবের আঙুলে চিড় থাকায় এই সিরিজ খেলতে পারছেন না। অস্ত্রোপচার করানোর পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় আছেন ইবাদত হোসেন। তাদের ছাড়া এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় হাথুরুসিংহের, ‘আমাদের তাসকিন, ইবাদতও নেই। এতোজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে না পাওয়া যেকোনো দলের জন্যই চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য। কারণ, তারা সবাই তিন সংস্করণের ক্রিকেটই খেলে। কেউ ১৫ বছর ধরে খেলছে, আবার কেউ খেলছে ১০ বছর ধরে। এজন্য বলছিলাম একটা দিক থেকে আমরা সামনে তাকাতে পারি। তরুণরা সেটা করতে পারে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার এটাই সঠিক সময়। কারণ, কয়েকজন ক্রিকেটার লম্বা সময় ধরে খেলছে। তারা সারাজীবন খেলবে না। এটা অবশ্য অনেকগুলো কারণে ঘটেছে। আমার মনে হয় এটা রোমাঞ্চকর। নিজেদের মেলে ধরার জন্য তরুণদের জন্য ভালো সুযোগও।’
নাজমুল হোসেন শান্তকে এই দলের অধিনায়ক করা হয়েছে। মাহমুদুল হাসান জয়, জাকির হাসান, সাদমান ইসলামরা জাতীয় ক্রিকেট লিগে ভালো খেলেছেন। মুশফিক, শান্ত বিশ্বকাপ থেকে ফেরার পর এক রাউন্ডের ম্যাচ খেলেছেন। এছাড়া খালেদ, শাহাদাত, হাসান মুরাদরা, নাঈম হাসানরা রয়েছেন ছন্দে। মুমিনুল হক অপেক্ষায় ভালো কিছু করার। জাতীয় লিগে খেলোয়াড়রা খেলায় প্রস্তুতিতে সন্তুষ্টির আভাস মিলল হাথুরুসিংহের কথায়, ‘যারা বিশ্বকাপ খেলেছে তাদের জন্য আমরা এনসিএলকে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি। প্রস্তুতির জন্য তারা এনসিএলের শেষ রাউন্ড খেলেছে। বেশিরভাগ ব্যাটারই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে। বাকিদের মাঝে বেশিরভাগই এনসিএল খেলছিল। দেখুন, এটা দেখতে প্রায় নতুন বাংলাদেশের মতো। জোর করে এমন কিছু করা হয়নি। কিছু ইনজুরির কারণে এমনটা হয়েছে। আমরা যতটা পারি ততটা প্রস্তুত। সত্যি বলতে টেস্ট সিরিজের জন্য আমি মুখিয়ে আছি।’
একাধিক অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের সঙ্গে তরুণ ক্রিকেটারদেরও স্কোয়াডে রেখেছেন হাথুরুসিংহে। সবাইকেই যে খেলার জন্য ডাকা হয়েছে তেমনটা নয়। দলের আবহ বোঝার জন্য তাদের সঙ্গে রেখেছেন টিম ম্যানেজমেন্ট, ‘না তারা টেস্টের জন্য বিবেচিত হবে না। তারা এখানে এসেছে কারণ আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি তারা আমাদের পরবর্তী বেস্ট বোলার। তারা এনসিএলে ভালো করেছে। আমরা তাদেরকে জাতীয় দলের সেটআপে চেয়েছি। কারণ, তাদের জানা দরকার জাতীয় দল কিভাবে চলে। তারা আজকে আমাদের সঙ্গে টিম মিটিংয়ে বসবে এবং জানবে কিভাবে টিম মিটিং হয়। তারা আমাদের জন্য বোলিং করবে (নেটে)। কারণ, এনসিএল এবং বিসিএলের মাঝে অনেক গ্যাপ। আমরা এই সুযোগটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি।’
আসন্ন এই সিরিজে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন স্পিনান হাসান মুরাদ। তবে তার কাছে বাড়তি কোনো চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই হাথুরুর। জানিয়েছেন মুরাদের কাছ থেকে তার স্বাভাবিক খেলাটাই প্রত্যাশা, ‘হাসান মুরাদের কাছে আমার বার্তা থাকবে, এক্স ফ্যাক্টর হতে হবে না। গত ২ এনসিএলে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছ। ওখানে যা করেছ, এখানেই তাই করো।’ ২০২০ যুব বিশ্বকাপজয়ী হাসান মুরাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে ২০২১ সালে। এখন পর্যন্ত ২৫ ম্যাচ খেলে শিকার করেছেন ১২১ উইকেট। হাসান মুরাদ ছাড়াও দলে স্পিনারের অভাব নেই। মেহেদি হাসান মিরাজ আর তাইজুল ইসলাম আছেন দলের অংশ হয়ে। সিলেটের এই টেস্টে স্পিনারদের ভূমিকা বেশি দেখছেন হাথুরুসিংহে, ‘তাইজুল মিরাজ অনেক অভিজ্ঞ। তাইজুলের সম্ভবত ২০০টা টেস্ট উইকেট আছে। অবশ্যই সে লিড করবে, সাথে মিরাজ আছে। তরুণ মুরাদ, নাঈম হাসান আছে। আমি মনে করি, এই কন্ডিশনে স্পিনাররা বড় ভূমিকা পালন করবে।’
এটা নতুন বাংলাদেশ, সামনে তাকানোর আহ্বান হাথুরুসিংহের
