খুলনার দর্পণ ডেস্ক : রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন দেশের রাজনৈতিক দলসমূহকে সহিংসতা ও নৈরাজ্যের পথ পরিহার করে সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণ ও গণতন্ত্রের কল্যাণে অহিংস পন্থায় গঠনমূলক কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ ক্ষেত্রে তিনি সরকারকেও সংযত আচরণ করারও উপদেশ দিয়ে বলেন, উন্নয়নের এ চলমান গতিধারা অব্যাহত রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দানকালে রাষ্ট্রপ্রধান একথা বলেন।
তিনি বলেন, উন্নয়ন স্থায়ী ও টেকসই করতে হলে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মজবুত, তৃণমূল পর্যায়ে গণতন্ত্রের চর্চা ছড়িয়ে দিতে হবে।
“নির্বাচন বর্জনকারী দলসমূহ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক দলসমূহ সহিংসতা ও নৈরাজ্যের পথ পরিহার করে জনগণ ও গণতন্ত্রের কল্যাণে অহিংস পন্থায় গঠনমূলক কর্মসূচি পালন করবে।” কেউ যাতে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে মানুষের জানমাল ও জীবিকার ক্ষতিসাধন করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। দেশের আর্থিক খাতের সংস্কার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে জোর তাগিদ দেন তিনি।
সকল গুজব ও অপপ্রচারের বিষয়ে নজরদারি বৃদ্ধি করে জনগণকে সম্পৃক্ত রেখে যথাযথভাবে মোকাবেলা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র করে কেউ যাতে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেদিকে সকলের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষার সফল বাস্তবায়নে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করারও আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের নিষ্কণ্টক পথচলার জন্য দেশের রাজনৈতিক দলগুলো উদার ও গঠনমূলক মনোভাব নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়াবে এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
“রাজনৈতিক নীতি-আদর্শ, মত-পথের ভিন্নতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সংসদকে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার ক্ষেত্রে কোনো মতদ্বৈততা জনগণ প্রত্যাশা করে না,” রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন।
ইংরেজি নববর্ষ এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের সূচনালগ্নে স্পিকার, নবগঠিত সরকারের চতুর্থসহ পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সংসদ-সদস্যগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রপতি।
তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান সমুন্নত এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্যে নির্বাচন কমিশনসহ জনপ্রশাসন, সশস্ত্রবাহিনী, আইনশৃঙ্খলাকারী বিভিন্ন বাহিনী এবং গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
দেশের গণতন্ত্রের জন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত যুগান্তকারী ঘটনা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা ও সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্যই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সকল পদক্ষেপ সার্থক হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, একটি কুচক্রীমহল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়ন ও প্রগতির পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল। তবে গত দেড় দশকে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বে ‘রোল মডেলে’ পরিণত হয়েছে।
“আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর মেধা ও প্রযুক্তিনির্ভর উন্নত “স্মার্ট বাংলাদেশ” বিনির্মাণে স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ-স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ ব্যবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে,” রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে মোঃ সাহাবুদ্দিনের দেয়া এটাই প্রথম ভাষণ। দ্বিতীয় মেয়াদে ১২তম জাতীয় সংসদ স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রথম অধিবেশন বেলা তিনটায় শুরু হয়।
এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতির সহধর্মিণী ড. রেবেকা সুলতানা সংসদের গ্যালারিতে বসে ভাষণ শোনেন।