খুলনার দর্পণ ডেস্ক : খুলনায় কয়েকদিনের কনকনে বাতাস আর তীব্র শীতে জনজীবন অনেকটাই থমকে গেছে। শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘরে ঘরে ঠা-াজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিউলাইটিস, অ্যাজমাসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
জানা যায়, ৭ মাসের আয়শা চলতি মাসের প্রথম দিকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। সেরে উঠতে না উঠতেই আবারও ঠা-ায় আক্রান্ত হয় আয়শা। অসুস্থ শিশুটিকে খুলনা শিশু হাসপাতালে নেয়া হলে তারা এনআইসিইউ নিতে বলে। কিন্তু ৭ মাসের শিশুর জন্য এমন ব্যবস্থা খুলনায় অপ্রতুল। শিশুটির পরিবারের চোখে মুখে অসহায়ত্বের ছাপ।
চলতি মাসের শুরু থেকেই হিম হিম ঠা-ায় কাহিল মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে বাড়ছে বৃদ্ধ ও শিশু রোগ। গত কয়েকদিন খুলনায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং চেম্বারে চাপ বেড়েছে রোগীর। চিকিৎসকেরা বলছেন, অতিরিক্ত ঠা-ায় ঠা-াজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বৃদ্ধ এবং শিশুরা। এরমধ্যে বেশির ভাগ রোগীই নিউমোনিয়া এবং কোল্ড ডায়রিয়ার। এছাড়া শিশুরা ভুগছে শ^াসকষ্টজনিত রোগে। এ অবস্থায় অভিভাবদেরকে বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ চিকিৎসকদের।
শীতের এমন তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ঠা-াজনিত বা শ^াসকষ্টজনিত রোগ। এতে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে খুলনার হাসপাতালগুলো। প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে শতাধিক রোগী। বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিকে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে উদ্বেগজনকভাবে। খুলনা শিশু হাসপতাল এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও শিশুদের বেড সংকুলান না হওয়ায় মেঝেতেও চিকিৎসা নিচ্ছেন এইসব রোগীরা। খুলনার বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বার সূত্রে জানা যায়, শীতের সময় ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন রোগী চিকিৎসা নেয়। কিন্তু এই শৈত্য-প্রবাহ শুরু হলে এই সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলো শয্যাসংকটের কারণে অনেককে মেঝে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন। এছাড়া হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে অনেকে বাসাবাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গতকাল সকাল থেকেই খুলনা শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে শিশু রোগী এবং অভিভাবকের পদচারণায় ওই ফ্লোরে তিলঠাঁই নেই। খুলনার একমাত্র শিশু হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ২৭০। তার সবগুলোতেই রয়েছে রোগী। এছাড়া খুলনা মেডিকেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা রয়েছে ৪০টি। এখানে ভর্তি রোগী রয়েছে দুই শতাধিক।
গতকাল সন্ধ্যায় কথা হয় আয়শার দাদা মোঃ সেলিমের সাথে। তিনি জানান, এখন আয়শার অবস্থা আশঙ্কাজনক। খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি রয়েছে। একটি বিভাগীয় শহরে ৭ মাসের বাচ্চার কোনো এনআইসিইউ নেই। এমন শহরে আমরা বাস করি। এখন আল্লারে ডাকতেছি। আল্লাহ যা করে।
খুলনা শিশু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডাঃ সৈয়দ ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, ঠা-া, কুয়াশা, বৃষ্টি। সবমিলে অনেক ঠা-া পড়ছে খুলনায়। ফলে শিশু রোগ বেড়েছে। বিশেষ করে নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া এবং শ^াসকষ্টজনিত রোগ। এসময় শিশুদের প্রতি বাড়তি খেয়াল রাখতে হয়। শিশুদের সর্দি কাশি হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জামাকাপড় পরিষ্কার রাখতে হবে। ডাস্ট থেকে দূরে রাখতে হবে। শিশুর খাবার বিষয়ে বিশেষ সতর্ক রাখতে হবে।
শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ এ কে মামুনুর রশীদ জানান, শীত বাড়ার কারণে শিশুদের ডায়রিয়া এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এসময় শিশুদের প্রতি বিশেষ কেয়ার রাখতে হয়। যাতে কোনো ধরনের ঠা-া না লাগে। শিশুর কোনো ধরনের সমস্যা মনে হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডাঃ মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, ঠা-াজনিত রোগ বেড়েছে। ফলে বৃদ্ধ এবং শিশুদের দিকে বাড়তি খেয়াল রাখা প্রয়োজন। এছাড়া বাসাবাড়িতে প্রাথমিক কিছু চিকিৎসাব্যবস্থা রাখাও প্রয়োজন। নেবুলাইজার, গরম পানির ভাপ নেয়ার ব্যবস্থাটা এই শীতে বিশেষ উপকারি।